বাদ্রি সেতু: কংগ্রেস জমানায় শুরু হওয়া প্রকল্প অসম্পূর্ণ বিজেপির 'উন্নয়নের জোয়ারেও'; "এবারের শীতেই চালু হবে সেতু," আশ্বাস আমিনুলের
ফাটকবাজার, মধুরবন্দ হয়ে বেরেঙ্গা এলাকা, সেখানে ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে বরাক নদীর উপর বিরাট সেতু। এটি চালু হলে বিভিন্ন এলাকা সরাসরি কাশিপুর পয়েন্টে গিয়ে মিলবে। এতে ফাটকবাজারে আসা মালবোঝাই গাড়িগুলো শিলচর শহরের ভেতর দিয়ে না এসে বাইরে দিয়ে চলাফেরা করবে। ফলে কমবে ট্রাফিক সমস্যা এবং রাতের বেলা শহরে টিপারদের দৌরাত্ম্য। তবে ৪৯ কোটি টাকা খরচ করে বানানো সেতুটি জনগণের কাজে আসছে না, এর কারণ জমি বিবাদ। সদরঘাটের নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর আগে শুরু হয়েছিল বাদ্রি সেতুর কাজ। সদরঘাটের সেতু চালু হওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও বাদ্রি সেতুর অ্যাপ্রোচ রাস্তার কাজ শুরু হয়নি।
এবছরের প্রথম দিকে প্রাক্তন জেলাশাসক বর্ণালী শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর এবং আরও কয়েকজন বিধায়ক জমি পরিদর্শন করে বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। তবে এলাকায় গেলে শোনা যায় সাধারণ মানুষ সরকারের কাছ থেকে জমির পর্যাপ্ত মূল্য কতটা মিলবে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেউ কেউ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, “হাতে টাকা পেলে তবেই জমি দেব।”
শোনা গেছে গত সপ্তাহে এপ্রোচ রাস্তা বানানোর জন্য ১০ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। কাশীপুরের দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক হবে এবং বেরেঙ্গার দিকে কিছুটা সড়কের কাজ হবে। তবে সরকারিভাবে কোনও পরিষ্কার সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি, অথচ কাজটি শেষ করতে হবে। আগামী বছর নির্বাচন রয়েছে, হয়তো এর আগে এই সেতুটি শাসক দলের জন্য নির্বাচনী প্রচারে কিছুটা সহায়তা করবে। একইভাবে কংগ্রেস দল এর কৃতিত্ব নিতে ভুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।
উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এই বছর শীতের মরশুমে কাজটি শেষ হবে। তিনি বলেন, “আমি নিজে বেশ কয়েকবার এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় মানুষের, বিশেষ করে কাশিপুর অঞ্চলে জমি নিয়ে বিবাদ ছিল। বারবার তাদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং ধীরে ধীরে তাদের বোঝানো গেছে। তাদের জমির পর্যাপ্ত মূল্য দিতে আমরা প্রস্তুত এবং তারাও জমি সরকারের কাজে দিতে রাজি হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করাই আমাদের কাছে প্রথম লক্ষ্য ছিল, তাই এই কাজটি পিছিয়ে গেছে। এবার শীতের মরশুমে কাজটি অবশ্যই সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে ফাটক বাজার হয়ে সেতু পর্যন্ত যাওয়ার যে রাস্তাটি রয়েছে সেটাও মেরামত হবে এবং এলাকার উন্নতিতে এটি সহায়তা করবে।”
বাদ্রি সেতুর জন্য প্রথম অর্থ বরাদ্দ হয় তরুণ গগৈ সরকারের এক হাজার কোটি প্রকল্পের অধীনে। তখন শিলচরের বিধায়ক ছিলেন সুস্মিতা দেব। তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী অজন্তা নেওগ নিজে এসে সেতুটির কাজের শিলান্যাস করেন। পরবর্তীতে বিজেপি সরকারের আমলে সেতুর কাজ এগিয়ে গেলেও অ্যাপ্রোচ নিয়ে নানান সমস্যা দেখা দেয়। জেলায় আরও কয়েকটি সেতু এভাবেই এপ্রোচ’র অভাবে অচল হয়ে আছে। জনগণের ট্যাক্সের বিশাল অর্থ এভাবে খরচ হলেও আদতে উন্নতি হচ্ছেনা, এমনটাই মনে করছেন অনেকেই।
সুস্মিতা দেব দিল্লি থেকে ফোনে এব্যাপারে বলেন, “যেসব প্রকল্প বর্তমান সরকারের প্রতিনিধিরা ফলাও করে উন্মোচন করেন তার একটাও তারা শুরু করেননি। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আপনারা একটা কাজ দেখান যেটা আপনারা শুরু করেছেন এবং সম্পন্ন হয়েছে। একের পর এক সেতু ঘোষণা হয়, অথচ সেগুলো গড়ে ওঠে না। জনগণকে বোকা বানাতে ভাষণের ক্ষেত্রে এগুলো বেশ কাজে আসে। আমাদের চোখের সামনে অনেক প্রকল্প অধরা রয়ে গেছে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই বিজেপি সরকারের। আমি বুঝিনা মানুষ কিভাবে তাদের কথায় বিশ্বাস করে।”
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডিডিসি জেসিকা রোজ লালসিম জানিয়েছেন, একুসিশন প্রপোজাল অ্যাক্ট ১৯৬৪-এর আওতায় মধুরা সেতু, বাদ্রি সেতু এবং ইটখোলা সেতু সংলগ্ন অ্যাপ্রচ রাস্তা গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত জমি অধিগ্রহণ করার নির্দেশ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাদ্রি সেতু সংলগ্ন অ্যাপ্রচ রাস্তা গড়ে তুলতে যেটুকু সময় প্রয়োজন এতে এই শীতে অন্তত কাজটি শেষ হচ্ছে না। তবে পূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জানা গেছে কাজটি শেষ করতে ১০ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। কাশীপুরের দিকে ১৫১০ মিটার এবং বেরেঙ্গার দিকে ১৭০ মিটার রাস্তা, সঙ্গে রিটেইনিং ওয়াল, কালভার্ট ইত্যাদির কাজ হবে। রাজনৈতিক টানাপোড়ন এবং সরকারি কাজে বিভাগের মন্থর গতি ইত্যাদি সমস্যা অতিক্রম করে কবে সেতুটি জনগণের চলার যোগ্য হয়ে উঠে এটাই দেখার বিষয়।
Comments are closed.