তারাপুর থানার সামনে দিনের আলোয় আবার ছিনতাই, আহত এক; "টাকা তোলার আগে জানালে সঙ্গে পুলিশ পাঠাব," বললেন এসপি
গত মাসে তারাপুর থানার সামনে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এক ব্যক্তির টাকা ছিনতাই হয়েছিল। এরপর দুই ব্যক্তিকে আটক করেছিল পুলিশ, কিন্তু একই এলাকায় শুক্রবার দুপুরে আবার টাকা ছিনতাই হলো। এবারও সেই কালো পালসার বাইকের চড়ে দুই যুবক, মুখে কাপড় বেঁধে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে। ঘটনায় একটা কথা পরিস্কার, অপরাধীরা এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। অবশ্যই তাদের মনে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে খুব একটা ভয় নেই, নাহলে দিনের আলোয় একের পর এক ঘটনা ঘটতো না।
শুক্রবার দুপুর সোয়া একটা নাগাদ তারাপুর থানার পাশের উকিল বাজার এলাকার বাসিন্দা শংকর পাল চৌধুরী নামের প্রাক্তন বীমা কর্মীর উপর হামলা চালিয়ে টাকা ছিনতাই করেছে দুষ্কৃতীরা। তিনি জানিয়েছেন, গ্র্যাচুইটির ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা তিনি বরোদা ব্যাংক থেকে তোলেন এবং চার লক্ষ টাকা তারাপুরের ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় তার অ্যাকাউন্টে জমা করেন। বাকি টাকা ব্যাগে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ করেই বাইকে দুই যুবক এসে তার ওপর চড়াও হয়। তার সঙ্গে থাকা আরেক ব্যক্তি প্রতিবাদ করলে তাকে মারতে শুরু করে, তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। ততক্ষণে টাকার ব্যাগ নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়েছে দুই দুষ্কৃতী। বাইকের নম্বর দেখতে গিয়ে তারা লক্ষ্য করেন, এএস-এইচ-আর লেখা রয়েছে এবং বাকি অংশে কাদা মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিৎকার শুনে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন, বেরিয়ে আসেন থানার পুলিশও। ততক্ষণে গা ঢাকা দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন শংকর পাল চৌধুরী।
পরিবার সূত্রে জানাগেছে স্ত্রীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে তার। একসময় স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন, গত বছর তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এরপর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন তিনি। এবার এই ঘটনায় আবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
খবর পেয়ে পুলিশসুপার বিএল মিনা তারাপুর থানায় উপস্থিত হন। এক মাসে দুবার থানার পাশেই কেন একই ঘটনা ঘটল, এটা নিয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা আরেকটু কঠোর করতে চলেছি, এবার থেকে আমাদের স্কোয়াডের সদস্যরা বাইক নিয়ে দিনের বেলা ঘোরাফেরা করবেন। এলাকায় যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে তার ফুটেজ সংগ্রহ করে বাইকটি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে জনগণকে আরেকটু সচেতন হতে হবে, কেউ টাকা তুলতে যাওয়ার সময় যদি পুলিশের সাহায্য চান আমরা দিতে রাজি আছি। বিশেষ করে যখন বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংকে জমা করতে কোন ব্যবসায়ী যান, আমাদের কাছে আবেদন জানালে সুরক্ষা দেওয়া হয়। যেকোনো ব্যক্তি বড় অঙ্কের টাকা তোলার আগে আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সঙ্গে আধিকারিকদের পাঠাতে রাজি আছি। যেসব এলাকায় এ ধরনের ঘটনা সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হবে।”
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং অসম পুলিশের ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত বরাক উপত্যকায় পাঁচটি থানার নতুন হাইটেক ভবন উদ্বোধন করেছেন। তবে উপত্যকায় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেই চলেছে, অপরাধীদের মনে পুলিশের ভয় নেই। বৃহস্পতিবার রাতে উধারবন্দে প্রায় পনেরো কুড়ি জনের একদল মিলে এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতি করেছে। পুলিশের তরফে কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবে কাউকে আটক করা হয়নি। কয়েকদিন আগে ইটখোলায় জেলা বিজেপির কার্যালয়ের অদূরে এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, নিজের টাকার ব্যাগ বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর ভাবে আহত হন এক যুবতী। সেখানেও কালো পালসার বাইকে চড়ে দুষ্কৃতীরা এসেছিল। তবে ঘটনায় কেউ এখনও গ্রেফতার হয়নি।
একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় শহরের আইন-ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে কি সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা এতটাই তলানীতে এসে পৌছেছে যে দিনের আলোয় হামলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা, আর প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। এবার সাবধান থাকতে গিয়ে এবং প্রতিবাদ করায় স্বাধীনভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন মানুষ। ব্যাংকের কার্যকলাপ নিয়েও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কিভাবে দুষ্কৃতীরা খবর পায় কোন ব্যক্তি টাকা তুলছেন, কখন তুলছেন এবং কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এমনটা তো হতে পারে না যে দুষ্কৃতীরা হঠাৎ করে কোনও ব্যক্তির উপর হামলা করেছে এবং সৌভাগ্যবশত বেগের মধ্যে টাকা পেয়ে গেছে। কেউ বড় অংকের টাকা তুললেই ব্যাংকের পাশে চলে আসে কালো বাইকে চড়া দুই যুবক। তারা এটাও জানে কোন ব্যাংকে টাকা রয়েছে, আচমকাই হামলা করে এবং টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের আর ধরাও যায়না এসব সমস্যার সমাধান হয় না।
Comments are closed.