
Also read in
আদর্শ শিক্ষক অমিতাভ চৌধুরী মৃত্যুর পরও দেহদানের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে গেলেন
করিমগঞ্জের বিশিষ্ট নাগরিক তথা শিক্ষাবিদ অমিতাভ চৌধুরীর মরণোত্তর দেহদান আজ সম্পন্ন হলো শিলচর মেডিক্যাল কলেজে। দেহদানের মতো মহান কাজে ব্রতী হওয়া সচেতন নাগরিকের সংখ্যা বর্তমানে যদিও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু অমিতাভ চৌধুরী বহু বছর আগেই নিজের দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। বলাবাহুল্য, তখনকার সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিরলই ছিল।
আজ অমিতাভ চৌধুরী মারা যাওয়ার পর সবাই যখন স্বাভাবিক নিয়ম মেনে তাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত, এমনকি টুকিটাকি জিনিসও কিনে নেওয়া হয়েছে, তখন স্ত্রী দীপ্তি চৌধুরী তার মরণোত্তর দেহদানের কথা জানালেন এবং কার্ড বের করে দিলেন। এরপর তার ছাত্র এবং বেলাভূমি বৃদ্ধাশ্রমের পক্ষ থেকে তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। এ্যানাটমি বিভাগের ডাক্তার এস দত্ত এবং ডাক্তার রুবি শইকিয়ার তত্ত্বাবধানে দেহদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অমিতাভ চৌধুরীর মরদেহ এনাটমি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অমিতাভ চৌধুরী করিমগঞ্জের পাবলিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি কলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ইংরেজি খুব ভালো পড়াতেন।তার ছাত্র সংখ্যাও যেমন অনেক বেশি ছিল তেমনি অনেক সফল ছাত্র তার হাত দিয়ে বেরিয়েছে।একজন ঐতিহ্যশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে করিমগঞ্জের এক সুপরিচিত নাম অমিতাভ চৌধুরী শিক্ষকতা ছাড়াও আরো অনেককিছুর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। একজন ভালো নাট্যকার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। সুঅভিনয়ের জন্য অনেকের মনে এখনো বেঁচে আছেন তিনি। তাছাড়া খুব ভালো আবৃত্তি করতেন। খেলোয়াড় হিসেবেও তার অবদান অনেক।তিনি ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল খেলতেন নিয়মিত। ক্রিকেটে করিমগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিত্বও করেছেন তিনি। সমাজকর্মী হিসেবে তিনি অনেক কাজ করেছেন।আদর্শ শিক্ষক হিসেবে যেমন তার নাম ছিল,তেমনি মানুষ হিসেবেও খুব উঁচুদরের ছিলেন। অমায়িক ব্যবহার তথা তাঁর আদর্শের জন্য প্রচুর মানুষ তাকে ভালোবাসতেন।
অনেকদিন ধরেই অমিতাভ চৌধুরী বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বিশেষভাবে উনার কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছিল,সঙ্গে ছিল বার্ধক্যজনিত আরো কিছু রোগ। সেই রোগগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষপর্যন্ত আজ সকাল দশটায় ৮৭ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে নিঃসন্তান অমিতাভ চৌধুরী তার ৮৩ বছর বয়সী স্ত্রী দীপ্তি চৌধুরীকে রেখে গেছেন। দুজন গত আড়াই বছর ধরে করিমগঞ্জের বেলাভূমি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন। অনেক বছর আগে চৌধুরী ভিলা বলে অমিতাভ চৌধুরীর বিশাল বাড়ি ছিল করিমগঞ্জের ফায়ার ব্রিগেডের উল্টোদিকে। পরে সেই বাড়ি বিক্রি করে কিছুদিন ভাড়াবাড়িতে থাকার পর শেষ পর্যন্ত স্বামী স্ত্রী দুজনেই বৃদ্ধাশ্রমে চলে গিয়েছিলেন।
সেবা’র অধীনে সুকল্প ভট্টাচার্য্য মেমোরিয়াল ওল্ডেজ হোম বেলাভূমি’র সম্পাদিকা অপর্ণা দেব বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানালেন, বেলাভূমির পক্ষ থেকে প্রবীণ এই শিক্ষক যাতে ভাল থাকেন সেজন্য সম্পূর্ণ চেষ্টা করা হয়েছে। চিকিৎসারও কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। জীবনের শেষ দিনগুলো যাতে করে তার খুব ভালো কাটে, সেই চেষ্টার মাধ্যমেই আমরা স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। মানুষ হিসেবেও তিনি খুব ভালো ছিলেন, যাকে বলে আদর্শ শিক্ষক। তাই আদর্শবাদী শিক্ষক মৃত্যুর পরও দেহদানের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেলেন।
Comments are closed.