Also read in

একজন কমপ্লিট ক্রিকেটার, টিমম্যান ছিল অলক

শুভশিষ চৌধুরী

বছরটা ঠিক মনে পড়ছে না। তবে আশির দশকের শেষ দিকে অলক সরকারের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। সে তখন জুনিয়র স্তরে ক্রিকেট খেলছে। প্রথম কয়েক দিনের নেট সেশনেই বুঝে গিয়েছিলাম ছেলেটা খুবই প্রতিভাবান। ‌ লম্বা রেসের ঘোড়া। খুব সুন্দর ছিল ওর বোলিং অ্যাকশনটা। গতিও ছিল ভালো। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ও অমুদার (প্রাক্তন রঞ্জি তারকা অমল দাস) প্রিয় শিষ্য হয়ে উঠেছিল অলক।

জুনিয়র স্তরে মূলত অলক একজন পেসার ছিল। তবে খুব কম সময়ের মধ্যেই ও নিজের ব্যাটিংয়েও উন্নতি করে নেয়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ওকে অমলদা গাইড করতেন। আমরা সবাই অমুদার শিষ্য ছিলাম। সবাইকে অমুদা খুব স্নেহ করতেন। তবে অলক ছিল অমুদার সবচেয়ে প্রিয়।

অলকের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তিন দশকেরও বেশি সময়ের। ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। দীর্ঘ সময় একসঙ্গে খেলেছি। ‌ তাই আজ অলক নেই, এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গত দুবছর খুব কষ্ট পেয়েছে। প্রাণবন্ত ছেলে ছিল অলক। মাঠে সব সময় সবাইকে চিয়ার করত। যতই কঠিন ম্যাচ হোক, নিজের সেরাটা নিংড়ে দিত। আমার দেখা একজন কমপ্লিট ক্রিকেটার। ব্যাটিং ও বোলিং এর সঙ্গে দারুন ফিল্ডিং করত। স্লিপ হোক অথবা গালি, ডিপ স্কয়ারলেগ অথবা কাভার সব জায়গাতেই দারুন ফিল্ডিং করত অলক। জেলা দল হোক অথবা ক্লাব দল, আমার নেতৃত্বে ও দীর্ঘ সময় খেলেছে। বরাবরের টিমম্যান ছিল। দলের সার্থকে সবসময় এগিয়ে রাখত। ‌ একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি যা নির্দেশ দিতাম, এক কথায় পালন করতো। যখন যেখানে ব্যাট করতে বলেছি, ছেলেটা না করেনি। ‌ সত্যিকারের টিম ম্যান ছিল।

ও যেমন আমার নেতৃত্বে খেলেছে, আমিও অনেক বছর ওর নেতৃত্বে খেলেছি। সিনিয়রদের খুব সম্মান করতো। টাউন ক্লাবে আমি অলক এবং প্রয়াত মেহেবুব আলম দীর্ঘ সময় একসঙ্গে খেলেছি। অলক অধিনায়ক থাকাকালীন সবসময় আমাদের পরামর্শ নিতো। কিভাবে আরো উন্নতি করা যায়, দলকে কিভাবে আরো একজোট করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করত। জেলা স্তরে হোক অথবা ক্লাব স্তরে, অলকের অনেকগুলি ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্স রয়েছে। কখনও বোলিংয়ে তো কখনো ব্যাটিংয়ে, সত্যিকারের অর্থে একজন ম্যাচ উইনার ছিল। মাঠের বাইরেও আমাদের সম্পর্কটা ছিল মধুর।

একজন কোচ হিসেবেও কিন্তু অলক সফল হয়েছিল। ওর ম্যান ম্যানেজমেন্ট খুব ভালো ছিল। সঙ্গে ছিল দারুন ক্রিকেটীয় জ্ঞান। ম্যাচ সিচুয়েশন খুব ভালো রিড করতে পারতো। একজন ব্যাটসম্যান কেমন খেলছে, তার দুর্বলতা কোন জায়গায়, অলক কিন্তু চট করে ধরে নিত।

ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছু দেবার ছিল অলকের। অবসর নেওয়ার পর কোচ হিসাবে ও আরো সুনাম অর্জন করতে পারত। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য সেটা আর সম্ভব হলো না। আমার দেখা অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। কমপ্লিট ক্রিকেটার। যার কোনো বিকল্প হয় না।
আজ অলক নেই। তবে শিলচরের ক্রিকেটে তার অবদান সবাই চিরকাল মনে রাখবে।

Comments are closed.