প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ১০ টাকার মুদ্রা নিতে বাধ্য হল 'মেট্রোবাজার'
দশ টাকার মুদ্রা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বীকৃত একটি বৈধ কারেন্সি যা সারা দেশে প্রত্যেক এলাকায় স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হয়ে থাকে। তবে, একমাত্র শিলচর তথা সংলগ্ন এলাকায় এই টাকাটি কেউ নিতে চাননা এবং যার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
গতকাল শিলচরের মেট্রোবাজার শপিং মলে এক ব্যক্তি কেনাকাটার পর ১০ টাকার কয়েন দিতে চাইলে মালিকপক্ষ সেটা নিতে অস্বীকার করেন। পাশাপাশি গ্রাহকটির সঙ্গে খানিকটা উচ্চবাচ্যও করেন। ইটখলার বাসিন্দা রানু দাস নামের গ্রাহক পাল্টা জবাব দেন এবং এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানান। তার অভিযোগের ভিত্তিতে জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার কিমনিয়েম চাংসাঙকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মেট্রোবাজার মল কর্তৃপক্ষ ১০ টাকার কয়েন গ্রহণ করতে রাজি হন এবং ভবিষ্যতেও গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েনটি গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা নাগাদ। ইটখলার স্বামীজি রোডের বাসিন্দা রানু দাস মেট্রো বাজারে কিছু কাপড় চোপড় কিনে বিল দিতে লাইনে দাঁড়ান। অন্যান্য টাকার সঙ্গে তিনি দু তিনটে ১০টাকার কয়েন দিতে যান, তবে কাউন্টারে থাকা কর্মচারীরা এটা নিতে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, দশ টাকার নোট বাজারে চলে না এবং আমরা এটা নিতে পারব না, আপনি পারলে অন্য টাকা দিন না হলে জিনিস রেখে চলে যান। এতে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে রানু দাস সরাসরি জেলাশাসক কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনার ব্যাপারে খবর দেন এবং আধিকারিকদের মলে আসতে অনুরোধ জানান। তিনি তার এলাকার কিছু ব্যক্তিদেরও এব্যাপারে জানান। তারা এসে মলের মালিকের কাছে জানতে চান তিনি কোন ভিত্তিতে ১০ টাকার কয়েনকে অবৈধ বলছেন। অনেকে একসঙ্গে প্রশ্ন করায় এবং মালিকপক্ষের তরফে লাগাতার টাকাটি না নেওয়ার জেদ করায় মল চত্বরে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানা থেকে পুলিশের একটি দল মেট্রোবাজার মল চত্বরে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও গ্রাহকরা নাছোড়বান্দা, তারা বলেন কেন ১০ টাকার কয়েন নেওয়া হবে না এটা না জেনে আমরা মল ছেড়ে যাবো না। তারা মেট্রবাজার মল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহারও দায়ের করেন।
পুলিশের তরফ এব্যাপারে জেলাশাসক কার্যালয়ে খবর দেওয়া হয় এবং জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার কিমনিয়েম চাংসাঙকে ঘটনাস্থলে পাঠান। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তার সঙ্গে থাকা ১০ টাকার কয়েনের ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নোটিশ দেখান। তিনি মলের মালিকপক্ষ এবং অন্যান্য কর্মচারীদের কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, ভারতবর্ষের কোনও জায়গায় কোনও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ১০ টাকার কয়েন নিতে অস্বীকার করতে পারেনা। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের স্বীকৃত এই টাকাটি নিতে না চাইলে লিখিতভাবে জানাতে হবে না হলে টাকাটি গ্রহণ করতে হবে। যদিও এখনো আইনগতভাবে ১০ টাকা না নিলে কোনও শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি, তবে স্থানীয় জেলা প্রশাসন নিজের অধিকারে সাধারণ মানুষকে শাস্তি দিতে পারে। সম্প্রতি কাছাড়ের জেলাশাসকের সঙ্গে আরবিআই গুয়াহাটি শাখার আধিকারিকদের একটি বৈঠক হয়েছে এবং তারা নিজেরাও এ ব্যাপারে চিন্তা ব্যক্ত করেছেন। এলাকার বৃহৎ ব্যাংকগুলোকে এভাবে প্রশ্ন করলে তারা জানান টাকাটি নেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা সবাই জানি এই কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়, অনেক সময় ব্যাংকে জায়গা কম বলে টাকাগুলো গ্রহন করা হয়না। যার ফলে ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকেই। আমরা আগামীতে এব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছি।
এদিকে মল কর্তৃপক্ষের তরফে সাফাই হিসাবে বলা হয়, শহরের প্রধান ব্যাংক গুলো ১০ টাকার কয়েন গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তারা বারবার একটাই কথা বলে, এখন তাদের কাছে ১০ টাকার কয়েন জমা রাখার মত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই এবং ভবিষ্যতে তারা টাকাটি নেবে। এভাবে চলতে চলতে আমাদের কাছে বিরাট পরিমাণের ১০ টাকার কয়েন জমা হয়ে আছে। এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১০ টাকার কয়েন গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবেনা। তবে এখন যখন জেলা প্রশাসন এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছেন, আমরা তাদের জানিয়ে দিতে চাই শিলচরের প্রথম বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা ১০ টাকার কয়েন গ্রহণ করবো। তবে পাশাপাশি জেলাশাসককে অনুরোধ রাখবো, তিনি যেন শহরের প্রধান ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেন তারা যাতে ১০ টাকার কয়েন আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করে। তারা যদি লাগাতার টাকা গ্রহণ করেন তাহলে শহরের কোনও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ১০ টাকার কয়েন নিতে অসুবিধা হবে না এবং সাধারণ মানুষও টাকাটি গ্রহণ করার সাহস পাবেন।
এই ব্যাপারে এক ব্যাংক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিয়ম মেনে জমা দিলে ব্যাংক সব ধরনের বৈধ মুদ্রা বা নোট গ্রহণ করতে বাধ্য। তবে, গ্রাহকদের পেমেন্টর সময় এগুলো দিলে গ্রাহকদেরও এটা গ্রহণ করতে হবে, তাহলেই ভারসাম্য বজায় থাকবে।
Comments are closed.