
বকেয়া বেতন না পেয়েই মারা গেলেন আরেক কাগজকল কর্মী, মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৮১
কাছাড় এবং জাগীরোড কাগজ কল বন্ধ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট ৮০ জন কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। এবার মারা গেলেন কাছাড় কাগজকলের আরেক কর্মচারী। রূপম নাথ মজুমদার নামের কর্মচারী সোমবার গভীর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং টাকা পয়সার অভাবে ঠিকঠাক চিকিৎসা হয়নি, এমনটাই জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। এতে কাগজ কল বন্ধ হওয়ার পর কর্মচারী মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ৮১ জনে।
সোমবার রাত ১২ টা ৫ মিনিটে মৃত্যু হয় তার, মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তিনি কাগজ কলে কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন। একজন ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ গুণমুগ্ধদের রেখে গেছেন তিনি।
হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের অধীনে থাকা কাছাড় এবং জাগীরোড কাগজ কল যথাক্রমে ২০১৭ এবং ২০১৫ সালে বন্ধ হয়। কাছাড় কাগজ কলের ৪৭ মাসের এবং জাগীরোড কাগজ কলের ৪৯ মাসের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়নি। এতে অনেক কর্মী বিভিন্ন ঋণে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন। অনেকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যপরিসেবা নিতে পারছেন না, কেউ কেউ আবার গৃহঋণের ইএমআই দিতে না পেরে ঘরছাড়া হওয়ার অবস্থায় এসে পৌঁছে গেছেন। কাগজ কল পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “এসব মৃত্যু সাধারণ মৃত্যু নয়, আমরা এগুলোকে হত্যা হিসেবে গণ্য করি। সরকার তিলে তিলে আমাদের শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।”
দুই কাগজ কলের মারা যাওয়া কর্মচারীর সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৮১ জনে। তাদের বিদেহী আত্মার শান্তিতে ১১ ফেব্রুয়ারি ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’ করবেন সহকর্মী এবং পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, “কলের ৮১ জন মৃত কর্মচারীর আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি আবার পথে নামছি আমরা। তবে এবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’। দুই কাগজকল বন্ধ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৬৯ জন হিন্দু এবং ১২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। তাই এদিন শিলচর শ্মশান ঘাটে কালী মন্দিরে হিন্দুদের জন্য এবং কলেজ রোড সংলগ্ন ফজল শাহ মোকামে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আত্মার শান্তি কামনা করবেন কাগজ কল কর্মীরা। আমরা শিলচর শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, অযাচক আশ্রম, সৎসঙ্গ আশ্রম, কাঠিয়া বাবার আশ্রম সহ প্রত্যেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কাছে অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন ঐদিন আমাদের সহকর্মীদের বিদেহী আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন। উপত্যাকার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমাদের অনুরোধ ঐদিন প্রত্যেকে অন্তত একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করবেন।”
এদিকে ন্যাশনাল কোম্পানি লো ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি) আজ কাছাড় এবং নগাও কাগজ কলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার কথা ছিল, তবে সেটা পিছিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। দুটো কাগজ কল পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় ৮ বার তাদের শুনানি পিছিয়েছে এনসিএলটি। মঙ্গলবার আরেক দফা শুনানির তারিখ ছিল তবে সেটা তিন দিন পিছিয়ে গেছে।
Comments are closed.