আরও এক হৃদয় বিদারক ঘটনা, দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় নিহত ৮ মাসের শিশুর পিতা
বরাক উপত্যকায় দ্রুতগামী বড় গাড়ির দৌরাত্ম্য কিছুতেই কমছে না। একের পর এক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, তবে চালকদের এতে কিছুই আসে যায়না। মঙ্গলবার পাথারকান্দি বাইপাসে এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ মাসের শিশুর পিতা, এবারও ভিলেন সেই দ্রুতগামী চার চাকার গাড়ি। মৃত ব্যক্তির নাম আব্দুল কুদ্দুস, বয়স পঁচিশের কাছাকাছি, পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়ি আছিমগঞ্জ এলাকার টিলাগাঁওয়ে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে নিজের বাইকে চড়েই বাইপাস রোড হয়ে পাথারকান্দি যাচ্ছিলেন। সড়কটি সোজা এবং গাড়িগুলো অনেক দ্রুত গতিতে চলাচল করে, হঠাৎ করেই অপর দিক থেকে একটি ডাম্পার দ্রুতগতিতে এসে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে বাইক সহ চালক অনেকটা দূরে ছিটকে গিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েন এবং অত্যন্ত গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পাথারকান্দি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য সহ একটি ৮ মাসের ছোট্ট মেয়ে রয়েছে। ঘটনায় পরিবারের লোকেরা একেবারে ভেঙে পড়েছেন। একই বাইপাসে গত কিছু দিনে আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেকের প্রাণ গেছে, কিন্তু কোনভাবেই এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো কিভাবে কম করা যায় সে সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসছে না।
যুবকের মৃত্যুর পরে এলাকাবাসীরা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশের একটি দল এলাকায় এসে গাড়ি এবং ডাম্পার তুলে নিয়ে যায়। এদিকে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই বাইপাসে একটি জোরে আওয়াজ আসে এবং দেখা যায় ছিটকে গিয়ে এক যুবক বাইক সহ পড়ে গেছেন। গাড়ির চালক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এলাকাবাসীরা তাকে আটকাতে সমর্থ হন।
করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার মায়াঙ্ক কুমার জানিয়েছেন, পাথারকান্দি বাইপাস এলাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বেরিকেট বসিয়েছেন, তবে সমস্যা সমাধান করতে আরও কিছু বিষয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “বাইপাসের রাস্তা ভালো হওয়ায় স্বভাবতই গাড়ির স্পিড বেড়ে যায়। এছাড়া রাস্তাটি আঁকাবাঁকা নয় সোজা, এতে যানবাহনের গতি অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে এটা মূল সমস্যা নয়, কেননা এমন রাস্তা দেশের অনেক জায়গায় রয়েছে। আমরা এলাকায় চলাচলকারী গাড়ি এবং বাইক দুটোরই কাগজপত্র যাচাই করছি। অনেকেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না পেয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন, এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। শুধুমাত্র চারচাকা নয়, বাইকের চালকরাও নিজেদের সুরক্ষার কথা একেবারেই ভাবেন না, বার বার বললেও তারা হেলমেট ব্যবহার করেন না, অনেকের লাইসেন্স পর্যন্ত থাকে না। এসব ব্যাপারে আমরা আগামীতে আরো কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছি। তবে শুধুমাত্র আমরা কাজটি করব এবং সাধারণ মানুষ নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে ভাববেন না এমনটা হলে চলবে না।”
Comments are closed.