"বৈচিত্র্যময় অসম" বইটি প্রত্যাহার চাইছে বরাকবঙ্গ
বৈচিত্র্যময় অসম’ নামের দ্রুতপঠন বইটি নিয়ে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে। এই বইটিতে তথ্য বিকৃতি, বাস্তব তথ্যসমূহকে উপেক্ষা এবং আপত্তিকর পর্যবেক্ষণ সম্বলিত পাঠ রয়েছে বলে এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সমিতি উল্লেখ করেছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অসম মধ্যশিক্ষা পর্ষদের (সেবা) অধীনস্থ বিদ্যালয়গুলোতে নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য মাতৃভাষা বিষয়ে ২২ টি পাঠ নিয়ে বৈচিত্রময় অসম নামের দ্রুতপঠন বইটি চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বইটিতে ‘কাছাড়ের জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক পাঠটিতে বরাক উপত্যকার বিন্যাসের প্রকৃত চরিত্রের বিকৃত ছবি তুলে ধরা হয়েছে বলে সম্মেলন অভিমত ব্যক্ত করেছে। সম্মেলনের মতে, উপত্যকার প্রধান জনগোষ্ঠী বাঙালিকে ‘বঙ্গীয় সমাজ’ নামে ঐতিহাসিকভাবে অসমর্থনীয় শব্দবন্ধে প্রস্তাবিত করায় দুরভিসন্ধির ছায়া দেখা যাচ্ছে। সম্মেলনের আরও অভিমত, সমগ্র বইটি ছাত্রদের কাছে মোটেই মনোগ্রাহী হয়নি। দুই শ্রেণীতে এগারোটি করে নতুন পাঠ সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করায় ছাত্রদের যথেষ্ট মানসিক চাপে রেখেছে বলেও মত ব্যক্ত করা হয়। এই অবস্থায় বিষয়গুলো অসম মধ্য শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান রমেশ জৈনের নজরে এনে বইটির পাঠ্যক্রম থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে বরাকবঙ্গ।
বরাকবঙ্গ এই বইটিতে ‘কাছাড়ের জনগোষ্ঠী’ পাঠটি সম্পর্কে সেবার চেয়ারম্যানকে জানিয়েছে যে বাঙালির পরিবর্তে ‘বঙ্গীয় সমাজ’ শব্দবন্ধটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কোনও অঞ্চলে কোনও জাতি গোষ্ঠীর ‘সমাজ’ বলতে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী শিকড়হীন জাতিশ্রেণীকেই মূলত ইঙ্গিত করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। আরও উল্লেখ করা হয় যে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সনদ, রাজকীয় তথ্য, মুদ্রা ও প্রস্তরফলকে সুস্পষ্টভাবেই দেখা গেছে যে মধ্যযুগ থেকে এখানে বাঙালি তার সমৃদ্ধ ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছে। অথচ এই তথ্যের কোনো পরিচয় পাঠটিতে নেই বলে উল্লেখ করা হয়।এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও উল্লেখ করা হয়, এই পাঠটিতে স্থানীয় বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব এবং ভাষা শহিদদের কোনও উল্লেখ নেই। অথচ অন্যান্য পাঠগুলোতে অন্য জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে।
সেবার চেয়ারম্যানকে সম্মেলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বইটিতে বাঙালির সঙ্গে ডিমাসা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠী সম্পর্কেও অসম্পূর্ণ তথ্য তুলে দেওয়া ধরা হয়েছে। চা জনগোষ্ঠীর সম্পর্কেও তথ্য বাস্তব অবস্থার নিরিখে নেওয়া হয়নি। তাই সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেছেন, বইটি তথ্য বিকৃতির কারণে পড়ুয়া ও শিক্ষা জগতের সবাইকে বিভ্রান্ত করছে। এই অবস্থায় মাতৃভাষা শিক্ষায় বৃহত্তর স্বার্থে সেবা এই বইটি প্রত্যাহার করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে বলে বিবৃতিতে সম্মেলনের পক্ষ থেকে আশা ব্যক্ত করা হয়।
Comments are closed.