
শিলচর ডি এস এর সঙ্গে সংঘাতে অসম অলিম্পিক! অনুমোদন বাতিলের হুমকি
যেন ২০১৯ এর ফ্ল্যাশব্যাক! দু’বছর আগে প্রায় এই ধরণেরই একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যখন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন বাতিল করার একরকম হুমকি দিচ্ছিল অসম অলিম্পিক সংস্থা (এ ও এ)। দু বছর বাদে এবার ফের একই হুমকি দিল এ ও এ। তাদের সাফ কথা, দু’বছর আগে তারা যে নীতি নির্দেশিকা দিয়েছিল সেগুলি না মেনে যদি এবার দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করা হয় তাহলে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন বাতিল করে দেবে এ ও এ। এর জন্য সাত দিনের মধ্যে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে জবাব চেয়ে পাঠিয়েছে তারা।
গোটা বিষয়টা বুঝতে হলে একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। সালটা ২০১৯। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। সেই সভায় সংস্থার আজীবন সদস্য পদে যারা রয়েছেন তাদের ভোটাভুটি নিয়ে বেশ ঝামেলা হয়েছিল। ওই সভায় আগের রীতি মেনে সব লাইফ মেম্বারদের-ই ভোটাধিকারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এ ও এ-র দরজায় কড়া নেড়েছিলেন কতিপয় সদস্য।
লাইফ মেম্বারদের ভোটাধিকার ইস্যু নিয়ে ডি এস এর কমিটি সংস্থার সংবিধানের অবমাননা করেছে, এই অভিযোগ জমা পড়ে এ ও এর কাছে। এর জবাবে এ ও এ এক তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল। এ ও এর ভাষ্য ছিল, তাদের কাছে শিলচরের বেশ কয়েকটি ক্লাব অভিযোগ জানিয়েছে, দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় সংবিধানের অবমাননা করা হয়েছে। তাই তারা নির্দেশ দেয় সংবিধান সংশোধন করে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করতে হবে। এর জন্য একটা সময় বেঁধে দেওয়া হয় শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কে। তবে এরপরই করোনা মহামারীর আবির্ভাব ঘটায় সভার আয়োজন করতে পারেনি শিলচর ডি এস এ।
তব গত বছরেরর শুরুর দিকেই এ ও এ-র পরামর্শ মেনে সংবিধান সংশোধনী কমিটি তৈরি করে শিলচর ডি এস এ। পরে করোনার জন্য লকডাউন জারি হওয়ায় প্রক্রিয়াটিতে কিছুটা বিলম্ব হয়। গত বছরের শেষে কমিটি নির্দিষ্ট সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে। এ বছরের শুরুতে যা গভর্নিং বডি অনুমোদন জানায়। পরবর্তীতে বিধানসভা নির্বাচন এবং করোনা পরিস্থিতির জন্য সভা আয়োজন করা যায়নি। ২ অক্টোবর আরও কয়েকটি নির্দিষ্ট সংবিধান সংশোধনীতে সিলমোহর দেয় জিবি। যেসব সংশোধনী প্রস্তাব ৩১ অক্টোবরের বিশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। উল্লেখ্য, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কেই এ ও কে সময়ে সময়ে জানিয়ে গিয়েছে ডি এস এ।
মজার বিষয় হচ্ছে, এ ও এ শিলচর ডি এস এ কে যে চিঠি দিয়েছে সেখানে শুরুতেই বিষয়ের জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। অথচ শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভার দিনক্ষণই এখনো চূড়ান্ত হয়নি ! এর আগে রয়েছে ৩১ অক্টোবরের স্পেশাল জেনারেল মিটিং। সেই মিটিংয়ে সংবিধানে যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে সিলমোহর লাগবে (যদি সবার সম্মতি থাকে)। দু’বছর আগে এ ও এ যে বিষয়টা নিয়ে সংবিধান অবমাননার অভিযোগ তুলেছিল, তার শুদ্ধিকরণের জন্যই কিন্তু সম্প্রতি জিবিতে সংবিধান সংশোধনী এনেছে বর্তমান কমিটি। আর সেটা জিবিতে অনুমোদনও পেয়েছে।
এ ও এর চিঠিতে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি ডিএসএ যেসব ক্লাব ও সংস্থাকে নিজের সদস্যপদ থেকে বাতিল করেছে, তাদের অনেকেই এ ও এর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই এ ও এ-ই কিন্তু দু বছর আগে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে সংবিধান অবমাননার অভিযোগ তুলেছিল। এবার যখন ডি এস এর বর্তমান কমিটি সংবিধান মেনে নিষ্ক্রিয় থাকা ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির সদস্য পদ বাতিল করে দিয়েছে তখন এ নিয়েই প্রশ্ন তুলছে এ ও এ?
আসলে এ ও এর সমস্যাটা এখানেই। শিলচর ডি এস এর বর্তমান কমিটি সংবিধান মেনেই প্রায় কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ বাতিল করেছে। সংস্থার সংবিধানেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যদি কোনো ক্লাব বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা দু’বছর নিষ্ক্রিয় থাকে, অর্থাৎ সংস্থার কোনো ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করে তাহলে এমনিতেই তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। ফলে জিবিতে সর্বসম্মতিক্রমেই এটা পাস হয়েছে।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সম্পূর্ণ একটা আলাদা বডি। তার নিজস্ব একটা সংবিধান রয়েছে। আর এই সংবিধান মেনেই চলে থাকে শিলচর ডি এস এ। তাহলে এখানে কিসের ভিত্তিতে এ ও এ হস্তক্ষেপ করছে? প্রশ্ন আরো রয়েছে। যে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভার দিনক্ষণই ঠিক হয়নি, সেটা নিয়ে আবার এ ও এ চিঠি দিল কেমন করে? শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সদস্য হিসেবে কাকে রাখবে, না রাখবে, সেটা তো সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। এখানে কেউ অভিযোগ করলেই এ ও এ নাক গলাতে পারে কি? মজার বিষয় হচ্ছে, এ ও এ যে চিঠি সংস্থায় পাঠিয়েছে সেটাতে সভাপতি বা সচিবের নাম নেই। চিঠিটা পাঠানো হয়েছে শিলচর ডিএস এর সভাপতি ও সচিবের কাছে। এ ও এ তো ডি এস এর বর্তমান কমিটিকে মান্যতাই দেইনি। তাহলে আবার এই চিঠি কার উদ্দেশ্যে লেখা হলো? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কিসের ভিত্তিতে এ ও এ বারবার ডি এস এর অনুমোদন বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে? আদৌ এ ও এর কি এই ক্ষমতা রয়েছে? শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা দু’বছর আগে এ ও এর কাছে তাদের সংবিধানের কপি চেয়ে ছিল। যাতে করে সে অনুসারে নিজেদের সংবিধানে সংশোধনী আনতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ পর্যন্ত এ ও এ শিলচর ডি এস এ কে তাদের সংবিধানের কপি পাঠায়নি।
Comments are closed.