সীমান্ত-বিবাদ: নিষ্ফলা গৃহ-সচিব স্তরের বৈঠক, রোজ রাতেই এগিয়ে আসছে মিজোরাম, অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি এলাকাবাসীর
অসম এবং মিজোরাম সীমান্ত সংঘাত নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তপ্ত কাছাড়, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জের অসম-মিজোরাম সীমান্ত এলাকা। এর মধ্যে সবথেকে বেশি উত্তেজনা কাছাড় জেলার লায়লাপুর সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিরাতেই একটু একটু করে এগিয়ে আসছে মিজোরামের সীমান্ত। পুলিশের সহায়তায় সাধারণ মানুষ কাজটি করছেন। মিজোরামের গৃহসচিব সরাসরি না মানতে না চাইলেও এটুকু স্বীকার করেছেন তারা অসমের জমিতে পুলিশ বাহিনী পাঠিয়েছেন। সীমান্ত সুরক্ষার দোহাই দিয়ে তারা অসমের জমিতে তাদের বাহিনী মোতায়েন করেছেন। অসমের গৃহসচিব জি ডি ত্রিপাঠি বৈঠক শেষে বলেন সীমান্ত বিবাদ নিয়ে কোন কথাই হয়নি, আপাতত এলাকায় শান্তি বজায় রাখা তাদের লক্ষ্য।
গৃহসচিব জ্ঞানেন্দ্র দেব ত্রিপাঠি এদিন একেবারে আমতা আমতা করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা সীমান্ত বিবাদ নিয়ে কথা বলতে আসিনি, এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্যেই এই বৈঠক হয়েছিল। তারা আমাদের এলাকায় পুলিশ পাঠিয়েছেন, তবে কথাবার্তার মধ্যে আগামীতে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
কবে পুলিশ বাহিনী সরানো হবে এবং তিন কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণমুক্ত হবে কিনা, অথবা আগামীতে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হবে কিনা এসব ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি। অথচ বৈঠক আয়োজন করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মিজোরাম থেকে অসমের জমি অধিগ্রহণের সমস্যা সমাধান। এদিক থেকে বলা যায়, পুরোপুরি নিষ্ফলা হয়েছে বৈঠকটি। বৈঠকে অসম সরকারের প্রতিনিধিরা সমস্যা সমাধান করতে অন্তত ব্যর্থ হয়েছেন।
আসাম মিজোরাম সীমান্ত সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে নানা স্তরে বৈঠক হয়েছে, তবে সমস্যা সমাধানের পথে এগোয়নি। দুই রাজ্যের গৃহসচিব সহ অন্যান্য আধিকারিকরা সরাসরি বৈঠকে উপস্থিত থেকেও সমস্যার সমাধানসূত্র বের করতে পারেননি। অসমের তরফে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন গৃহসচিব জ্ঞানেন্দ্র ত্রিপাঠী, স্পেশাল ডিজিপি (সীমান্ত) মুকেশ আগারওয়াল, ডিআইজি দিলীপ দে, কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি ও পুলিশসুপার বিএল মিনা সহ অন্যান্যরা। মিজোরামের তরফে বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোম সেক্রেটারি পি লালবিয়াকসাঙ্গি, আইজিপি এল এইচ সানলিয়ানা, ডিআইজি পিইউ লালবিয়াকথাঙ্গা সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
পি লালবিয়াকসাঙ্গি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুধুমাত্র রাস্তা খুলে দিয়ে ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক করার কথাই উল্লেখ করেন। সীমান্ত বিবাদ সমস্যা মেটানো, অধিগ্রহণ আটকানো এসব ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘নো কমেন্ট’। পড়ে জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি অতিথি হিসেবে শিলচর সার্কিট হাউসে আসেন। সেখানে আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কিছুটা বয়ান পাল্টে আশ্বাস দেন, আলোচনার মাধ্যমে আগামীতে অসমের অধিকৃত এলাকা থেকে মিজোরামের পুলিশবাহিনী পিছু হটানো হবে। তবে এটা কবে করা হবে, কতটুকু পিছনে যাবে তারা এব্যাপারে কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি।
বৈঠককে ঘিরে লায়লাপুর এলাকার মানুষ উৎসাহিত ছিলেন। কয়েকশো এলাকাবাসী সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন বৈঠকের ফলাফল কি আসে এনিয়ে। তারা বিকেলে অত্যন্ত নিরাশ হন এবং স্পষ্ট জানিয়ে দেন যতক্ষণ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কোনও ট্রাক লায়লাপুর হয়ে মিজোরামে ঢুকতে পারবে না।
তারা বলেন, “প্রতি রাতে আমাদের জমিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মিজোরাম বাহিনী। পুলিশ সহ সাধারণ মানুষের হাত ও এতে রয়েছে। অসমের এলাকার কেউ যদি অস্ত্র নিয়ে মিজোরামের জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করতেন, তাহলে তাকে হয়তো পুলিশ জেলে পুরে দিত। অথচ মিজোরামের পুলিশ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করে। তারা আমাদের গুলি করে মারার ভয় পর্যন্ত দেখায়। একের পর এক সরকারি আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধি এলাকা পরিদর্শন করেন, কিন্তু সমস্যা সমাধানের সূত্র বেরিয়ে আসেনা। আমরা আশা করেছিলাম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে হয়ত সমাধানসূত্র বের হবে। অন্তত যেটুকু জমি অধিগ্রহণ হয়েছে এর থেকে আগে মিজোরামের বাহিনী আর এগোবেনা। তবে আমরা নিরাশ হয়েছি, সঙ্গে ভয় রয়েছে, হয়তো আগামীতে আরও জোরদারভাবে অধিগ্রহণ চালাবে মিজোরামের পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ। তারা অনেকেই বলেছে অন্তত ধলাই থানা পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা হবেই। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কথায় কথায় বলেন, অসমের জমি তার কাছে মূল্যবান এবং তিনি সেটা রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিতেও পারেন, সেই রাজ্যে আক্ষরিক অর্থে জমি এবং মানুষের জীবন একেবারেই মূল্যবান নয়। তারা যখন আমাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ, আমরা নিজেরাই প্রতিবাদ করব। এমনিতেই আমাদের হারানোর কিছু থাকবে না, কারণ প্রতিবাদ না করলে জমি অধিগ্রহণ আরও দ্রুত হবে। তাই আপাতত কোনও ট্রাক মিজোরামে ঢুকতে আমরা দেব না, প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তোলা হবে। যদি আমাদের পুলিশ বাহিনী এই অপরাধে আমাদেরকে মারতে আসে, এর থেকে আর দুর্ভাগ্যজনক কিছু হবেনা।”
Comments are closed.