
রুট বদল বা নো এন্ট্রি লাগাতে ডিসি অফিসের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই: ক্ষুব্ধ মানবেন্দ্র দেবরায়
শিলচরের শিব কলোনি ও চণ্ডীচরণ রোড হয়ে অম্বিকাপট্টি পয়েন্ট পর্যন্ত বিকল্প অটো রুট বাতিলের দাবিতে বুধবার কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলা শাসক সুমিত সাত্তাওনকে স্মারকপত্র দিল অল কাছাড় অটো রিকশা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। কিন্তু স্মারকপত্র সমঝে নিয়ে এডিসি সাত্তাওন যে কথা শোনালেন এতে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হল প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের ভূমিকা নিয়ে স্মারকপত্র দিতে অটো মালিক ও চালকদের সঙ্গে উপস্থিত সিআরপিসি-র সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্থের প্রশ্নের জবাবে সাত্তাওন বলেন, চণ্ডীচরণ রোড দিয়ে বিকল্প রুটে অটো চালানোর কথা জানেইনা প্রশাসন।
কিসের ভিত্তিতে এবং কার নির্দেশে চণ্ডীচরণ রোড থেকে অম্বিকাপট্টি পর্যন্ত বিকল্প রুটে চলছে অটো। এর জবাবে সুমিত সাত্তাওন সাফ জানিয়ে দেন, জেলাশাসক তথা কাছাড় প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। এটা হয়তো পুলিশ তথা ট্রাফিক বিভাগ নিজস্ব সিদ্ধান্তে করেছে। জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে পুলিশ তথা ট্রাফিক বিভাগ একক ভাবে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি? সরাসরি এর জবাব না দিয়ে খানিকটা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেছেন ডিসি বর্ণালী শর্মা ছুটি কাটিয়ে শিলচরে আসার পর সভা ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
এদিকে এডিসির মন্তব্য নিয়ে চরম ক্ষোভ ব্যক্ত করে কাছাড়ের পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেব রায় বলেন, প্রশাসন বিকল্প অটো রুট সম্পর্কে না জানলে এটা তাদের ব্যর্থতা ও অজ্ঞতা। তার মানে তথাকথিত প্রশাসন চায়না শহরে ট্রাফিক সমস্যার সমাধান হোক। রাস্তায় শৃংখলাবদ্ধ ভাবে চলুক যানবাহন। শহরবাসী সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্যই অটো চলাচলের রুট ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা না জানার তো কথা নয়। এখানেই না থেমে মানবেন্দ্র দেব রায় আরও বলেন, পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের মাধ্যমে কী করবে না করবে টা ডিসি অফিসকে আলাদা করে জানানোর কোনোও প্রয়োজন নেই। তাঁর কথায়, যানজট এড়াতে আমরা যদি কিছু রাস্তা ‘ওয়ান ওয়ে’ করি, কিংবা কোনও রাস্তায় নো এন্ট্রি লাগাই সে ক্ষেত্রে ডিসি অফিসের কোনও অনুমতি নেওয়ার দরকার পড়ে না। এক্ষেত্রে তাদের হস্তক্ষেপেরও কোনও জায়গা নেই। এডিসি সাত্তাওন এবং পুলিশ সুপার দেবরায়ের পরস্পর বিরোধী মন্তব্যে স্পষ্টতই বোঝা গেছে ডিসি অফিসের সঙ্গে পুলিশ তথা ট্রাফিক বিভাগের কোনো সমন্বয় নেই।
অন্যদিকে বিকল্প এই রুট বাতিল করতে স্মারকপত্রে প্রশাসনকে দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে অল কাছাড় অটো-রিক্সা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কোঅর্ডিনেশন কমিটি। এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সাধন পুরকায়স্থ, শান্তসেনা ক্লাবের সুখেন সরকার, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটসের আজমল হোসেন চৌধুরী, নিউ শিলচর ছাত্র যুব উন্নয়ন সংস্থার সম্পাদক আশিষ রায় এবং সমাজকর্মী কমল চক্রবর্তী। কোঅর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন সভাপতি বিকাশ ভট্টাচার্য সহ মলয় দাশগুপ্ত রঞ্জিত কুমার সাহা পিন্টু কুমার শীল প্রমূখ।
স্মরকপত্র দেওয়ার আগে এদিন বেলা সাড়ে এগারোটায় কোঅর্ডিনেশন কমিটির ব্যবস্থাপনায় ডিসি অফিসের সামনে একই দাবিতে আধঘন্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন কোঅর্ডিনেশন কমিটির অধীন শহরের অটো স্ট্যান্ডের মালিক ও অটোচালক প্রতিনিধিরা। ধর্মঘটে স্লোগান দেওয়া হয় শহরের যানজট সমস্যা সমাধানে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের ব্যর্থতা নিয়ে। “বিকল্প অটো রুট মানছি না, মানবো না” স্লোগান দিয়ে অটো চালক ও মালিকরা সাফ জানিয়ে দেন ট্রাফিক বিভাগ যানজট সমস্যার কোন সমাধান করতে না পেরে শুধু চোখ রাঙ্গায় অটোচালকদের ওপর। এটা আর সহ্য করা হবে না। বিকল্প রুট বাতিল না হলে প্রয়োজনে তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন হবে। আন্দোলন হবে দীর্ঘ বহু বছর ধরে কর্মী বদলি না হয়ে শিলচরে ট্রাফিক বিভাগের মৌরসী পাট্টা জমিয়ে বসার বিরুদ্ধেও।
Comments are closed.