Also read in

কলকাতায় একের পর এক ছবি নির্দেশনা করছেন বরাকের মেয়ে শর্মিষ্ঠা, আসছে তাঁর নির্দেশিত 'সর্বভূতেষু'

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল সিনেমার নির্দেশক হবেন, তবে বরাক উপত্যকায় দাঁড়িয়ে একসময় সেটা অসম্ভব ছিল। তার একটি ম্যাগাজিন রয়েছে স্বপ্নের ইচ্ছেডানা, নিজের স্বপ্নের ডানা মেলেই পৌঁছে গেছেন কলকাতায়। পরপর দুটি সিনেমায় নির্দেশনার কাজ করে নিয়েছেন। তবে এখনও তার সব থেকে বড় মুহূর্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জির সঙ্গে কাজ করা। শিলচরের শর্মিষ্ঠা দেব এখন কলকাতার সিনেমা জগতের একটি পরিচিত নাম। লকডাউনের জন্য তাঁর নির্দেশিত হরর ছবি ‘সর্বভূতেষু’ একটু দেরিতে রিলিজ হচ্ছে। মঙ্গলবার কলকাতায় এর মিউজিক লঞ্চ হয়েছে। অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে আমাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করেন শর্মিষ্ঠা, তুলে ধরেন তার নির্দেশক হওয়ার প্রথম অনুভূতিগুলো।

মঙ্গলবার কলকাতায় তার নির্দেশিত ছবি সর্বভূতেষু’র মিউজিক রিলিজ হয়েছে। পিফে প্রযোজিত শর্মিষ্ঠা দেব ও রাজা চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবির মিউজিক রিলিজ করে রুহ্ মিউজিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক রূপঙ্কর বাগচী, অভিনেত্রী চান্দ্রেয়ী ঘোষ, অভিনেতা দেবদূত ঘোষ,মিউজিক ডিরেক্টর প্রাজ্ঞ দত্ত, গীতিকার সুপ্রিয় পাল সহ অনেকেই। ছবিটিতে একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত সহ চারটি গান রয়েছে। সঙ্গীত শিল্পীরা হলেন রূপঙ্কর বাগচী, বনী চক্রবর্তী, দূর্নিবার সাহা, মঞ্জুশ্রী দাশ। গান চারটি হল রবি ঠাকুরের ‘ কেটেছে একেলা’, সুপ্রিয় পালের ‘ ভালোবাসি এই শহর’ ও সর্বভূতেষু টাইটাল ট্রেক, এবং প্রাজ্ঞ দত্তের ‘ফিরে এসো আবার’।

ছবিটিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মিত্র,অর্জুন চক্রবর্তী,চান্দ্রেয়ী ঘোষ, রজতাভ দত্ত,দেবদূত ঘোষ, রাজদীপ সরকার,লাবনী সরকার প্রমুখ।

ছবিটি তৈরি হয়েছে আদ্যপান্ত অশরীরী গল্প নিয়ে।

ছবির শুটিং কলকাতার পাশাপাশি বরাক উপত্যকায়ও করা হয়েছে। মিউজিক রিলিজের গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী প্রযুক্তি বন্দোপাধ্যায়।

সর্বভূতেষু’র গল্প নিয়ে শর্মিষ্ঠা বলেন, “এটি একটি মজার হরর গল্প। একজন আর্ট ফিল্মের নির্দেশক এক প্রডিউসারের কথায় হরর ফিল্ম বানাচ্ছেন যেটা তার একেবারেই পছন্দ নয়। সেখানে তিনটি গল্প রয়েছে এবং চতুর্থ গল্পটি ঘটে নির্দেশকের সঙ্গেই। যেটা কোনদিন বিশ্বাস করতেন না সেটাই তার সঙ্গে ঘটে যায়। চারটি গল্পের একটি শিলচর শহরের সুপ্রতীপ দত্ত রায়ের লেখা। এর কিছুটা শুটিং শিলচর সহ বরাক উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় হয়েছে। অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী এজন্য শিলচরে এসেছিলেন, এই শহরের কিছু অভিনেতারা এই গল্পে অভিনয় করেছেন। রয়েছে বেশকিছু সিলেটি ডায়লগ। সিনেমাটি থিয়েটারে রিলিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তবে প্যানাডেমিক শেষ না হলে আমরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই রিলিজ করব।”

এর আগে ‘পয়লা এপ্রিল’ নামের একটি ছবিতে সহ নির্দেশকের কাজ করেছেন তিনি। ছবিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জী। এতবড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অনুভূতির ব্যাপারে শর্মিষ্ঠা দেব বলেন, “বাংলা সিনেমার অনুরাগী হিসেবে সৌমিত্র চ্যাটার্জী আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একজন অভিনেতা এবং ব্যক্তি। একসময় পাকাপাকিভাবে কলকাতায় ছিলাম না, শিলচর থেকে আসা যাওয়া করতাম। সেই দিনগুলোতে সৌমিত্র চ্যাটার্জির বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়। তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন এবং খুব স্নেহভরে আমাকে বলেছিলেন তার সময় হবে না। আমার অভিমান হয় এবং তাকে বলি, যদি নির্দেশক হতেই হয় তাহলে প্রথমে তার সঙ্গে কাজ করব, না হয় নিদের্শক হওয়ার স্বপ্ন ভুলে যাব। এতে তিনি রাজি হন এবং পরে আমাকে সময় দেন। তাকে গল্প শোনানোর পর তিনি সিনেমায় অভিনয় করতেও রাজি হন। সিনেমাটি এখনো রিলিজ হয়নি, জানুয়ারি মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হবে। এটি সৌমিত্র চ্যাটার্জির শেষ সময়ের হাতেগোনা ছবির মধ্যে একটি হতে চলেছে, তাই আমরাও রিলিজ নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহিত।”

বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা শর্মিষ্ঠা কিভাবে কলকাতার সিনেমা জগতে নিজের জায়গা করে নিলেন এবং কি কি অসুবিধা হয়েছিল এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সিনেমার জগতে হঠাৎ করে পৌঁছে গিয়ে দুটো সিনেমায় নির্দেশনা করার সুযোগ পাওয়া অবশ্যই খুব সহজ কথা নয়। প্রথম দিন থেকে নিজেকে তৈরি করেছি, চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েছি এবং সেগুলো পেরিয়ে এগিয়ে গেছি। তবে এটুকু বলতে হয় কলকাতায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা অত্যন্ত ভালো মানুষ। চান্দ্রেয়ী ঘোষের মত বড় মাপের অভিনেত্রীর কাছে আমি এখন প্রায় ঘরের মানুষ। কলকাতায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা নতুন নতুন নির্দেশকের গল্প শুনতে পছন্দ করেন এবং তাদের উৎসাহ যোগান। আমার ছবি সর্বভূতেষু’র শুটিং কিছুটা শিলচর শহর এবং আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় হয়েছে। কলকাতা শিল্পীরা সেখানে গিয়েছেন, শুটিং করেছেন, এমনকি সিলেটি ভাষা রপ্ত করে অভিনয় করেছেন। চরিত্রের খাতিরে তারা এতটা ভিতরে যাবেন এবং আমার কাজ সহজ করে তুলবেন এটা ভাবিনি। এক সময় শিলচর থেকে কলকাতায় এসে কাজ করতে হয়েছে, তবে এখন আর সেই সময় পাইনা। কলকাতায় থেকেই কাজ করে যাচ্ছি।”

আগামীতে কি পরিকল্পনা রয়েছে? এব্যাপারে তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহ থেকে আমার ওয়েব সিরিজ’র শুটিং শুরু হচ্ছে। এখনই এব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলছি না, তবে একটি বড় প্ল্যাটফর্ম এর জন্য ওয়েব সিরিজ নির্দেশনা করছি। সময় এলে এব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব।”

একসময় স্বপ্নের ইচ্ছেডানা নামের একটি লাইফ-স্টাইল ম্যাগাজিন করেছেন শর্মিষ্ঠা এবং তার স্বামী অভিজিৎ দেব। শিলচর শহরে ফ্যাশন শো কালচার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ অবদান রয়েছে। অনেক তরুণ মডেল এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন তারা। কলকাতায় যখন একের পর এক ছবি নির্দেশনা করে যাচ্ছেন, সেখানেও শিলচরের তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে তার। তিনি বলেন, “শিলচর শহর এবং বরাক উপত্যকা আমার কাছে সবসময় সবথেকে প্রিয়। পৃথিবীর যেখানেই থাকি এই অঞ্চলের আলো-হাওয়া রোদ্দুর সঙ্গে থাকে। তাই কাজের মধ্যেও বরাক উপত্যকা কোন না কোনভাবে ঢুকেই পড়ে।”

Comments are closed.