Also read in

শিলচর স্টেশনে অবস্থানরত কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তনী অনিন্দিতা ভট্টাচার্য এক রহস্যের নাম

কনভেন্ট শিক্ষিতা স্বতঃস্ফূর্ত ইংলিশে কথা বলা অনিন্দিতার বর্তমান ঠিকানা শিলচর রেলওয়ে স্টেশন।

তার বর্তমান মানসিক স্থিতি এবং এই যাযাবর জীবন-যাপন সবাইকেই দুঃখিত করবে কিন্তু তার আত্মবিশ্বাস এবং স্বতঃস্ফূর্ত ঝরঝরে ইংলিশ সবাইকে মুগ্ধ করবে। ১৯৯৩ সনে শিলচর কলেজিয়েট স্কুল থেকে পাঁশ করা অনিন্দিতা ভট্টাচার্য্য গুরুচরণ কলেজ হয়ে শিলঙে তার পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে ছিলেন। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শিলং শাখার প্রাক্তন কর্মী বিধায়ক ভট্টাচার্যের কন্যা তিনি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিধায়ক ভট্টাচার্যের বাড়ি উধারবন্দের কাছে ভিআইপি রোডে। উধারবন্দে নিজস্ব বাড়ি ফেলে রেখে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে বিগত ১৫ দিন ধরে রয়েছেন অনিন্দিতা। কয়েকদিন আগে শিলচর কলেজিয়েট স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র তাকে স্টেশনে দেখে চিনে ফেলে এবং মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বুঝতে পেরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে।

বরাক বুলেটিনের তরফ থেকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে গিয়ে তার সাথে প্রায় তিরিশ মিনিট কথা বলেন প্রতিনিধি। প্রাথমিকভাবে একটু সংকোচ বোধ করলেও পরে অনেক কিছুই বললেন তিনি। আমাদের প্রতিনিধি বাংলায় প্রশ্ন করলেও উত্তর দিচ্ছিলেন চোস্ত ইংরেজিতে। তাকে যখন তার বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি জানান যে তিনি তার গুরুর পছন্দে এরকম আছেন।

তার কথা অনুযায়ী, ১৯৯৯ সনে এক ইসলাম ধর্মীয় সন্ন্যাসী, যিনি আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন, তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল; উনার নাম ছিল বুলবুল খা। বুলবুল খাঁর সাথে অনিন্দিতার দীর্ঘ বার্তালাপ হয়েছিল। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেই বুলবুল খাঁ এখন আল্লা রাখা খাঁ নামে পরিচিত এবং পাকিস্তানে বসবাসরত। অনিন্দিতা জানালেন যে, তিনি যে এই যাযাবর জীবন যাপন করছেন তা ওই আল্লা রাখার উপদেশ। “আমি বিশ্বাস করি আল্লা রাখা খাঁ আমার কাছে ফিরে আসবেন।” ১৯৯৯ থেকে যাযাবর জীবন যাপন করা অনিন্দিতা আরও জানালেন যে, তিনি অনিন্দিতা ভট্টাচার্য খাঁ হিসেবে পরিচিত হতে চান।

যদিও তার এই কাহিনী বিশ্বাস করা খুবই শক্ত। কিন্তু তিনি যেভাবে অবলীলায় বর্ণনা করে যাচ্ছিলেন, তা শুনে খুবই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছিল। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, বুলবুল খাঁর সাথে তার কি কোন সম্পর্ক আছে। তিনি বললেন, “আমি শুধু একবার ওর দেখা পেয়েছিলাম এবং তখন থেকেই তার দেখানো পথে অনুসরণ করে চলেছি” ‌ । ৩০ মিনিট ধরে চলা এই বার্তালাপে তিনি বার বার একটা বই তুলে ধরছিলেন যাতে লিখা ছিল ইসলাম। উনার সাথে ব্যাগভর্তি কাপড় রয়েছে, চিরুনি ও আছে। একটু পর পর তিনি তার বেশভূষা একটু একটু পরিবর্তন করছিলেন।

উনার আশে পাশে থাকা অন্য মহিলারা জানালেন যে, তাদেরকেও বুলবুল খার গল্প বলা হয়েছে, তবে তারা আদৌ বিশ্বাস করছেন না। “আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ওকে দেখছি, তাকে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ মহিলা হিসেবেই মনে হচ্ছে। হয়তো বাড়িতে কোনো অশান্তি হয়েছিল, তাই আর ফিরে যাননি”, জানান তারা।

এদিকে রেলস্টেশনের কর্তৃপক্ষ অনিন্দিতাকে নিয়ে চিন্তিত আছেন। রেল স্টেশনের একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানালেন যে, তারা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে এই মহিলা সম্বন্ধে জানিয়েছেন। উনার নিরাপত্তা নিয়ে তারা খুবই চিন্তিত। “একজন মহিলা এভাবে একা দিনের পর দিন স্টেশনের পড়ে থাকা বিপজ্জনক। আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা প্রশাসন কে জানিয়েছি।”

অনিন্দিতা ভট্টাচার্যের পুরো কাহিনীটাই রহস্যে ভরপুর। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর অনেকগুলো প্রশ্ন উঠে আসে। উনার পিতা ওকে কেন উধারবন্দে পৈত্রিক বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন না! এই বুলবুল খাঁ বা আল্লা রাখা খাঁ নামে সত্যিই কি কেউ আছেন, যিনি তার কথামতো বর্তমানে পাকিস্থানে বাস করছেন! না এটা তার বিশেষ মানসিক স্থিতির কল্পনাপ্রসূত কাহিনী! তিনি কি বাস্তবিকই এই কুড়ি বছর ধরে যাযাবর জীবন-যাপন করে চলেছেন! অনিন্দিতা কেন নিজেকে অনিন্দিতা ভট্টাচার্য খাঁ হিসেবে পরিচিত করতে চাইছেন! সত্যিই কি তিনি মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেছেন ! তবে তার পরিবার কেন ডাক্তারের সহায়তায় তাকে সুস্থ করে তুলছেন না! এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে একজন সেরকম বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। বর্তমানে এটুকুই বাস্তব সত্য যে, একজন কনভেন্ট শিক্ষিতা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা মহিলা শিলচর রেল স্টেশনে বিগত ১৫ দিন ধরে রয়েছেন ।

Comments are closed.