
"বিজেপির টিকিট পেতে হলে প্রার্থীদের আগে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে," স্পষ্ট বার্তা রাজ্য সভাপতির
ঠিক যেমন মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েক মাস আগে বিদ্যালয়ে একটি টেস্ট হয় এবং এতে পাশ করলেই মাধ্যমিকে বসার যোগ্যতা অর্জন করেন পড়ুয়ারা। আগামী বছর নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও প্রায় একইভাবে হতে চলেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিধায়ক হোন বা নতুন কোনও মুখ, আগে তৃণমূল স্তরে দলের কার্যকর্তাদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। দলের ভেতরের সমীক্ষার নিরিখেই দেওয়া হবে টিকিট, অবশ্যই এটা ঘোষণা করবে রাজ্য কমিটি, এমনটাই বললেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সভাপতি রঞ্জিত দাস।
৮ দিনের বরাক উপত্যকা সফরে বৃহস্পতিবার তিনি শিলচরে এসেছেন। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরাক উপত্যকার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে তিনি সভা করবেন, লক্ষ্য “আবকি বার একশো পার,” অর্থাৎ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের শতাধিক প্রার্থীকে জয়ী করা। কথায় কথায় তিনি জানিয়ে দেন, সোনাই মডেলকে সামনে রেখে রাজ্যে অন্তত আরও সাতটি আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের প্রার্থীত্ব দিতে চলেছে বিজেপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলচরে এসে পৌঁছান বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস। ৮ দিনের সফর সূচিতে প্রথম অনুষ্ঠান ছিল শিলচর বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের নিয়ে। বঙ্গভবনে এটি আয়োজন করা হয় এবং এতে বুথ ভিত্তিক সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয় দলের কতজন কার্যকর্তা এতে অংশ নিতে পারবেন। অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব স্বীকার করেন রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, “যখন একটা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হয়, সেখানে কিছুটা ছোটখাটো মনোমালিন্য হওয়া স্বাভাবিক। তবে এখন আর আমাদের এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না। আগামী তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে, এর আগে আমাদের সবদিক থেকে তৈরি হতে হবে যাতে লক্ষ্য ১০০-প্লাস কোনওভাবেই হাতছাড়া না হয়। দলের মূল শক্তি হচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা। তারা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে বিজেপির উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের খবর দেন। জনগণের স্বার্থে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, সেগুলো একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী দিল্লি থেকে বসে যেসব প্রকল্প ঘোষণা করেন তার বাস্তব সুফল যখন একজন মানুষ নিজের হাতে পান, তখন তাকে আর আলাদা করে বলতে হয়না ভোটটা বিজেপিকে দেবেন। এছাড়া তৃণমূলের কর্মীরা জনগণের আবেগ একদম কাছ থেকে দেখতে পান, ফলে এবার প্রার্থী বাছাই হবে তাদের রিপোর্ট কার্ডের উপরে ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে গতবারের বিজয়ী বিধায়ক এবং নতুন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে কোন ফারাক থাকবেনা। দলের ভেতর ফোর-টায়ার সার্ভের মাধ্যমে ঠিক করা হবে কে যোগ্য প্রার্থী। প্রার্থী বাছাইয়ের পর দলের প্রত্যেক সদস্য তার সমর্থনে কাজ করবেন। বিজেপির ভেতরের অনুশাসন এখন এতটাই শক্ত যে আমরা সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিই।”
বিজেপি হিন্দুত্বের তকমা কাটাতে এবার অন্য বছরের তুলনায় বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থী খুঁজছে, অন্তত রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে এমনটাই বোঝা গেছে। তিনি বলেন, “আমরা অন্যান্য নিরিখে ৯৬টি আসনে জয়ী হব এবং ১০০ স্পর্শ করতে সোনাই মডেল আমাদের সহযোগিতা করবে। রাজ্যের অন্তত সাতটি এমন আসন রয়েছে যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটদাতা বেশি এবং গত নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়নি, সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হবে। এবার সোনাই মডেল বলতে আমি কি বুঝাতে চাইছি সেটা আপনারা অন্তত বুঝে গেছেন।”
সম্প্রতি সোনাই কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানে শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় ঘোষণা করেছিলেন আমিনুল হক লস্কর আগামী বছর টিকিট পাচ্ছেন। এটা নিয়ে দলে কিছুটা দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। তবে এবার রাজ্য সভাপতি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কোর্টেই বল ছাড়লেন। তারা নিজেদের যোগ্যতা আগে প্রমাণ করবেন এরপর টিকিট পাবেন। রাজ্য সভাপতি আর একটি বার্তা দিলেন, দলের ভেতরের সিদ্ধান্ত দলের অনুশাসন মেনে নিজস্ব পদ্ধতিতে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এতে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা কম।
এদিন অনুষ্ঠানে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, সাংসদ রাজদীপ রায়, দলের জেলা সভাপতি কৌশিক রাই, রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ফনী শর্মা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বরিষ্ঠ বিজেপি কর্মী নিত্য ভূষণ দে সহ অন্যান্যরা অংশ নেন
দিলীপ কুমার পাল বলেন, “এবার কাছাড় জেলায় আমাদের দল ৭-০ গোলে জিতবে, শিলচরে আমরা অন্তত ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব।”
রাজদীপ রায় বলেন, “সদ্যসমাপ্ত হওয়া বিটিসি নির্বাচনে আমাদের দল ভালো আসন পেয়েছে। যেখানে আমাদের দল আগে জিততে পারেনি সেখানে সরকার গড়তে চলেছে। তার মানে মানুষ নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নমূলক কাজের সমর্থনে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন। কাছাড় জেলায় আমরা আগের থেকে অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে সবগুলো আসনে জয়ী হব।”
Comments are closed.