Also read in

বরাকের ছেলে মারুতি সুইফটকে সংশোধিত করে গড়লেন লাম্বরগিনি'র নিজস্ব সংস্করণ, তার পরবর্তী স্বপ্ন ফেরারিকে নিয়ে

বিগ বাজেটের অ্যাকশন ফিল্ম গুলোতে প্রায়শই শক্তিশালী ইঞ্জিন যুক্ত স্পোর্টস গাড়িগুলো আমাদের চোখ ঝলসে দেয়। তবে আমরা এই গাড়িগুলোকে ফিল্মে দেখতেই বেশি অভ্যস্ত। ফেরারি কিংবা লাম্বারগিনি গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন।তবে সাধারণ মানুষের জীবনে বিশেষভাবে একটি ছোট্ট শহর বা গ্রামের মানুষের কাছে এই ধরনের গাড়ি দেখার কিংবা মালিক হওয়ার স্বপ্নপূরণ ‘দিল্লি দূর অস্ত্’ এর মতোই মনে হবে ।অথচ সেই অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে প্রতিভার গুণে। সেটাই প্রমাণ হলো করিমগঞ্জ জেলার এক গ্রামে। যেখানে একজন গ্যারেজ মালিক জনপ্রিয় জার্মান স্পোর্টস গাড়ি প্রস্তুতকারক লাম্বারগিনি’র নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করেছেন।

করিমগঞ্জের ভাঙ্গা এলাকার নুরুল হক মহামারির এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন একটি ‘কাস্টমাইজ’ গাড়ি, যা কিনা লাম্বারগিনি গাড়ির দ্বারা প্রচন্ড রকম ভাবে অনুপ্রাণিত। তিনি পেশায় একজন মেকানিক এবং ‘এন মারুতি কার কেয়ার’ নামের ভাঙ্গার একটি গ্যারেজের মালিক।অন্যদের গাড়ি ঠিক করে নিজের জীবন যাপন করেন। লকডাউনে যখন সারাদেশ স্তব্ধ, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মারুতি সুজুকি সুইফট গাড়ির ইঞ্জিনকে কাস্টমাইজ করে লাম্বারগিনির নিজের সংস্করণ তৈরি করবেন। এবং সেই সিদ্ধান্ত কিংবা চিন্তাধারার ফসল হচ্ছে তার নতুন তৈরি গাড়ি, যা কিনা অবিশ্বাস্যভাবে লাম্বারগিনি গাড়িটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলার সময় নুরুল হক জানান, ল্যাম্বরঘিনি গাড়ির মালিক হওয়া কিংবা গাড়ি চালানো তার আজীবনের স্বপ্ন ছিল। তবে একটি ছোট্ট শহরের লোক হয়ে এত তাড়াতাড়ি এ ধরনের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ আসা সহজ নয়। মেট্রো শহর কিংবা বড় বড় শহরগুলোতে যেভাবে প্রত্যাশা করা সম্ভব, আমাদের মত এত ছোট জায়গা থেকে স্পোর্টস গাড়ির সাক্ষী হওয়া কিংবা মালিক হওয়া ততটা বাস্তব নয়। কিন্তু আমি সবসময়ই চেয়েছিলাম একটি স্পোর্টস গাড়ির মালিক হব কিংবা নিজে চালাবো। তাই নিজেই এরকম কিছু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেই। নুরুল গাড়িটি তৈরি করতে তার প্রাথমিক অনুপ্রেরণার ব্যাপারে জানাতে গিয়ে কথাগুলো বললেন। তিনি একটি সুইফট ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন এবং এর ‘রেপ্লিকা’ তৈরি করতে চারপাশের অন্যান্য সমস্ত পার্টসগুলো কাস্টমাইজ করে বানিয়েছেন।

গাড়িটি তৈরির অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে নুরুল জানান, “লকডাউনের জন্য আমাকে অনলাইনে সমস্ত কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ অর্ডার করতে হয়েছিল। ৮ মাস ধরে আমি আমার অন্যান্য কর্মচারিদের সহযোগিতায় এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে পেরেছি এবং শেষ পর্যন্ত এই গাড়িটি তৈরি করতে সফল হয়েছি।” ইঞ্জিন ও কাঁচামাল কেনা থেকে এর চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

খুব স্বাভাবিকভাবেই তার এই সাফল্যের খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এ ধরনের গাড়ি এই অঞ্চলের রাস্তায় দেখা একটি খুবই বিরল দৃশ্য। এই উপত্যকায় প্রতিটি কোণে খবরটি পৌঁছে যাওয়ার পর বরাক উপত্যকার সর্বধর্ম সমন্বয় সভার সুতারকান্দি শাখায় তার গাড়ির উদ্বোধনের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্পোর্টস কার সম্পর্কে উৎসাহী কারো কাছে এটি বিক্রি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন নুরুল। যদি এ ধরনের কোনো সুযোগ আসে তবে তিনি খুশি হবেন বলে জানান।

খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন জাগে, লাম্বারগিনির পর এবার কি? নুরুল জানান, এরপর তিনি শিগগিরই ফেরারির একটি ‘কাস্টমাইজড রেপ্লিকা’ তৈরির পরিকল্পনা করছেন। তবে আপাতত তিনি করিমগঞ্জের রাস্তায় তার এই নবনির্মিত সাফল্যের গাড়িটি চালিয়ে জীবনের আনন্দ নিচ্ছেন।

 

Comments are closed.