বঙ্গভবনের দিকে বরাকের নতুন সেতু এগিয়ে আনা হয়েছে, ক্ষোভ বরাক বঙ্গের
বঙ্গভবন নিয়ে বিধায়ক দিলীপ পালের প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কর্মকর্তারা গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। বিধায়কের বক্তব্য খণ্ডন করে তারা জানান, বরাক সেতু নির্মাণের ডিপিআর জনসাধারনকে জানানো হয়নি। অথচ সবাইকে জানিয়ে এবং জনসাধারণের অভিমত গ্রহণ করেই সেতু নির্মাণের কাজ করা উচিত ছিল।দিলীপ পালের কাছে এ ধরনের প্ররোচনামূলক এবং অনাকাঙ্খিত মন্তব্য আশা করা যায় না বলে তারা উল্লেখ করেন।
এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সংস্থার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন, ডি পি আর শহরের জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পুরসভা তথা জনসাধারণকে জানানোটা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু কংগ্রেস জমানায় সেই ডি পি আর জনসাধারণকে জানানো হয়নি। তাই এই ডি পি আর টা কোন্ এলাইনমেন্ট দিয়ে তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে শহরবাসী কিছুই জানেন না। অথচ গৌহাটিতে যে নতুন সেতুর শিলান্যাস হবে সেটারও ডিপিআর জনসাধারণকে জানিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। ডিপিআর এবং তার এলাইনমেন্ট সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করে জানতে চাওয়া হয়েছে এটা নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা। অথচ বরাক সেতু নির্মাণের সময় জনসাধারনের মতামতকে তোয়াক্কা করা হয়নি। এ অবস্থায় রাজনৈতিক নেতারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না বলে সম্মেলনের পক্ষ থেকে বলা হয়।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগেও বঙ্গভবনের সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্যই বরাক সেতুর অ্যাপ্রোচ ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। সম্মেলনের পক্ষে সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন , সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর সময় তৎকালীন কার্যনির্বাহী বাস্তুকার একে চন্দ ও এপিডিসিএল এর বাস্তুকার এবং বঙ্গভবন তদারককারী ইঞ্জিনিয়ার আশিস কুমার গুপ্তের সঙ্গে বৈঠকে যে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছিল তা এরপর মোটেই পালন করা হয়নি।
শুধু এই বৈঠকের প্রতিশ্রুতিই নয়, পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য পূর্ত কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এসে সে সময় বঙ্গভবনের ঐতিহ্য রক্ষা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে সেতু পিএইচই প্ল্যান্টের দিকে কিছুটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অথচ আশ্বাসের পরও মাত্র চার ফুট সরানো হয়েছে। যদিও পূর্তমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী ৬ ফুট সরানোর কথা ছিল। অভিযোগে বলা হয়, ইচ্ছে করলেই আরো সরানো যেত, কারণ পিএইচই’র দিকে এখনো অনেকটাই জমি পড়ে রয়েছে।কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থও নির্বাহি বাস্তুকারকে অনুরোধ করেছিলেন, বঙ্গভবনের সৌন্দর্যের যাতে হানি না ঘটে। সব ধরনের প্রতিশ্রুতি-আশ্বাসকে নস্যাৎ করে পূর্ত বিভাগ সেতুর অ্যাপ্রোচের ক্র্যাশ ব্যারিয়ার বাড়িয়ে দেওয়ায় ঐতিহ্যবাহী বঙ্গভবন আজ সৌন্দর্য হারাতে চলেছে। কারণ এর ফলে বঙ্গ ভবনের সামনের রাস্তা ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাই এটিকে রাস্তা না বলে গলিপথ বললেও ভুল হবে না বলে তৈমুর রাজা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়ও সেতুর কাজ দেখে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এতে বঙ্গভবনের সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
এদিকে পূর্ত গ্রামীণ সড়ক বিভাগের নির্বাহি বাস্তুকার নিহার পালের কথামতো সেতুর অ্যাপ্রোচ কোন অংশেই বাড়ানো হয়নি। নকশা মেনে সেতুর কাজ চলছে বলে তার দাবি। ২০১৫ সালে যে ডিজাইনে কাজ শুরু হয়েছিল এখনও সেটিকে অনুসরণ করেই কাজ চলছে। বঙ্গভবনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেই সেতুর অ্যাপ্রোচে ক্র্যাশ ব্যারিয়ার দেওয়া হয়েছে বলে নির্বাহি বাস্তুকার উল্লেখ করেন। কারণ ডবল লেনের এই রাস্তা দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল করবে। নকশা অনুযায়ী প্রতি ২৫ মিটারে ১ মিটার গ্রেডিয়েন্ট রাখতে হচ্ছে। তাছাড়া তার মতে, শুধু বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে দু’একজন ছাড়া সাধারণ মানুষেরও এ নিয়ে কোন অভিযোগ নেই।
একইভাবে বরাক বঙ্গের অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পালের অভিমত, বরাক সেতু বঙ্গভবনের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে তৈমুর রাজা চৌধুরী তার বক্তব্যের স্বপক্ষে আরো জানান, আশ্বাস মত পূর্ব দিকে মনিপুরি চা স্টলকে সামান্য কিছুটা অতিক্রম করে সেতু শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যাবতীয় আশ্বাসকে গুড়িয়ে দিয়ে সেতু ক্রমশই এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও যেভাবে বঙ্গভবনের দিকে সেতুকে এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে তাতে সন্দেহ হচ্ছে বঙ্গভবনকে ড্যামেজ করার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা করা হচ্ছে, তিনি উল্লেখ করেন। এহেন কাজে বঙ্গভবনের ঐতিহ্য তো বটেই, এমনকি বঙ্গভবনের সামনে যে ১২ জন মনীষীর ছবি রয়েছে, অসম্মান করা হলো তাদেরকেও, তিনি যোগ করেন।
Comments are closed.