Also read in

উদ্দাম মিজো সন্ত্রাস: অসমের জমিতেই কাছাড়ের ডিসি-এসপিকে বন্দুক দেখিয়ে সরে যেতে বললো মিজো বাহিনী

শুক্রবার রাতে মিজোরাম সীমান্ত সংলগ্ন অসমের জমিতে একটি সরকারি বিদ্যালয় বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতিরা। শনিবার এলাকা পরিদর্শন করতে যান জেলাশাসক কীর্তি জল্লি এবং পুলিশসুপার বিএল মিনা। তবে সেখানে সশস্ত্র মিজো দুষ্কৃতীরা ডিসি এবং এসপির দিকে বন্দুক দেখিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। কাছাড়ের মাটিতে কাছাড়ের ডিসি এবং এসপিকে এভাবে বন্দুক দেখাচ্ছে মিজোরামের দুষ্কৃতীরা তাহলে সাধারণ অসমবাসীদের কি অবস্থা হচ্ছে, এটা ভাবার বিষয়।

শুক্রবার রাত দুটো নাগাদ খুলিছড়া এলাকায় আপার পাইনম আপগ্রেডেড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বোমা হামলা চালায় দুষ্কৃতিরা। এতে বিদ্যালয়টি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগেও একটি বিদ্যালয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল, এটি দ্বিতীয় ঘটনা। রাজ্য সরকারের রেকর্ড অনুযায়ী আপার পাইনম আপগ্রেডেড এলপি স্কুল ২০০৯ সালে সরকারের অনুমোদন পায়। স্কুলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৮২১০৩২৮৩০১, এটি অবশ্যই অসম রাজ্যের সীমানার ভেতরে কাছাড় জেলার একটি সরকারি বিদ্যালয়।

যেহেতু কাছাড়ের জমিতে থাকা বিদ্যালয় বোমা মেরে উরিয়ে দেওয়া হয়েছে, জেলাশাসক কীর্তি জল্লি এবং পুলিশসুপার বিএল মিনা সহ কয়েকজন সরকারি আধিকারিক এলাকা পরিদর্শন করতে যান। তবে সেখানে তাদের বাধা দেয় মিজো বাহিনী। রাজ্যের পুলিশ নয়, সাধারণ মানুষ হাতে অস্ত্র নিয়ে তাদের শাসাচ্ছে। একে মিজো সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।

 

A young Mizo girl holding a sniper just outside the hut where DC Cachar and SP Cachar were sitting. Photograph: Ahadul Ahmed

 

জেলাশাসক কীর্তি জল্লি পরিদর্শন শেষে বলেন, “যে বিদ্যালয়ে বোমা মারা হয়েছে, সেটা কাছাড়ের জমিতে রয়েছে। নরসিংপুর শিক্ষাখন্ডের অধীনে মিড-ডে মিল সরবরাহ করা হয়। অথচ মিজো বাহিনী দাবি করছে এটা নাকি তাদের জমিতে রয়েছে। তারা আমাদের জেলার বিদ্যালয়ের বোমা মেরে ক্ষতি করেছে। আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি, কারা কাজটি করেছে এবং এর পিছনে কি উদ্দেশ্য রয়েছে।”

জেলাশাসক সর্বাবস্থায় এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঘটনায় কোনও ব্যক্তি আহত হননি, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এর আগে অযথা রেগে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, জেলার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমার অনুরোধ।”

 

 

Civilians with guns outside a house inside Assam’s territory. Photograph: Ahadul Ahmedবোমা মেরে উরিয়ে দেওয়া বিদ্যালয়টি পর্যবেক্ষনের জন্য এদিন বিকেলে মিজোরামের পক্ষ থেকে একটি দল পাঠানো হয়। এতে এলাকার মানুষ প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “মিজোরামের পক্ষ থেকেই আমাদের এলাকায় থাকা জেলায় বোমা মারা হবে, আবার তাদের রাজ্যের ফরেনসিক দল এসে সেটা পরীক্ষা করবে, এটা কেমন কথা। আমরা কি আসামে থাকি না মিজোরামে? রাজ্যের পুলিশ আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছে না, জনপ্রতিনিধিরা শুধু বাইরে থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং এলাকা পরিদর্শন করে ফেসবুকে ফটো দিচ্ছেন। আসল দুঃসময়ে আমরা কাউকে পাশে পাই না। অথচ যখন মিজোরাম বাহিনী আমাদের উপর হামলা করে তাদের সহায়তা করে সেই রাজ্যের পুলিশ। আমরা এখানে বন্দিদশায় জীবন কাটাচ্ছি।”

ডিআইজি দিলীপ কুমার দে জানিয়েছেন, দুই পক্ষেরই ফরেনসিক দল ক্ষতগ্রস্ত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করবে।

সীমান্ত এলাকায় এখন জঙ্গিপনা সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। কাছাড় জেলাশাসক এবং পুলিশ বাহিনী যে রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয় দেখতে যাচ্ছিলেন সেখানে মিজোরা তাদের আটকে দেয়। বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে তারা এলাকায় পৌঁছন। মিজোরা পুলিশের সামনে জেলাশাসকের দিকে বন্দুক দেখাতে পারলে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিরাপদ, এই প্রশ্নের উত্তর অসমের প্রশাসনের কাছে নেই।

 

Armed civilians holding rifles and standing near Cachar DC and SP. Photograph: Ahadul Ahmed

 

যে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ঘটনার পর তারা বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন তবে সেখানেও তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “যে বিদ্যালয়ের আমি প্রধান শিক্ষক সেখানে আমাকে যেতে বাধা দিচ্ছে দুষ্কৃতিরা। তারা আমার বিদ্যালয় বোমা মেরে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে অথচ আমি দেখতে যেতে পারছি না। মিজোরামের পুলিশ এবং মানুষ বিদ্যালয়টিকে ঘিরে রেখেছেন। সেখানে অসমের কোনও মানুষের যাওয়ার অনুমতি নেই।”

 

Forensic team deployed by Mizoram collecting evidence from the crime scene. Photograph: Ahadul Ahmed

সাধারণ প্রতিবাদ বা জমি দখল একদিকে, কিন্তু বোমা মেরে সরকারি বিদ্যালয় উড়িয়ে দেওয়া একটি সরাসরি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। ২৪ অক্টোবর একই এলাকায় আরেকটি বিদ্যালয় এভাবে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হলো। শেষমেষ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া এলাকা পরিদর্শন করলেন। কেন্দ্র সরকারকে জানানো হলো এবং তারা সশস্ত্র সেনাবাহিনী পাঠালেন। তবে মিজোরামের পক্ষ থেকে একের পর জঙ্গী কার্যকলাপ চলছে, আর অন্যদিকে তারা অসমের উপর দোষারোপ করছে।

Here are a few images clicked by Ahadul Ahmed that exposes how Mizo miscreants are trying to terrorize the people and officers of Assam

Comments are closed.