Also read in

উপত্যকার তিন জেলাশাসক বারবার লকডাউনের আবেদন জানিয়েছেন, সরকারের আপত্তি নেই, এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্য সচিব

শনিবার রাতে করিমগঞ্জের জেলাশাসক বরাক উপত্যকায় সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা উল্লেখ করেন। এরপর রাজ্যের মুখ্য সচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণা এর সত্যতা স্বীকার করেন। রবিবার সকালে একটি নির্দেশের কপি পাওয়া যায় যেখানে উপত্যকার তিন জেলাশাসককে বলা হয়েছে ২৬ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউনের বিষয়ে বিবেচনা করতে। তবে কেন্দ্র সরকারের আনলক ৩.০ প্রক্রিয়ার নির্দেশাবলী লংঘন যাতে না হয়, এটাও খেয়াল রাখতে হবে। তবে চিঠিতে আরেকটা কথা বলা হয়েছে, কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির জেলাশাসক বারবার সাধারণ জীবনযাপন-চলাফেরা বন্ধ করে কড়া আইন ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছেন। এই নির্দেশের উপর কাছাড় এবং করিমগঞ্জের জেলাশাসক কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও হাইলাকান্দির জেলাশাসক মেঘ নিধি দাহাল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে স্থানীয় জেলাশাসকদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে এবং সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ জারি করা হবে।

তার বয়ান, “আমরা মুখ্যসচিবের নির্দেশ ভালো করে পর্যালোচনা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, যদি স্থানীয় প্রশাসন লকডাউন চায় তবে এতে রাজ্য সরকারের কোনো বাধা নেই। তবে কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ যাতে লংঘন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উপত্যকার তিন জেলাশাসক চাইলে ২৬ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণ লকডাউনের নির্দেশ জারি করতে পারেন।”

আমরা অতীতেও দেখেছি ব্যবসায়ী সংগঠনের বাজার বন্ধের আবেদনকে লকডাউনের আবেদন লিখে মুখ্য সচিবের কাছে পাঠিয়েছিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি। অথচ জেলায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একের পর এক বৈঠক হয় এবং সব বৈঠক শেষে জেলাশাসকের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে বলা হয়, “কেউ লকডাউন চাইছেন না।”

শনিবার সন্ধেবেলা করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবামুথান এমপি তার ফেসবুক লাইভে এসে বিতর্ক উস্কে দেন। তিনি প্রথমে তার জেলার প্রত্যেক ব্যক্তিকে বলেন আপনারা যত সম্ভব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখুন ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরই তিনি বলেন শুধু করিমগঞ্জে নয় কাছাড় এবং হাইলাকান্দিতেও একই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। মুখ্য সচিবের সঙ্গে উপত্যকার তিন জেলাশাসকের ব্যাপারে কথা হয়েছে এবং আগামীতে নির্দেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এরপর বরাক বুলেটিনের পক্ষ থেকে মুখ্য সচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান তিন জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এবং করুনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই আগে থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকার যেন সম্পূর্ণ লকডাউনের চিন্তা করে। যদিও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে আনলক প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।”

তিনি রবিবার এই সূত্রে যে নির্দিষ্ট জারি করেছেন তাতেও বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নির্দেশ পালন করতে পারে। পাশাপাশি তিন জেলাশাসক বারবার করে লকডাউনের আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্য সচিব। তারা বলেছেন, “আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিগুণ হচ্ছে, তাই লকডাউন নিয়ে ভাবা উচিত।”

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী শনিবার কাছাড় জেলায় ৭৫ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর আগের শনিবার, ১৫ আগস্ট, অর্থাৎ এক সপ্তাহ আগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার দু’একদিন আগেও সংখ্যা আড়াইশোর কাছাকাছি ছিল। তবে এই সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। হয়তো এর অন্যতম কারণ টেস্টিং কিটের অভাব। বিভিন্ন টেস্টিং সেন্টারে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না বা কম সংখ্যায় পরীক্ষা হচ্ছে। তবে সরকারি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সংখ্যাগুলোই মূলত দেখা হয়। যখন আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম তখনই সম্পূর্ণ লকডাউনের সম্ভাবনা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
কাছাড়ের দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভাগের তরফে জেসিকা লালসিম জানিয়েছেন তারা এব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। সোমবার প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করা হবে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!