Also read in

বিহারে আত্মহত্যা করলেন শিলচর এনআইটির ছাত্র, "আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নজর দিন," কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি পড়ুয়াদের

বিহারের দারভাঙ্গা জেলায় নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করলেন শিলচর এনআইটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কৌশল সিং। গতবছর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরেক ছাত্র আগ্রায় নিজের বাড়িতে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছিল। যদিও দুজনেই নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে এবং এর কোনও কারণ এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি, বাকি পড়ুয়ারা বলছে তাদের উপর পড়াশোনার নামে অনেক বেশি চাপ দেওয়া হচ্ছে। এনআইটি কর্তৃপক্ষের কাছে তারা আবেদন জানিয়েছে, ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবা হোক।

এনআইটির রেজিস্টার নলিন বিহারী দেব চৌধুরী জানিয়েছেন, কৌশল সিং অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র ছিল, পাশাপাশি সংস্কৃতিপ্রেমী এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ ছিল। তিনি বলেন, “তার প্রথম বছরের নম্বর ৯০ শতাংশের বেশি, পড়াশোনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী এবং স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাবের ছিল ছাত্রটি। তার মৃত্যুতে গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শোকস্তব্ধ। আমাদের মনে হয়না পড়াশোনার চাপে তার এই পরিণতি হতে পারে, কেননা সে পড়াশোনা করতে খুব পছন্দ করত। এছাড়া খুব বেশি সামাজিক মানুষ ছিল সে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় অ্যাকটিভ থাকত, গান ভালোবাসত, খেলা ভালোবাসত। তাকে দেখে কখনও মনে হয়নি এমন একটা ঘটনার কথা সে ভাবতেও পারে। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা ইতিমধ্যে ছাত্রটির শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন। আমরা বুধবার শিলচর এনআইটি চত্বরে একটি শোকসভা করেছি। তার সহপাঠী থেকে শিক্ষক প্রত্যেকেই অত্যন্ত শোকোস্তব্ধ এবং স্তম্ভিত।”

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখ উত্তরপ্রদেশের আগ্রার নেহেরু নগর এলাকায় শুভঙ্কর পন্ডিত নামের এক ছাত্র নিজের বাবার বন্দুক দিয়ে নিজেকে গুলি করেছিল। সে শিলচর এনআইটির তৃতীয়বর্ষের ছাত্র ছিল এবং তার বাবা পুলিশে চাকরি করেন। বাবার সার্ভিস রিভলভার দিয়েই নিজেকে হত্যা করেছিল শুভঙ্কর পন্ডিত। তার ব্যাপারে নলিন বিহারী দেব চৌধুরী বলেন, “সেও একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র ছিল, তার রেজাল্ট প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি থাকতো। আমাদের দুর্ভাগ্য পরপর দুজন প্রতিভাবান ছাত্র এভাবে কম বয়সে নিজেদের জীবন শেষ করে দিয়েছে। তবে দুজনেই পড়াশোনার ব্যাপারে অত্যন্ত মনোযোগী ছিল এবং পড়তে ভালোবাসত। তাই অ্যাকাডেমিক প্রেসার হয়তো এর পিছনে কারণ নয়, পরিবারের অন্য কারণ থাকতে পারে।”

তবে রাকেশ পন্ডিতের বাবা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, পড়াশোনার এত বেশি চাপ তার ছেলে সহ্য করতে পারেনি, তাই আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেছিলেন, “আমার ছেলের উপর এতটাই চাপ সৃষ্টি করা হয়, সে আমাকে বার বার বলে এনআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা একজন ডিনের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি রাজি হননি। আমার ছেলে জানিয়েছিল তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না, ক্লাসকক্ষে উপস্থিতি নাকি কিছুটা কম ছিল।” তবে রাকেশ পন্ডিতের বাবার তোলা অভিযোগগুলো স্ক্রুটিনি অফ লো প্রক্রিয়ায় ধোপে টিকেনি।

শিলচর এনআইডিতে মানসিক স্বাস্থ্য কমিটি রয়েছে, এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাই সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তারা সব সময় চিন্তা করে এবং তাদের সাহায্য করে। বুধবার শোকসভায় অংশ নিয়ে তারা এনআইটি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়, ছাত্রদের পড়াশোনার দিকগুলোর পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও এবার থেকে ভাবতে হবে। তারা বলে, “অত্যন্ত অল্প বয়সের ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ছেড়ে পড়াশোনার খাতিরে এখানে এসে থাকে। তারা অত্যন্ত প্রতিভাবান বলেই এমন একটা পড়াশোনা করার সুযোগ পান। তারা পড়াশোনা ভালো ফল করবেন এটাই আশা করা হয়, তবে এই প্রক্রিয়ায় তাদের ওপর কতটুকু মানসিকভাবে চাপ পড়ছে সেটা দেখা হয়না। প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে আমাদের দুজন প্রতিভাবান ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। যাতে আগামীতে এমন ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এখন থেকেই খেয়াল রাখতে হবে।”

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গতবছর দেশের প্রথম ৫০-টি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট তালিকায় এসেছে। এরপর টাইম ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রথম সারির রেংকিংয়ে স্থান পেয়েছে শিলচরের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সারাবিশ্বে এতটা সুনাম অর্জন করতে পারেনি। এই পর্যায়ে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয়, সেটা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের এবং গবেষকদের কাজের ভালো প্রদর্শন। অবশ্যই কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন প্রতিবছর রেংকিং-কে আরো উন্নত করতে। হয়তো এই প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের উপর একটু বেশি চাপ সৃষ্টি করছেন কর্তৃপক্ষ। তবে দুই ছাত্রের আত্মহত্যার পেছনে এমন কোনও কারণ রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

Comments are closed.