Also read in

এ ও এর দেওয়া চিঠিতেই সাফ হয়ে গেল একগুঁয়েমি মনোভাব, বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও পর্দার আড়ালে সুবিমল ধর!

যেমনটা প্রত্যাশা ছিল, তাই হল। ‌শনিবার সকালে অসম অলিম্পিক সংস্থার (এ ও এ) চিঠি শিলচর ডিএস এতে এসে পৌঁছানোর সঙ্গেই পুরো চিত্রটা আরো পরিষ্কার হয়ে গেল। এ ও এ যে পুরোপুরি বেআইনিভাবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করেছে সেটা সেই চিঠিই প্রমাণ করে দিল।

ইমেইল মারফত পাঠানো চিঠিতে তিনটি কারণের উল্লেখ করে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিলের কথা বলা হয়েছে। তবে এই তিনটি পয়েন্টই ‘ভ্যালিড’ নয়। অসম অলিম্পিক সংস্থার কাছে যে কোনও ভ্যালিড পয়েন্ট নেই, সেটা আরো আগেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল। প্রমাণ দিয়েছিলেন খোদ অসম অলিম্পিক সংস্থার সচিব লক্ষ্য কোওর। শাসকগোষ্ঠীর ৫-৬ জনের অভিযোগের ভিত্তিতেই যে পুরো গল্পটা সাজানো সেটাতে এ ও এর চিঠিই সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছে।

গত বছর নভেম্বরে বরাক বুলিটিনে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে অসম অলিম্পিক সংস্থার সচিব চিঠিতে উল্লেখ করা তিনটি পয়েন্ট নিয়েই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করার কথা বলেছিলেন। তাহলে পুরো বিষয়টা কি প্রি প্ল্যান্ড? সেই সাক্ষাৎকারে এ ও এ সচিব কাছাড় স্পোর্টস ফোরামকে শিলচর ডি এস এর বিকল্প ভাবনা হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। এজন্যই কি এ ও এ পুরোপুরি বেআইনিভাবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছে?

শনিবার শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এ ও এ যে চিঠি পাঠিয়েছে তাতে তিনটি কারণ উল্লেখ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার যে বিজিএম সভা হয়েছিল, সেটা পুরোপুরি অসাংবিধানিক। ফলে যে নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল সেটা অবৈধ।

দুই নং পয়েন্ট হচ্ছে, জিবিতে পাশ হওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর এস জি এম ডেকে অসাংবিধানিকভাবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের কুড়ি সদস্যর সদস্য পদ বাতিল করে। এবং তিন, অসম অলিম্পিক সংস্থা নিয়ে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা মিডিয়ার সামনে অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে। যা মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশ হয়। মূলত এই তিনটি কারণের জন্যই শিলচর এর সদস্যপদ বাতিল করেছে অসম অলিম্পিক সংস্থা। চিঠিতে তেমনি উল্লেখ রয়েছে।

এ ও এর দেওয়া চিঠিতে আরও একটা বিষয় উল্লেখ রয়েছে। সেটা হচ্ছে শিলচরের খেলাধুলা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় তার জন্য তিন জনের এক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছেন এ ও এর সহ-সভাপতি ঋতুবরন শর্মা, করিমগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি অমলেশ চৌধুরী এবং হাইলাকান্দি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব শৈবাল সেনগুপ্ত। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে তিন সদস্যের এই বিশেষ কমিটি গঠন করে দিল এ ও এ।এতদিন শিলচর ডি এস এ অসম অলিম্পিক সংস্থার সদস্য ছিল। তবে এখন আর নেই। এর অর্থ শিলচরের ওপর এ ও এর এখন আর কোনো এক্তিয়ারই নেই। নেই কোনো অধিকার। তাহলে আবার কিসের জন্য এই কমিটি গঠন?

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যে বিজিএম এর কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে সেটা ডেকেছিলেন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তৎকালীন সচিব সুবিমল ধর। সেই অনুসারে অসাংবিধানিক কাজটি করেছিলেন শিলচর ডি এস এর প্রাক্তন সচিব। এ ও এ সচিব বরাক বুলেটিন কে এমনটাই জানিয়ে ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, সুবিমল ধরকেই সংবিধান সংশোধন করে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভা ডাকতে বলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সুবিমল বাবু কিন্তু আবার এ ও এর কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। অর্থাৎ যার হাত ধরে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল তিনি সুবিমল ধর। অথচ একদিকে যখন অসম অলম্পিক সংস্থা ও শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সম্মুখ সমরে, আশ্চর্যজনক ভাবে তখনো পর্দার আড়ালেই থেকে গেছেন সুবিমল বাবু।

এ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে সুবিমল ধর বলেন, ‘দেখুন, আমায় এসবে জড়াবেন না। আমি এখন আর শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব নই। গত দু’বছর এ ও এ শিলচর ডি এস এ কে কি চিঠি দিয়েছে, বা শিলচর কি জবাব দিয়েছে, সেটা আমার জানা নেই। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।’ এ ও এর কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য হয়েও আপনি কিছুই জানলেন না? এর জবাবে সুবিমল বাবু বলেন, ‘অসম অলম্পিক সংস্থার সভায় আমারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিবারের এক সদস্য অসুস্থতার কারণে আমি যেতে পারিনি।’ এ ও এ সচিব প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন সুবিমল ধরের কার্যকালে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা অসাংবিধানিক সভা ডেকে ছিল। তাহলে নিজের সংস্থার একজন সদস্যের সঙ্গে এতদিন সমস্যাটা নিয়ে আলোচনা করলেন না কেন লক্ষ্য কোওর? সুবিমল ধরই বা কিসের জন্য এ ও এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন? এতো কিছু হয়ে গেল অথচ এ ও এ সচিব এবং সুবিমল ধরের মধ্যে কোনো আলোচনাই হলো না?

শিলচরের একজন প্রতিনিধি হিসাবে সুবিমল ধরের কি উচিত ছিল না এ ও এর কাছে পুরো ঘটনাটা তুলে ধরা। কারণ তিনিই তো বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। এর দায় তিনি কিভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন? তিনিই তো শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব হিসাবে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সভার ডাক দিয়েছিলেন। এতকিছুর পরও যখন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কে টার্গেট করা হলো, অপমান করে সদস্য পদ বাতিল করা হলো তখনও তিনি কিসের ভিত্তিতে অসম অলিম্পিক সংস্থার একটি পদ আঁকড়ে বসে রয়েছেন? নাকি তিনিও সব জেনেশুনে দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন?

Comments are closed.