পঞ্চায়েতরোডে পশুর চামড়া ও পরিত্যক্ত অংশ উদ্ধার, গোমাংস সেবনের অভিযোগে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলা বজরং দলের
বুধবার ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় গোমাংস বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল বজরং দল সহ বেশ কিছু সংগঠন। জানা গেছে, পুলিশের কিছু দল বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে। সেদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে শিলচর শহরের পঞ্চায়েত রোড এলাকায় একটি পুকুরের পাশে মৃত পশুর চামড়া সহ নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ একটি প্যাকেটে করে প্রকাশ্যে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
এলাকাবাসীরা এই বিষয়ে তৎপর হন এবং নিজেরাই নেমে সেগুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করেন। এদিকে বজরং দলের শিলচর শাখার তরফে রাঙ্গিরখাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, যদি ঘটনার পর্যাপ্ত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া না হয়, তাহলে বজরং দল এই বিষয় নিয়ে বড়সড় আন্দোলনের পথে যাবে।
বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চায়েত রোড এলাকার পুকুরের পাশে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় মৃত পশুর শরীরের অবশিষ্ট অংশ দেখতে পান এলাকার লোকেরা। এলাকায় হিন্দু এবং মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস রয়েছে। আগের দিন ঈদ ছিল এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে গো-মাংস বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এগুলো গরুর শরীরের পরিত্যক্ত অংশ। প্যাকেট দেখামাত্র এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দেয় এবং বজরং দল সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের লোকেরা সেখানে জড়ো হন। পুলিশের একটি বড় বাহিনী এলাকায় উপস্থিত হয় এবং স্থানীয় কিছু লোক পরিত্যক্ত প্যাকেটটি উঠিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। সেটা পাশের একটি জায়গায় মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হয়।
বজরং দলের তরফে শুভ রঞ্জন দাস এদিন একটি মামলা করেছেন। তার বয়ান, “এলাকায় একটি প্যাকেটে গরুর হাড়, নাড়িভুঁড়ি এবং চামড়া পাওয়া গেছে। এতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকেদের মনে আঘাত লেগেছে এবং তারা প্রতিবাদ করায় ওই এলাকার কিছু লোক তাদের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেছেন। সানু লস্কর ও মনজুর আহমেদ লস্কর সহ আরো কয়েকজন মিলে এলাকার বাসিন্দা পূর্ণজিৎ পাল ও সুসেন দাসকে গালাগাল দেওয়ার পাশাপাশি ধাক্কা দিয়েছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে পর্যান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
বজরং দলের তরফে মিঠুন নাথ বলেন, “গতকাল বেশ কিছু জায়গায় প্রকাশ্যে গরু কাটা হয়েছে এবং মাংস বিক্রি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন গোমাংস বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে কিছু লোক দিব্যি সেটা উপেক্ষা করে গেছেন। আমরা শান্তিপ্রিয় লোক, তবে এভাবে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত এলে শান্ত থাকা যায় না। যারা কাজটি করেছেন এবং যেসব লোকেরা এতে সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনত দণ্ডনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমরা আগামীতে বড়োসড়ো আন্দোলন গড়ে তুলবো। তখন প্রশাসন বা সমাজের লোক যাতে আমাদের দোষারোপ না করেন।”
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে কিছু লোক বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্যাকেটে করে কোনও একটা পশুর নাড়িভুঁড়ি এবং চামড়া এলাকায় এনে ফেলা হয়েছে। একটি ছোট শিশু বয়ান দিয়েছে, সেই সকাল বেলা কিছু লোককে টুকটুকে করে এসে প্যাকেটটি ফেলতে দেখেছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মিজান লস্কর বলেন, “স্থানীয়রা বলেছেন একেবারে ভোরবেলা একটি টুকটুক পুকুরের পাশে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল এবং এতে দু-তিনজন বাইরের যুবক ছিল। রাস্তায় কিছু লোক দাঁড়িয়ে থাকতেই পারে, ফলে এলাকার লোকেরা তাদের কিছু বলেননি। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারছি তারা কেন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। গতকাল কিছু লোক অভিযোগ করেছেন, এলাকায় নাকি গো-মাংস বিক্রি হচ্ছে, আমরা তাদের ডেকে স্পষ্ট দেখিয়ে-দিয়েছি কিছুতেই গো-মাংস বিক্রি হচ্ছিল না, ঈদ উপলক্ষে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে। এলাকায় হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রায় সমান সমান, আমাদের একে অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কখনো ঝামেলা হয়নি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বাইরে থেকে কিছু লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু জিনিস ফেলে গেছে, যেটা আদৌ গরুর শরীরের অংশ নয়। আমরা সর্বাবস্থায় শান্তি চাইছি এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রাখছি তারা যেন আমাদের সাহায্য করেন। এলাকার হিন্দু ভাইদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে এবং তারাও আমাদের কথায় বিশ্বাস রাখছেন।”
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্যে প্রকাশ্যে গোমাংস বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বিল পেশ করেছেন। এই বিষয় নিয়ে রাজ্যের প্রত্যেক এলাকায় সচেতনতা দেখা দিয়েছে এবং পরিস্থিতি মাথায় রেখে পুলিশ এবং প্রশাসন ঈদের দিনে সতর্ক ভূমিকা পালন করেছে। ছোটখাটো বিক্ষিপ্ত প্রয়াস চললেও এদিন গো মাংস নিয়ে বড়োসড়ো কোন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছিল। তবে এলাকার মানুষ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।
Comments are closed.