Also read in

এস এম সি এইচে নিউরো সার্জন নিয়োগ: "দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো," ডা: বাবুল বেজবরুয়া

শিলচর মেডিকেল কলেজে একজন নিউরোসার্জন নিয়োগ করার দাবি দীর্ঘদিনের। মেডিকেল কলেজে নিউরো সার্জারি বিভাগে একজন সার্জনের দাবি দীর্ঘদিন থেকে করে আসছিলেন উপত্যকার সাধারণ মানুষ। এবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। শিলচর মেডিকেল কলেজে আসছেন একজন নিউরোসার্জন। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিউরোসার্জন ডা: সম্বুদ্ধ ধরকে মেডিকেল কলেজে নিয়োগ করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। আসলে শিলচর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: বাবুল বেজবরুয়া নিউরোসার্জন হিসেবে সম্বুদ্ধ ধরের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। গতকাল তার সেই প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

এর আগেও শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একজন নিউরোসার্জন নিয়োগের জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করা হলেও ডাক্তাররা এখানে এসে কাজে যোগ দিতে অস্বীকার করছিলেন। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: বাবুল বেজবরুয়া জানান, মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাঃ এসএস ধর তার কাছে এই প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আমায় জানান সম্বুদ্ধ ধর নিউরোসার্জন হিসেবে যোগ দিতে ইচ্ছুক, তবে তার কিছু শর্ত রয়েছে। এই শর্ত গুলি মেনে নিলেই তিনি মেডিকেল কলেজে নিউরোসার্জন হিসেবে যোগ দিতে রাজি। এমন প্রস্তাব পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গেই কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি ও অভিভাবক মন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের সামনে পরিস্থিতি তুলে ধরি। এরপর কাছাড়ের জেলাশাসক এবং অভিভাবক মন্ত্রী এটা অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।’

মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে নিউরোসার্জন হিসেবে ডা: সম্বু্দ্ধ ধরকে নিয়োগ করার জন্য আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি কথা দিয়েছিলেন, যদি আমরা একজন ডাক্তার খুঁজে পাই তাহলে তিনি ব্ল্যাংক চেকে সই করতেও রাজি। তিনি বরাক উপত্যকার ৪০ লক্ষ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করলেন। সেই সঙ্গে নিজের দেওয়া কথাও রাখলেন।’

প্রাথমিকভাবে ডা: সম্বুদ্ধ ধরের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করা হবে। তারপর আবার চুক্তি নবায়ন করা হবে। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আশাবাদী, নিউরোসার্জনের নিয়োগের ফলে মেডিকেলের নিউরো বিভাগকে ধীরে ধীরে ভালো আকার দেওয়া যাবে। তিনি ইতিমধ্যে একটি বিশেষ ইউনিট নির্ধারণ করেছেন। যেখানে ২০ টি শয্যা, একটি বিশেষ অপারেশন থিয়েটার থাকবে। তিনি বলেন, ‘সার্জারি বিভাগের দুজন শিক্ষক চিকিৎসক এবং দুইজন নিবন্ধক নিয়ে একটি দল গঠন করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুরুর দিকে আমরা সপ্তাহে দু’বার ওপিডি করব।’

স্নায়বিক সার্জারি বা মস্তিষ্কের সার্জারি নামেও পরিচিত স্নায়ু সার্জারি। মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, কেন্দ্রীয় এবং পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র সহ স্নায়ুতন্ত্রের যে কোনও অংশকে প্রভাবিত করে এমন রোগের প্রতিরোধ, নির্ণয়, অস্ত্রোপচার চিকিত্সা ও পুনর্বাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত মেডিকেল বিশিষ্টতা। একবার ডা সম্বু্দ্ধ ধর যোগদান করলে, এসএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ এই উন্নত সার্জারিগুলি করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলির একটি তালিকা তৈরি করবে। এবং সরকারের কাছে সে অনুসারে একটি প্রস্তাব পেশ করবে।
বিভিন্ন শর্তাবলীর মধ্যে একটি হলো, ডা: ধরকে বিকেল পাঁচটার পর বেসরকারি হাসপাতালে প্র্যাকটিসের অনুমতি দেওয়া হবে। তাছাড়া, তার স্ত্রী, যিনি অপথালমোলজিতে ডিপ্লোমা ধারক, বিদ্যমান নির্দেশিকা অনুযায়ী জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে চুক্তি ভিত্তিতে নিযুক্ত হতে পারেন। এছাড়াও, ধর বলেছিলেন যে তিনি প্রতি মাসে চার লক্ষ টাকা পরামর্শ ফি নেবেন। বেজবরুয়া বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা পূরণে সম্মত হয়েছি। আমরা অন্যান্য ডাক্তারদের সঙ্গে একই রকম আলোচনা করেছিলাম। তবে তাদের অধিকাংশই ১৫-২০ লক্ষ টাকা চাইছিলেন। সে অনুযায়ী ডক্টর ধর তেমন আহামরি কিছু দাবি করেননি। তাই কেবিনেট দ্রুতই এটা অনুমোদন দিয়ে দেয়।’

এসএমসিএইচে প্রতিদিন যেসব নিউরোসার্জিক্যাল ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয় তার মধ্যে বেশিরভাগই দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত ঘটনা, মেরুদণ্ডে আঘাত, মস্তিষ্কের স্ট্রোক। যদিও চুক্তি অনুযায়ী ডা: ধরের কাজের সময় বিকাল ৫:০০ টায় শেষ হবে তবে কোন ইমারজেন্সি থাকলে তাকে পাঁচটার পর ও পাওয়া যাবে। অধ্যক্ষ বেজবরুয়া বলেন, ‘দেখুন, তিনি বিভাগের একমাত্র ব্যক্তি থাকবেন না। অন্যরাও থাকবেন। জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন। আর যদি অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন হয়, তাহলে তো ডক্টর ধর থাকবেন। আমরা এটাকে সমস্যা হিসেবে দেখছি না।’

এ বিষয়ে কাছাড়ের জেলা প্রশাসক কীর্তি জল্লি শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিউরোলজিস্ট নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগের জন্য কাছাড়ের অভিভাবক মন্ত্রী অশোক সিংহল, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘কাছাড়ের অভিভাবক মন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘলএনিয়ে ব্যক্তিগত আগ্রহ নিয়েছিলেন।’ কাছাড় জেলার দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান জেলাশাসক।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট অভিজিৎ স্বামী এবং ভাইস প্রিন্সিপাল ভাস্কর গুপ্ত ও উপস্থিত ছিলেন।

Comments are closed.