তারাপুরে উন্মোচিত রাজ্যের প্রথম কারগিল বিজয় স্মারক; যুবসমাজকে দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
তারাপুর ওভারব্রিজের আগে শহরে ঢোকার মুখেই গড়ে উঠেছে কারগিল যুদ্ধের একটি দৃশ্য। নাম ‘কারগিল বিজয় স্মারক’। মুলত শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পালের উদ্যোগে এই স্মৃতিসৌধ বানানো হয়েছে যা উত্তর-পূর্বে প্রথম। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। ইতিমধ্যে রংপুরে মহাসড়কের জিরো পয়েন্টে তার একটি ১০ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি বসানো হয়েছে, সেটাও উত্তর-পূর্বে একমাত্র। রবিবার বিকেলে কারগিল স্মৃতি সৌধ উন্মোচন করেন সেনাবাহিনীর মাসিমপুর স্টেশনের কমান্ড্যান্ট কর্নেল পঙ্কজ যাদব, কার্গিলে শহিদ জওয়ান নন্দচাঁদ সিংহের মা আই বৃন্দা দেবী এবং অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন রাম ভগত। এতে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ রাজদীপ রায় সহ অন্যান্য অতিথিরা।
তারাপুর ইএনডি কলোনি সংলগ্ন এলাকায় এই উপলক্ষে একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠান রাখা হয়। দিলীপ কুমার পাল জানান, কারগিল স্মৃতি সৌধ বানাতে মোট ১৭ লক্ষ খরচ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে৷ বিধায়ক তাঁর নিজের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে দিয়েছেন বাকি ৭ লক্ষ৷ প্রায় সাত মাস সময় লেগেছে স্মৃতি সৌধ গড়ে তুলতে। প্রত্যেকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছেন, ফলে কম সময়ের মধ্যে শিলচর শহরে একটি ঐতিহাসিক সৌধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
কারগিল যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন কাছাড় জেলার নয়ন চাঁদ সিংহ। তার মা আই বৃন্দা দেবী অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে জানান, তিনি এখনও তার ছেলের শহীদ হওয়ায় গর্বিত বোধ করেন। এতে উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তি নতমস্তকে সাধুবাদ জানান। অতিথিরা নিজেদের ভাষণে বারবার শহীদের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেন, “এই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে প্রায় দুই দশক পরেও তিনি বলছেন, ছেলের আত্মবলিদান নিয়ে গর্বিত। আমরা তার মত মাকে নিয়ে গর্বিত।”
কবীন্দ্র পুরকায়স্থ কারগিল যুদ্ধের সময়ে কাছাড় জেলার সাংসদ সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ে অটল বিহারী বাজপেয়ীর কার্যকলাপ খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল তার। অনুষ্ঠানে ভাষণ রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আজ সারা বিশ্ব ভারতবর্ষকে যে সম্মানের চোখে দেখছে সেটা এক সময় ছিল না। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী পৃথিবীর মানচিত্রে ভারতবর্ষকে অনেক উন্নত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার লিগ্যাসি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ দেশের যুবসমাজ ভারতীয় হিসেবে নিজেকে গর্বিত বলছে। এই স্মৃতি সৌধ গড়ে ওঠা এর অন্যতম উদাহরণ।”
সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, “আমি বিভিন্ন শহরে ঘুরেছি এবং নানান স্মৃতিসৌধ দেখে গর্ব বোধ করেছি। কিন্তু আজ আমার শহরে কারগিল স্মৃতি সৌধ গড়ে উঠেছে, কিছুদিন আগে প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি বসানো হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও শহরে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আমি বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল এবং তার সহযোগীদের সাধুবাদ জানাই।”
ডিআইজি দিলীপ কুমার দে বলেন, “আমরা অনেককেই ফুলের বাগান সহ অন্যান্য স্তম্ভ বানাতে দেখি। কিন্তু বরাক উপত্যকায় আজ পর্যন্ত এত বড় কারগিল যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি। একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও আমি এই কাজের জন্য শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পালকে স্যালুট জানাই। এই স্তম্ভ যুবসমাজকে মনে করিয়ে দেবে সেনা জওয়ানরা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করে বাইরের শত্রুদের থেকে আমাদের রক্ষা করছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আভ্যন্তরীণ শত্রুদের থেকে দেশকে বাঁচানো। আমার বিশ্বাস এই স্মৃতিসৌধ দেখে যুবসমাজ দেশের দেশের সুরক্ষা নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হবে।”
পুলিশসুপার বিএল মিনা বলেন, “সাধারণত একটু শীত পড়লে আমাদের অনেক কাপড় চোপড় লাগাতে ইচ্ছে হয়, ঘর থেকে বেরোই না আমরা। অথচ এরা দেশকে বাঁচাতে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দিনের-পর-দিন যুদ্ধ করে গেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের সেটা বারবার মনে করিয়ে দেবে।”
মূর্তিটি বানিয়েছেন ভাস্কর স্বপন পাল। তিনি জানান, স্মারকটি ফাইবার নির্মিত, এটা গড়ে তুলতে সময় লেগেছে সাত মাস। তিনি বলেন, “এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত কারণ কারগিল বিজয় আমাদের প্রত্যেকের কাছে একটি গর্বের ব্যাপার। বিধায়ক আমাকে কাজটি দিয়েছেন বলে আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি কৃতজ্ঞ সেই মায়ের প্রতি যিনি এখনও তার ছেলের আত্মবলিদানকে নিয়ে গর্ববোধ করেন।”
এছাড়া অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন বিমল নাথ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান, আরএসএস প্রচারক জ্যোৎস্নাময় চক্রবর্তী এবং ভিএইচপি প্রচারক পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল সহ অন্যান্যরা।
Comments are closed.