বরাকে অতিরিক্ত অক্সিজেনের যোগান দেবে সরকার, ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্ত হবে, বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কঠিন সময়ে যাতে বরাক উপত্যকায় করোনা আক্রান্তরা চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তাই তিন জেলার জন্য বিশেষভাবে অক্সিজেনের যোগান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, সোমবার সন্ধ্যায় শিলচর সিভিল হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এমনটাই জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত। তিনি বলেন, “উপত্যকায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করবে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আপাতত ১০০ আইসিইউ শয্যা রয়েছে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এখন যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের যোগান রয়েছে। তবে যদি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তখন যাতে রোগীরা বঞ্চিত না হন তার জন্য বিশেষ স্টক রাখার কথা ভাবছে সরকার।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার বরাক উপত্যকা সফরে এসেছেন কেশব মহন্ত। সোমবার দিনের বেলা প্রথমে হাইলাকান্দি এবং তারপর করিমগঞ্জের সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দেখেন এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। সরকার পর্যাপ্ত পরিকল্পনা বানিয়ে কাজের সুযোগ করে দিলেও পরিকাঠামোগত উন্নতি কেন হয়নি! এনিয়ে আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন তিনি। পিএম কেয়ার ফান্ড থেকে দুই জেলায় সিভিল হাসপাতালে আইসিইউ পরিষেবা করে তোলার জন্য পর্যাপ্ত মেশিন পাঠানো হয়েছে তবু পরিষেবা শুরু হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী আশ্বাস দেন অতিসত্বর কাজ শুরু হবে।
এরপর শিলচরে এসে সোজা চলে যান সতীন্দ্র মোহন দেব সিভিল হাসপাতালে, তার সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি অনুরাগ গোয়েল, ডিএমই অনুপ কুমার বর্মন, ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিসেস রথীন্দ্র ভুঁইয়া, শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী সহ বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকরা। প্রথমেই কোভিড ওয়ার্ডের বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে থাকা রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। ভেতরে থাকা রোগীরা নিজেদের অনুভূতি তাদের তুলে ধরেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, সিভিল হাসপাতালে সুপার ডাঃ জিতেন সিংহ সহ অন্যান্যরা। চিকিৎসা পরিষেবা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে কোনও অসুবিধা না থাকলেও, খাবার নিয়ে রোগীদের অসুবিধা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন তাদের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া সহ জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের প্রত্যেক আধিকারিকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটি বৈঠক করেন। তাদের নির্দেশ দেন কোনও ব্যক্তি যাতে সহজে হোম আইসোলেশন না পান। যাদের বাড়িতে রোগী রাখার মতো পরিকাঠামো রয়েছে এবং রোগীর থাকার মত অবস্থা রয়েছে তাদেরকেই হোম আইসোলেশন দেওয়া হবে। সংবাদমাধ্যমের সামনে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনও ব্যক্তিকে হোম আইসোলেশন দেওয়ার আগে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা দুটো দিক যাচাই করে দেখবেন, আক্রান্ত ব্যক্তিটি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মতো অবস্থায় আছেন কিনা এবং বাড়িতে তার চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো রয়েছে কিনা। এরপরেই বাড়িতে থাকার অনুমতি মিলবে। চা-বাগান সহ বিশেষ কিছু এলাকায় একেবারেই হোম আইসোলেশন থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে চিকিৎসা পরিকাঠামো দুর্বল, সেই এলাকাগুলোয় হোম আইসোলেশন দেওয়া হবে না। এর কারণ হচ্ছে অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসার জন্য থাকছেন এবং সেখানে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। যখন চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসছেন তাদের বাঁচানোর মত অবস্থা থাকছে না।”
এই বছর করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের অনেক বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “সারা রাজ্যের সঙ্গে বরাক উপত্যকায়ও অক্সিজেনের যোগান পর্যাপ্ত রয়েছে। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইতিমধ্যে তিনটি প্লান্ট কাজ করছে। প্রয়োজনে এর সংখ্যা বাড়বে এবং করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতেও অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাতে অক্সিজেনের যোগান ব্যাহত না হয় তার জন্য বিশেষ স্টক রাখা হবে।”
সিভিল হাসপাতালে সম্প্রতি গোপন কক্ষে ভ্যাকসিন প্রদান এবং এতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে, ফলে আর্থিক লেনদেনের প্রসঙ্গ আসতেই পারে না। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে আমরা তদন্ত করব। যদি কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়, পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এছাড়া তিনি বলেন, “পরিস্থিতির যেদিকে এগোচ্ছে, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ হবে। যার যে কাজ বাকি রয়েছে আগামী দু’দিনের মধ্যে সেরে নিন, কারণ একবার পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে অনুরোধ করলেও অনুমতি মিলবে না।”
মঙ্গলবার সকালে তিনি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। এরপর গুয়াহাটি ফিরে যাবেন।
Comments are closed.