
কাছাড় কলেজে আনন্দ চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ধর্না, পাল্টা অভিযোগ অধ্যাপকের, আইনি পদক্ষেপের হুমকি
কাছাড় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক আনন্দ চন্দ্র ঘোষের অপসারণের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন অশিক্ষক কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, আনন্দ চন্দ্র ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন এবং বুধবার সকালে কলেজের ভেতর তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দুর্ব্যবহার করেছেন। এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ কলেজের মুখ্য প্রবেশ দ্বারে ধর্নায় বসেন তারা, পাশাপাশি কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আনন্দ ঘোষের অপসারণ চেয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ শংকর নাথ জানিয়েছেন তারা ইতিমধ্যে আনন্দ চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চলেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পুলিশে এজাহার দায়ের করা। তবে আনন্দ চন্দ্র ঘোষ পাল্টা অভিযোগ করেছেন; তার বয়ান, অধ্যক্ষের নির্দেশে অশিক্ষক কর্মচারীরা বুধবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে তাকে আটক করে মারধর করেছেন। তিনি আগামীতে এর বিরুদ্ধে পুলিশে এজাহার দায়ের করবেন। ঘটনায় কলেজে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কলেজের যেসব পড়ুয়া ব্যাক পেপারের পরীক্ষা দেয়, তাদের কাছ থেকে “ইন্সিডেন্টাল ফি” হিসেবে আদায় করা হয়ে থাকে ২০০ টাকা। সব কলেজে একই নিয়ম। গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকা অশিক্ষক কর্মচারীদের বেতনে খরচ করা হয়, বাকি ১৫০ টাকা যায় পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে। অথচ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আনন্দ চন্দ্র ঘোষ এই বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এব্যাপারে কথা বলতে বুধবার সকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, অথচ তিনি প্রথম থেকেই অত্যন্ত নিম্নস্তরের ভাষায় কথা বলেন এবং দুর্ব্যবহার করেন। তার ব্যবহারে অশিক্ষক কর্মচারীরা অপমানিত বোধ করেছেন এবং তার অপসারণের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন।
অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ শংকর নাথের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আনন্দ চন্দ্র ঘোষ দীর্ঘদিন ধরেই কলেজের শিক্ষক, গভর্নিং-বডি সহ প্রত্যেকের সঙ্গে নানান সময়ে দুর্ব্যবহার করেছেন। অতীতে তার দুর্ব্যবহার এবং অন্যায় কাজের জন্য বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে কিন্তু তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এখনও নিজের কাছে আটকে রেখেছেন। আমরা এই বিষয়ে গভর্নিং বডির কাছে জানিয়েছি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামীতে আনন্দ চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এর আগে একবার তাকে জানানো হবে, তিনি উত্তর না দিলে অতিসত্বর আইনের দ্বারস্থ হচ্ছি আমরা। বুধবার ঘটনা কি হয়েছে আমি দেখিনি, তবে কর্মচারীরা একটি স্মারকপত্র দিয়েছেন আমি সেটা গভর্নিং বডির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
এদিকে শিক্ষক আনন্দ চন্দ্র ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, কলেজের অধ্যক্ষের সহায়তায় কর্মচারীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে আটক করেছে এবং মারধর করেছে। তিনি বলেন, “ইন্সিডেন্টাল ফি নিয়ে পড়ুয়ারা আপত্তি করেছে, আমি করিনি।অধ্যক্ষের কিছু প্রিয় মানুষ কলেজের শিক্ষক কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিশ্বজিৎ যাদব। তার স্ত্রীকে ইন্টারভিউ ছাড়া চাকরিতে রেখেছিলেন অধ্যক্ষ। ফলে তার নির্দেশে অনেক কাজ করেন বিশ্বজিৎ যাদব। বুধবার সকালে যে কক্ষে অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার রাখার কথা ছিল সেটা বদলে অন্য কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি সেখানে যাওয়ার পর বিশ্বজিৎ যাদব আমাকে ডাকেন এবং উল্টোপাল্টা গালাগালি দিতে শুরু করেন। তারা হঠাৎ করেই আমার উপর চড়াও হন এবং শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেন। আমি তাদের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বেরিয়ে এলেও চরম অপমানিত বোধ করছি। যেহেতু কলেজের ভেতরে ঘটনা হয়েছে, আমি আশা করছি কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেবেন। সেটা না হলে আগামীতে আমি আইনের দ্বারস্থ হব।”
Comments are closed.