সেতু নির্মাণের পাঁচ বছর পরও হয়নি অ্যাপ্রোচ রাস্তা; স্থানীয়দের ওপর দায় চাপালেন বিধায়ক কিশোর
শিলচর শহর সংলগ্ন বৃহত্তর দুধপাতিল এলাকা দশকের পর দশক ধরে শহরের উন্নতির মূল স্রোত থেকে বঞ্চিত, শুধুমাত্র একটি সেতুর জন্য। বর্তমানে মধুরাঘাট হয়ে সেতু না বানিয়ে অন্নপূর্ণা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় দিয়ে বানানো হচ্ছে। তবে এই সেতুর কাজ শুরুর প্রায় ৪ বছর আগে রংপুর সংলগ্ন করাতিগ্রাম হয়ে দুধপাতিলে যাওয়ার জন্য একটি সেতু তৈরি হয়েছিল। ২০১৫ সালে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও শুধুমাত্র অ্যাপ্রোচ রাস্তা না হওয়ায় এতবড় সরকারি ব্যয় বৃথা হওয়ার দোরগোড়ায়।
বেশ কয়েকবার নেতারা জমি দেখেছেন, জেলাশাসক আশ্বাস দিয়েছেন, এমনকি তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, কাজটি ছয় মাসের মধ্যে হবে। এবার বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার মুহূর্তে হিসেব মেলালে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র রাস্তা বানানোর অক্ষমতার ফলে একটি সেতু থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। তার থেকেও বড় কথা, মানুষের ট্যাক্সের টাকা এভাবে খরচ করে নষ্ট করা হচ্ছে।
পিডব্লুডি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৪ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ হয়েছিল। রংপুরের করাতিগ্রাম হয়ে দুধপাতিলে কো-অপারেটিভ পয়েন্টে গিয়ে শেষ হবে রাস্তাটি। রংপুরের দিকে প্রায় ২০০ মিটার আর দুধপাতিলের দিকে ৪০০ মিটার, এটুক রাস্তা বানিয়ে দিতে পারলেই সেতুটি কাজে আসতো। এলাকায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে শিলচর শহরে আসেন এবং তাদের একটা বড় অংশকে এখনও রীতিমতো নৌকায় চেপে নদী পেরিয়ে আসতে হয়। প্রতিবছর নানান দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া এই রাস্তা হয়ে মহাসড়কের হাঁতিছড়া পয়েন্টে গেলে রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা কমে যায়। এতে অনেক ইন্ধন বাঁচবে। সাধারণত সরকারি পরিকল্পনায় এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
২০১৬ সালে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য সদরঘাটে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে ঐ এলাকা পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন সদ্য বিধায়ক হওয়া কিশোর নাথ এবং মিহির কান্তি সোম। সেইসময় পরিমল শুক্লবৈদ্য আশ্বাস দিয়েছিলেন ছয় মাসের মধ্যে করাতিগ্রাম-দুধপাতিল মধুরা সেতুর অ্যাপ্রোচ রাস্তা বানানোর কাজ শেষ হবে।
রাজ্যে তরুন গগৈ নেতৃত্বাধীন সরকার থাকাকালীন এই সেতুটি নির্মাণ হয়েছিল। তখন বিধায়ক ছিলেন রুমি নাথ এবং অজিত সিং। তখন সেতু নির্মাণের কাজে কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীতে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরবর্তী সরকার প্রথম থেকেই প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে এসে বলছেন, সাধারণ মানুষের জন্য কাজটি হয়নি।
বড়খলার বিধায়ক কিশোর নাথ বলেন, “আমরা বেশ কয়েকবার এলাকা পরিদর্শন করেছি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু কোনওভাবে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। আমরা এলাকায় গেলে মানুষ জমি দিতে রাজি হন, পরে তারা কথা ঘুরিয়ে নেন। এবছরই প্রথম দিকে আমরা জেলাশাসক এবং অন্যান্য বিধায়করা মিলে পরিদর্শন করেছিলাম। মানুষ রাজি হয়েছিলেন এবং আমরা আশা করেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে। একে তো করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির জন্য আমরা পিছিয়ে গেছিলাম পাশাপাশি আবার এলাকার কিছু মানুষ বেঁকে বসেন। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক মতলব থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমি আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পুরোপুরিভাবে চেষ্টা করব, যদি শেষ না করতে পারি তবে আগামীতে আমাদের সরকার এলে কাজটি যাতে সম্পন্ন হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবো।”
উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোম বলেন, “আমাদের দিকে কোনও সমস্যা নেই। রংপুরের দিকে যেটুকু জায়গা প্রয়োজন সেটা দিতে এলাকার মানুষ কোনও বিরোধিতা করছেন না। দুধপাতিল এলাকায় যদি সমস্যা থাকে সেটা মিটিয়ে নিলে কাজ অবশ্যই শেষ করা সম্ভব। আমাদের সরকার রাস্তাঘাটের কাজে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছে, ফলে উপত্যকার রাস্তার পরিবর্তন হয়েছে, বিভিন্ন সেতু নির্মাণ হয়েছে। এই সময় দাঁড়িয়ে একটি বানানো সেতু শুধু রাস্তার জন্য হবেনা এটা ঠিক নয়।
বছরের প্রথম দিকে তৎকালীন জেলাশাসক বর্ণালী শর্মা স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে সেতুটি পরিদর্শন করেছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
জেলাশাসকের সঙ্গেই ছিলেন ডিডিসি জেসিকা রোজ লালসিম। তিনি এই দাবিটি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “মার্চের ১০ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করা অবশ্যই সম্ভব ছিল না। এসব কাজ শেষ করতে বিভিন্ন ধরনের বাঁধা থাকে, সেগুলো অতিক্রম করতে আমাদের সময়ের প্রয়োজন হয়।”
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার তুলনায় বরাক উপত্যকায় সেতু নির্মাণ সহ বিভিন্ন প্রকল্প অনেক কম দেওয়া হয়, এটা সত্যি। বরাক উপত্যকায় ছোট থেকে ছোট সেতু নির্মাণ প্রকল্প আদায় করতে হলে বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করতে হয়। তারপর অনেক কষ্টে প্রকল্প কাজে লাগিয়ে সেতু নির্মাণ হওয়ার পর শুধুমাত্র অ্যাপ্রোচ রাস্তা গড়ে তুলতে পারেনি বর্তমানে রাজ্য সরকার। এভাবেই যদি চলে তাহলে মানুষের করের টাকায় বানানো এত বড় প্রকল্প বৃথা যাবে। ভবিষ্যতে একে অন্যের ওপর দোষারোপ চলবে কিন্তু কাজ হবে না, ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের।
Comments are closed.