
ফ্লিপকার্টের নামে জালিয়াতি! ১ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা খোয়ালেন কনকপুরের আইনজীবী
সম্প্রতি জমতারা নামের একটি ওয়েব সিরিজ খুব বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল যেখানে তরুণ হ্যাকাররা ব্যাঙ্কের ডিটেলস সংগ্রহ করে কাস্টমারের নম্বরে ফোন করে এবং এভাবে ওটিপি চেয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়। এই ঘটনাই আক্ষরিক অর্থে শিলচরের আইনজীবীর সঙ্গে ঘটে গেছে।
ফ্লিপকার্ট থেকে ২৮৯ টাকার কাপড় কিনে সেটা বদলানোর চেষ্টা করায় খোয়াতে হলো ১ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে কনকপুরের আইনজীবী পংকজ কান্তি দে’র সঙ্গে। তিনি রাঙ্গিরখাড়ি থানায় এব্যাপারে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের নয়ডায়।
সোমবার রাঙ্গিরখাড়ি থানায় দায়ের করা এজাহারের বয়ান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে আইনজীবী পংকজ কান্তি দে’র ১১ বছরের মেয়ে ফ্লিপকার্ট থেকে একটি জামা অর্ডার করেছিল। কাপড়টি হাতে পাওয়ার পর সে দেখতে পায় এটি সাইজে হচ্ছেনা, তাই সেটা ফিরিয়ে দিতে চায়। জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফ্লিপকার্টের ওয়েবসাইটে একটি টোল-ফ্রি নম্বর দেওয়া রয়েছে। সেখানে কল করলে তারা জানায়, একমাস পর নভেম্বরের ১০ তারিখ সেটা ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে ১০ তারিখ পেরিয়ে গেলেও ফ্লিপকার্টের পক্ষ থেকে কোনওধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। এরপর হঠাৎ ফ্লিপকার্টের নাম করে এক অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে। নম্বরটি ছিল ৭৩১৮৭৭০২৭৭, এক মহিলা কন্ঠে ফোন করা হয় এবং বলা হয় তিনি ফ্লিপকার্টের কর্মচারি। কথাবার্তার মধ্যেই তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চান এবং ছোট্ট মেয়েটিকে বলেন মোবাইলে ওটিপি এলে সেটা তাকে বলতে। জয়েন্ট একাউন্ট হওয়ায় পংকজ কান্তি দে-এর ছোট মেয়েটি ব্যাংকের সব তথ্য জানতো। সে ভেবেছিল এভাবে পছন্দ না হওয়া কাপড়টি ফিরিয়ে দেবে এবং অন্য কিছু কিনে বাবাকে সারপ্রাইজ দেবে। এই সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা মাথায় রেখে সে প্রথমে বাবাকে কিছুই জানায়নি।
তবে সে হঠাৎ করে কাজটি করেনি। ফ্লিপকার্টের নাম করে যে মহিলা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, ওটিপি পাওয়ার জন্য তিনি প্রায় ১১বার ফোন করে ছোট্ট মেয়েটিকে ফোসলানোর চেষ্টা করেন। পরে পংকজ কান্তি দে হঠাৎ মোবাইলে এসএমএস পান তার অ্যাকাউন্ট থেকে দুইবার টাকা কাটা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এটিএমে যান এবং মিনি স্টেটমেন্ট নিতেই তার মাথায় হাত। দুই কিস্তিতে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩৬০৯৪ টাকা গায়েব।
মিনি স্টেটমেন্ট পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবী পংকজকান্তি দে সোনাই রোডে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় যান। ব্যাংক কর্মীদের পরামর্শে প্রথমেই রাঙ্গিরখাড়ি থানায় এজাহার দায়ের করেন। এরপর তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ততক্ষণে টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ফলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় তাদের খুব একটা কিছু করার থাকবে না। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, উত্তরপ্রদেশের নয়ডা শহরে কেউ ট্রানজেকশনটি করেছে। তবে আগামীতে পুলিশ এই টাকা উদ্ধার করতে কি পদক্ষেপ নেবে সেটা বলা হয়নি।
গতবছর আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের ১০ লক্ষ টাকা এভাবে উঠিয়ে নিয়ে ছিল দুষ্কৃতিরা। পরে ব্যাংকের ম্যানেজারের তৎপরতায় সেই টাকা আটক করা হয় এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশে সেটি একাউন্টে ফেরত পাঠানো হয়। তবে এরপরে অনেকগুলো ঘটনা হয়েছে যেখানে টাকা ফিরে পাওয়া যায়নি। এবার দেখার বিষয়, কনকপুরের আইনজীবী পংকজ কান্তি দে-এর সঙ্গে কি হয়।
Comments are closed.