Also read in

"এআইইউডিএফ বরাক উপত্যকা কুক্ষিগত করেছে," হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ; ভাষা নিয়ে বিভাজনের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

আসামের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অবশেষে বরাক উপত্যকায় অসমিয়া পোস্টার নিয়ে নীরবতা ভঙ্গ করলেন। একদিকে যখন প্রদীপ দত্ত রায়কে শিলচর এসপি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, অন্যদিকে তখন মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন।

“বরাক উপত্যকায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু এবং ব্রহ্মপুত্রের বাঙালি জনসংখ্যাকে অরক্ষিত বোধ করানোর জন্য একটি চক্রান্ত চলছে। এটি সাধারণ অসমিয়া অনুভূতির বিরুদ্ধে কাজ নয়, বরং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা চাপানোর চেষ্টা,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী.

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আজ আপনি দেখতে পাচ্ছেন বরাক উপত্যকায় একটি পোস্টার সরানোর পরেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাঙালি আবেগের বিরুদ্ধে ঘটনা ঘটছে। এখন বরাক উপত্যকায় যারা এই কর্মকাণ্ড করছে, তারা যদি বাঙালি-প্রেমী হত, তাহলে তারা কখনও এরকম করত না ; কারণ বরাক উপত্যকায় এরকম কিছু করলে তার প্রতিক্রিয়া ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পড়বে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ২০ লাখ বাঙালি আছে এবং তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হচ্ছে।”

প্রদীপ দত্ত রায়ের নাম না নিয়ে তিনি বিডিএফের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেন। “বরাক উপত্যকায় যারা এটা করছে তারাই প্রকৃত বাঙালি বিরোধী। যারা এই কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের এই সরকারের মূল্যায়ন করা এখনও বাকি । আমি মুখ্যমন্ত্রী এবং একবার শক্তভাবে এ সবকিছু গ্রহণ করলে ব্যাপারটা সত্যি সত্যি শক্ত হয়ে যাবে। তিনি আমাকে হালকাভাবে নিচ্ছেন…” তিনি উপহাস করে বলেন।

গতকাল কাছাড় জেলা বিজেপি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিল। “এই লোকটি যা করছে তার পিছনের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে বিজেপি ইতিমধ্যেই বরাক উপত্যকায় একটি প্রচার শুরু করেছে। বরাক উপত্যকায় বাঙালি হিন্দু ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু। এখানে বসে আমরা মনে করি পুরো শিলচর বাঙালি হিন্দুদের, এটি সত্য নয়। শিলচরের বিধায়কদের নাম বলুন, আপনি তিনজন বাঙালি হিন্দু খুঁজে পাবেন না…” মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন।

রাজ্যের অসমিয়া জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “কেউ অসমিয়া ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা নষ্ট করতে পারবে না, অসমিয়া ভাষা আমাদের হৃদয়ে আছে। যখনই বরাক উপত্যকায় যাব, তখনই আমি অসমিয়া ভাষায় বক্তৃতা দেব। এগুলো করে তারা আমাদের আটকাতে পারবে না”

সূক্ষ্মভাবে, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রদীপ দত্ত রায়কে তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বলেছেন। “একটি নতুন দল আসামে প্রবেশের চেষ্টা করছে এবং এই কার্যকলাপগুলি সেই পার্টিকে জায়গা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে। এই সরকার খুব কঠিন এবং আমরা শুধু সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা যা করার চেষ্টা করছি তাতে নিশ্চিত থাকুন যে, এই সমস্ত কার্যকলাপ করে কোন কুখ্যাত ব্যক্তি বিখ্যাত হয়ে উঠবেন না।”

আসামের বাঙালি নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করতে এগিয়ে এসেছেন বলে তিনি সাধুবাদ জানান। “ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সমস্ত বাঙালি তাদের এই ঘটনাগুলি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে,” মুখ্যমন্ত্রী বলেন।

তিনি উপসংহারে বলেন, “এআইইউডিএফ তাদের বিধায়কদের নিয়ে পুরো বরাক উপত্যকা দখল করেছে। যা ঘটছে তার রাজনৈতিক প্রভাব বুঝতে পারছে না। কোথা থেকে বাঙালি হিন্দুরা বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছেন। যতবারই আমি পরিদর্শন করি ততবার আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এআইইউডিএফ ধীরে ধীরে বরাক উপত্যকার সবকিছু দখল করছে। যেসব জায়গায় বাঙালি হিন্দুদের আধিপত্য ছিল, তা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে, বড়খলা, কাটিগড়া সবই এআইইউডিএফ-য়ে যাচ্ছে। বরাক উপত্যকায় এই সমস্ত বিভাজনের চেয়ে হিন্দু ঐক্য বেশি প্রয়োজন।”

Comments are closed.