"সাংসদ রাজদীপ রায়ের বক্তব্য ১৯৬১'র ভাষা আইনের অপব্যাখ্যা" : বরাক বঙ্গ
অসমের সরকারি ভাষা আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উপত্যকার ভাষাগত প্রকৃতি পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন । বরাক উপত্যকায় প্রশাসনিক কাজে ও সরকারি যোগাযোগের জন্য বাংলা ভাষা ব্যবহারের যে আইন রয়েছে সেটার ভুল ব্যাখ্যা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সম্মেলন।
বরাক বঙ্গ বলে, “বরাক উপত্যকা দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে যে অধিকার অর্জন করেছিল তা পিছনের দরজা দিয়ে অবমাননার জন্য অপপ্রয়াস চলছে এবং আমরা তা হতে দেব না।” তারা জনপ্রতিনিধিদেরও এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার, বরাক বঙ্গের সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্তের দেওয়া একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৬১ সালের আসাম সরকারী ভাষা আইনের ৫ নং ধারায় সমগ্র বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী এবং প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করেছে। সেই আইনে, এটি “কাছাড়ে বাংলা ভাষার সুরক্ষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।” রাজ্য সরকার ১৯৬৪ সালের ২৪ জুলাই একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে, সেই বছর ১লা আগস্ট থেকে কাছাড়ে সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহার হবে। আসাম সরকার বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে; তবে যখনই এই আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে, বরাক উপত্যকা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
“এই আইনের ব্যাপারে কোন বিভ্রান্তি নেই, কিন্তু কয়েকজন এই আইনের ভুল ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। এমনকি সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায় যা বলেছেন, তাতেও মারাত্মকভাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এই আইনের সাথে তা মিলেনা। তিনি যে স্থানের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই অঞ্চলের জনগণের অনুভূতি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না, ” বিবৃতিতে যোগ করা হয়।
“ বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন ৪৫ বছর ধরে বরাক উপত্যকার ভাষা ও সংস্কৃতিগত অধিকারকে সক্রিয়ভাবে রক্ষা করে আসছে। যখনই আমাদের ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে, আমরা আমাদের আওয়াজ তুলেছি এবং প্রতিবাদ করেছি। যাইহোক, আমরা কোন ভাষার অবজ্ঞা সমর্থন করি না, তবে কেউ আইনের অপব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আমরা আমাদের আওয়াজ তুলে ধরতে গণতান্ত্রিক উপায় অবলম্বন করব,” সাধারণ সম্পাদক গৌতম দত্ত বলেন।
তিনি আরও বলেন, বরাক উপত্যকার বাঙালিরা অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে না। এখানে অনেক অসমীয়া ভাষার আন্তরিক অনুসারী রয়েছেন এবং এই ভাষার পাঠক ও আছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কেউ যদি আমাদের ভাষাগত অধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা করে তবে আমরা চুপ করে থাকব। বরাক বঙ্গ বিশ্বাস করে যে, অসমিয়া এবং বাঙালি উভয়েই উভয়ের সহযোগিতা করা উচিত এবং তাদের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা উচিত।
উল্লেখ্য, শিলচরের সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায় অতি সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন যে, ভাষা আইন অনুযায়ী বরাক উপত্যকার সরকারী ভাষা বাংলা নয়, বাংলা শুধু সহযোগী ভাষা।
Comments are closed.