মদের দোকান খুলতেই উপচে পড়ে ভিড়, তড়িঘড়ি বন্ধ হল বিক্রি, জেলাশাসকের বৈঠকের পরেই নতুন সিদ্ধান্ত
রাজ্য সরকারের এক নির্দেশের উপর ভিত্তি করে সোমবার খোলা হয় শহরের বিভিন্ন এলাকায় মদের দোকানগুলো। তবে দোকান খোলার আগে থেকেই উপচে পড়ে বিরাট সংখ্যক মানুষের ভিড়। এক সময় বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়।
আপাতত জেলা শাসকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে নতুন নির্দেশ না এলে দোকান খোলা হবে না, এমনটাই জানিয়েছেন আবগারি বিভাগের আধিকারিক অভিজিৎ দত্ত। তিনি জানান, জেলা শাসকের কাছে ব্যাপারটি তুলে ধরা হয়েছে এবং তিনি বিভাগীয় আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক আয়োজন করার পরই আগামীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া জেলার প্রত্যেক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীকে ইতিমধ্যে তাদের কর্মচারীর তালিকা বিভাগের কাছে তুলে ধরার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পঞ্চাশ শতাংশ কর্মচারী নিয়েই কাজ চালাতে হবে এটা রাজ্য সরকারের নির্দেশ।
উল্লেখ্য, আবগারি বিভাগের তরফে রবিবার সন্ধ্যেবেলা এক নির্দেশে জানানো হয়, সোমবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত মদের দোকান গুলো খোলা রাখা যাবে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যারা দোকানে কাজ করবে তাদের বাড়ি থেকে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং স্যানিটেশনের জন্য সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেউ নিয়মগুলো লংঘন করলে লাইসেন্স জব্দ করা হবে এবং মদ বিক্রি করতে দেওয়া হবে না
রাজ্যের আবগারি বিভাগের এডিশনাল কমিশনার এসকে মেদি রবিবার এক নির্দেশে জানিয়েছেন, রাজ্যের প্রত্যেক আই এম এফ এল মদ বিক্রেতা দোকান খোলা রাখতে পারবেন। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এগুলো। মদের দোকান এবং বটলিং প্লান্টে যেসব কর্মীরা কাজ করবেন তাদের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। তারা যদি কাশি বা অস্বাভাবিক জ্বরে ভোগেন তবে কাজ করতে দেওয়া হবে না। তাদের স্যানিটাইজেশনের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রত্যেক দোকান এবং বটলিং প্লান্ট সীমিত সংখ্যায় কর্মচারী নিয়োগ করতে পারবেন। তারা জেলা প্রশাসন এবং আবগারি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজটি করবেন। আবগারি বিভাগের আধিকারিক তাদের প্রয়োজনীয় পাস ইত্যাদি দেবেন। কর্মচারীদের খাবার-দাবার ইত্যাদিও যোগান দিতে হবে কেননা এখন লকডাউন চলছে এবং বাইরে খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। মদের বোতল প্রয়োজনে স্থানে পৌঁছানোর জন্য পাস জোগাড় করতে হবে। এক্সাইজ ইন্সপেক্টর এগুলো দিতে পারবেন। গ্রাহকদের প্রত্যেককে এক মিটারের দূরত্বে রাখতে হবে। কোন ধরনের জনসমাগম যাতে গড়ে না ওঠে এদিকে দোকান মালিকদের নজর রাখতে হবে
আবগারি মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য জানিয়েছেন, সারা দেশের লোক ডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে পুরোপুরিভাবে মদ বিক্রি বন্ধ করা হয়েছিল। তবে আমাদের সামনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে লুকিয়ে দেশী মদ বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যেটা জনগণের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাল চুরি শুরু হয়েছিল কেননা দেশি মদ চালকে ব্যবহার করে বানানো হয়। সঙ্গে অন্যান্য নেশাদ্রব্যের বিক্রি ও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও এসব সরকারিভাবে বন্ধ ছিল কিন্তু অনেকেই লুকিয়ে সেটা বিক্রি করেছেন। আমরা শুধুমাত্র রেভিনিউ নিয়ে ভাবছি না এই দুঃসময়ে এটা ভাবার কথাও নয়। অতীতে রাজ্যে দেশি মদ খেয়ে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা চাইনি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক ফলে সাধারণ জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সমাজের প্রত্যেক স্তরের ব্যক্তি কে সঙ্গে নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি এবং শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতীয় স্তরে প্রথম দফায় লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমরা সীমিত পর্যায়ে সূরা বিক্রির অনুমতি দেব।
তবে এনিয়ে ইতিমধ্যেই জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, একদিকে যখন গরিব মানুষের সবজি বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না সে সময়ে মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। মদ্যপানের ফলে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বৃদ্ধি পাবে। সঙ্গে নানান ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সব থেকে চিন্তার বিষয় হচ্ছে মদ বিক্রির ফলে রাজ্যে সোশ্যাল ডিসটেন্সিংয়ে ব্যাঘাত ঘটবে। এই কঠিন সময়ে মদ্যপান সমাজের নানান ধরনের অসামঞ্জস্য ডেকে আনবে যেটা একেবারেই কাম্য নয়। সোমবার সকালের বিভিন্ন মদের দোকানের ভিড়ের ফটো তুলে হাজার হাজার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছেন। বেশিরভাগের অভিযোগ, অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী বিক্রিতে বাধা দিয়ে মদ বিক্রি চালু করার কোনো কারণ ছিল না।
Comments are closed.