Also read in

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা: নাতানপুরের প্রায় ১৫০টি পরিবার জিপি সদস্য কর্তৃক প্রতারিত ; "প্রতিটি নির্বাচনে এই সরকারকে ভোট দেওয়া সত্ত্বেও মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত"

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর দেওয়ার নামে গাঁও পঞ্চায়েতের স্থানীয় প্রতিনিধিরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী একটি গ্রামকে প্রতারিত করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কাছাড়ের কালাইন এলাকার জালালপুর জিপির অন্তর্গত নাতানপুর গ্রামে। এই সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই বসবাস করে এবং অনেকের মাথার উপর সঠিক অর্থে ছাদ ও নেই। যখন এই দারিদ্র্য সীমার নীচের গ্রামবাসীরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-র জন্য আবেদন করেছিল, তখন তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা তাদের কাছে নগদ চেয়ে নিয়েছিল কিন্তু তবুও তাদের একটা মাথা গোঁজার ঠাই পাওয়ার স্বপ্ন অধরা রয়ে গেল।

দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী লোকেরা কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা PMAY প্রকল্পের অধীন।এই প্রকল্পটী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চালু করা । এই প্রকল্পের আওতায় আসা সুবিধাভোগীদের আবাস নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। স্থানীয় প্রতিনিধি বা গাঁও পঞ্চায়েত দ্বারা সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়। প্রায়শই অভিযোগ আসে যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নাম তালিকাভুক্তির বিনিময়ে টাকা চান; ঠিক এমনটাই ঘটেছে নাতানপুর গ্রামে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি কালাইনের নাতানপুরের গ্রামবাসীরা বহু বছর ধরে মৌলিক আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গাঁও পঞ্চায়েত সদস্যরা তাদের অনেকবার আবাসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করেননি। এদের কয়েকজনের ঘর মাটি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি এবং কয়েকটা টিনের চালার‌ । তবে অনেকেই ধানের খড় দিয়ে তৈরি বাড়িতে থাকেন, কিছু বাড়িতে শুধু খড়ের চালই আছে ঘরের বেড়া ও নেই। এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় এসব ঘরে রাত কাটানোর কল্পনা করা ও যথেষ্ট পীড়াদায়ক।

তাদের প্রতি অমানবিক প্রতারণার ব্যাপারে গ্রামবাসীরা এতোদিন নীরব ছিলেন কিন্তু এখন তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে যথেষ্ট হয়েছে । তাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য মনিলাল নমশুদ্র এই গ্রামে বসবাসকারী প্রায় ১৫০ টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুবিধাভোগী তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য ৫০০ থেকে ১২,০০০ টাকা দাবি করেছিলেন। জিপি সদস্যের এই বর্বর লোভের কথা বলতে গিয়ে এক গ্রামবাসী বলেন, “আমরা তফসিলি বর্ণের মানুষ, যখন আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করতে যায় এবং সন্ধ্যায় দৈনিক মজুরি নিয়ে ফিরে আসে, তখন আমরা রাতের খাবারের জন্য চাল কিনতে যাই। এই অবস্থার মধ্যে বসবাস করেও আমরা জিপি সদস্যকে অর্থ প্রদান করেছি। কিন্তু যখন তালিকা ঘোষণা করা হয়, তখন দেখা যায় আমাদের কারও নাম নেই।”

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “বন্যার সময় আমাদের ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল এবং আমরা বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পঞ্চায়েত বা কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি আমাদের কাছে পৌঁছান নি। ইন্দিরা আবাস হোক বা এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস, কিছুই আমাদের গ্রামে পৌঁছায় না।”

নির্বাচনের সময় ভোট দেওয়া সত্ত্বেও মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত কেন, এটাই তাদের প্রশ্ন।

Comments are closed.

error: Content is protected !!