উত্তাল প্রতিবাদের মধ্যেও মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা উদ্বোধন করলেন গান্ধীবাগে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক বানানোর প্রকল্প
উত্তাল প্রতিবাদের মধ্যেও উদ্বোধন হলো গান্ধীবাগে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক প্রকল্পটির। মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, শিলচর পুরসভার চেয়ারম্যান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর সহ অন্যান্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন করলেন। তবে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন না জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি, শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল এবং বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য।
শিলচর পুরসভার তত্ত্বাবধানে গৌহাটির একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি গান্ধীবাগ পার্কের পরিত্যক্ত জায়গায় বিরাট অ্যামিউজমেন্ট পার্ক তৈরি করবে। পাশাপাশি তৈরি হবে একটি কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স যেখানে পাঁচতারা হোটেল, বার, মার্কেট কমপ্লেক্স ইত্যাদি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেল চারটে নাগাদ মন্ত্রী পিযুষ হাজারিকা সহ অতিথিরা গান্ধীবাগ পার্কে প্রবেশ করেন।
এদিকে চলছিল শহরের নাগরিকদের উত্তাল প্রতিবাদ, তারা পিযূষ হাজারিকাকে গান্ধীবাগে প্রবেশ করতে দেবেন না বলেও দাবি তোলেন। তবে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকলেই উন্মোচনের স্থানে এসে পৌঁছান এবং ফলক উন্মোচন করা হয়। যদিও জনগণের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত নগণ্য। ফলকটি উন্মোচনের পর গান্ধীবাগের প্রেক্ষাগৃহে একটি অনুষ্ঠান রাখা হয়। সেখানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন অতিথিরা এবং পার্কটি কেমন হবে এনিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়।
স্বাগত বক্তব্যে শিলচর পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বলেন, শিলচরে কোন ভাল কাজ করতে গেলে কিছু লোক বিরোধিতা করবেই আমাদের জানা ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দিলেন তখনও একাংশ লোক প্রতিবাদের অভিনয় করেছেন। তাদের কিছু বিশেষ স্বার্থ থাকে তাই তারা প্রতিবাদ করে। তবে আমরা শহরের একাংশ মানুষের চেয়ে সারা শহরবাসীর স্বাচ্ছন্দ নিয়ে বেশি চিন্তিত। আমাদের প্রকল্পটির কথা জনসমক্ষে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ৯-নম্বর ওয়ার্ডের পুরসদস্য এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি মামলাটি হেরে যান এবং আজ তার দলের সদস্যরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। আমরা রাজ্য সরকারের অধীনে থেকে কাজটি করছি এবং ভবিষ্যতে শিলচর শহর আমাদের এই জন্য মনে রাখবে। জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি সভায় যোগ না দেওয়ায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। তিনি বলেন, আমরা জেলাশাসককে এ ব্যাপারে প্রথম থেকেই জানিয়ে এসেছি, অথচ অনুষ্ঠানের দিন তিনি বেঁকে বসলেন। তিনি অনুষ্ঠানে না এসে আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতার একটি নিদর্শন তুলে ধরেছেন।
মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা তার ভাষণের শুরুতে ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের আত্মার সদগতি কামনা করেন। পাশাপাশি অ্যামিউজমেন্ট পার্কটির ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এবং শিলচর শহরের উন্নতি নিয়ে রাজ্য সরকারের নানান প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শিলচর পৌরসভার তরফে আমার কাছে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে এবং আমি শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। শহরের ঐতিহাসিক গান্ধীবাগ পার্ককে যদি এভাবে সুন্দর করে তোলা যায় তাহলে এটি রাজ্যের অন্যতম পর্যটন স্থল হয়ে উঠতে পারে। শহরের মধ্যে থাকা পার্কটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আমরা এর বেশিরভাগ অংশ পার্ক বানানো এবং এর ইতিহাস সংরক্ষণ নিয়ে ব্যবহার করব। এক বিঘা তিন কাঠা জায়গা কমার্শিয়াল কাজে ব্যবহৃত হবে এবং সেখানে এ অঞ্চলের তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে। সরকারের তরফে শহরের নালা, রাস্তা ইত্যাদি সুন্দর করে গড়ে তুলতে বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ করা হবে। এত বছর কংগ্রেস জমানায় শিলচর শহরে পর্যাপ্ত উন্নতির কাজ করা হয়নি। আর যখন আমাদের সরকার কাজ করছে তখন তারা বিরোধিতা করছেন। কংগ্রেসের বিরোধিতায় আমি কান দিতে চাইনা, তবে যদি শহরের সাধারণ মানুষ তাদের কথা বলতে চান সেটা আমি অবশ্যই শুনবো।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বলেন, বিরোধীদের কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা,তবে এর পেছনে যুক্তি থাকলে ভালো হয়। বিজেপি সরকার মানুষের ক্ষতি করে না বরং দেশের উন্নতি করে, এটা আন্তর্জাতিক স্তরে আজ প্রমাণিত। ঐতিহ্যমন্ডিত গান্ধীবাগকে নতুন রূপ দিয়ে এলাকার যুবক-যুবতীদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে আমাদের সরকার। যারা এত বছর কিছুই করলেন না, আর যখন তারা দেখছেন শহরের কাজ হচ্ছে, উন্নতির ছোঁয়া লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন।
সাংসদ রাজদীপ রায় প্রতিবাদীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের যদি কোন অসুবিধা থাকে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন, এভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে না। গান্ধীবাগে এখন মাত্র ৬৪ টি গাছ রয়েছে, যার মধ্যে ১৯ কি মৃত। যারা এত বছর রাজত্ব করলেন তারা গান্ধীবাগে নতুন গাছ লাগিয়ে একে সত্যি সত্যি শহরের ফুসফুস হিসেবে গড়ে তোলার কোনও কাজ করেননি। পার্কের সাপনালা ছোট হতে হতে আড়াইশো মিটারে এসে পৌঁছেছে। আমাদের প্রকল্পে নালাটিকে এক কিলোমিটার লম্বা করা হবে এবং এখানে প্রতিনিয়ত বোট চলবে। পার্ককে ঘিরে ১০০০ প্রয়োজনীয় গাছ লাগানো হবে এবং এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ভাষা আন্দোলনের শহিদদের শুধু শহরের একাংশ মানুষ শ্রদ্ধা করেন এবং আমরা করিনা এমনটা নয়। এটি বানানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের নামে একটি ছোটখাটো উদ্যান বানিয়ে ১১ জনের মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ১১ শহিদ আমাদের মাতৃভাষা রক্ষার্থে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাই একটি ছোট্ট পার্কের মধ্যে সীমিত নন তারা। আমরা ভাবছি শহরের বাইরে তাদের নামে একটি নিজস্ব উদ্যান বানিয়ে এরমধ্যে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করব। তবে বিরোধীরা এসব কথা শুনবে না। তারা চোখ-কান বন্ধ করে বিরোধীতাই করে যাবে। তাদের সময়ে দুই বিঘা জমির উপর মিনি সেক্রেটারিয়েটের কথা হয়েছিল, সেটা কোনদিন বাস্তব হয়ে উঠেনি। আমাদের সরকার ৪০০কোটি টাকার বিরাট আকারের মিনি সেক্রেটারিয়েটের কাজ শুরু করেছে। আমাদের কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে আজকে এখানে আসেনি তবে তাদের স্পষ্ট বলে দিচ্ছি পার্কটি হবেই।
অনুষ্ঠান শেষে শিলচর পৌরসভার পক্ষ থেকে অভ্রজিত চক্রবর্তী সবাইকে সাধুবাদ জানান। মন্ত্রী পীযুষ হাজারিকা অনুষ্ঠান শেষে হাইলাকান্দির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
Comments are closed.