Also read in

পর্দার আড়ালে থেকেই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের ভিডিও এনালিস্ট শিলচরের সুনিত ছেত্রী

 

আধুনিক ক্রিকেটে একজন ভিডিও অ্যানালিস্টের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ক্রিকেটার কোথায় ভুল করছেন, কিভাবে আরো উন্নতি করতে পারবেন, প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে কিভাবে সফল হওয়া যাবে, এই সমস্ত তথ্য কিন্তু খুঁজে বের করেন ভিডিও এনালিস্টরা। এমনই একজন হলেন শিলচরের সুনিত ছেত্রী। বাকি পাঁচজন ভিডিও এনালিস্টের মত তিনিও পর্দার আড়ালে থেকেই কাজ করে থাকেন। তবে ৩৪ বর্ষীয় সুনীত পর্দার আড়ালে থেকেই একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের একজন ভিডিও এনালিস্ট হিসেবে ১৮৩ টি ম্যাচে কাজ করেছেন।
আধুনিক ক্রিকেটে সাপোর্ট স্টাফের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় দল থেকে শুরু করে প্রতিটি রঞ্জি দলের সঙ্গে থাকেন ভিডিও এনালিস্ট। এমনকি রাজ্য দলগুলির জুনিয়র টিমের সঙ্গেও কাজ করেন ভিডিও এনালিস্ট। এতসবের পরও কিন্তু ভিডিও অ্যানালিস্টদের নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। সুনিতের কথাই ধরুন, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রায় ২০০ টি ম্যাচে তিনি ভিডিও এনালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে তেমন হইচই নেই। অথচ শিলচরের কোনো ক্রিকেটার যদি জাতীয় স্তরে এতগুলো ম্যাচ খেলতেন তাহলে প্রত্যেকের মুখে তার নাম থাকতো। তবে সুনিতের মতো ভিডিও এনালিস্টরা দারুন কাজ করেও পর্দার আড়ালে থেকে যান।
তাই বলে তাদের সাফল্য কিন্তু আড়ালে থাকে না। অন্য পাঁচটা ছেলের মত সুনিত ও ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ইচ্ছে ছিল রাজ্য দলে প্রতিনিধিত্ব করার। উইকেট কিপিং এর সঙ্গে ব্যাটের হাতটাও ভালো ছিল সুনিতের। ২০০৪-০৫ মরশুমে অনূর্ধ্ব ১৯ জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। খেলেছেন শিলচরের নামিদামি ক্লাব গুলোতেও। ‌ তবে প্রথম বিভাগের একটি ম্যাচে খেলতে নেমে লিগামেন্টে চোট পেয়ে যান। যার ফলে তাকে ছয় মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়। আর সেটাই তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।
মাঠের বাইরে চলে গেলেও ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে চাননি সুনিত। ২০১১ সালে অসম ক্রিকেট সংস্থার প্যানেল আম্পায়ারিংয়ের জন্য পরীক্ষা দেন। এতে পাশ ও হয়ে যান। তবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় মোড় আসে ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তৎকালীন সচিব বাবুল হোড় ফোন করে সুনিতকে জানান, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ভিডিও এ্যানালিস্টদের জন্য পরীক্ষা নিচ্ছে। তাই তিনি সুনিতের নাম ইস্ট জোনের ভিডিও এনালিস্ট এর পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। ক্রিকেটের নন্দনকানন কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স এ বসেছিল ইস্ট জনের ভিডিও এনালিস্ট এক্সাম। এতে মোট ১৬৮ জন প্রার্থী পরীক্ষায় বসে ছিলেন। সেই পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ অর্জন করে শীর্ষস্থান দখল করেন সুনিত। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১২ সালে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রথম এসাইনমেন্ট পান সুনিত। সেটা ছিল অনূর্ধ্ব ১৯ ভিনু মাকড় ট্রফি। সেবার তিনসুকিয়ায় বসেছিল আসর। একজন ভিডিও অ্যানালিস্ট হিসাবে সে ছিল সুনিতের শুরু। গত দুবছর থেকে তিনি অসম অনূর্ধ্ব ২৩ দলের ভিডিও এনালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের মোট ১৮৩ টি ম্যাচে ভিডিও এনালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রঞ্জি ট্রফি, কোচবিহার ট্রফি, মুস্তাক আলী টি২০, সি কে নাইডু ট্রফি, অনূর্ধ্ব ২৫ রাজ্য দলের ওয়ানডে, ভিনু মাকর ট্রফি, বিজয় মার্চেন্ট ট্রফি, সিনিয়র মহিলাদের ওয়ানডে, সিনিয়র মহিলাদের টি-টোয়েন্টি, মহিলাদের অনূর্ধ্ব ২৩ ও ১৯ ক্রিকেট এবং মহিলাদের জোনাল ক্রিকেটর ম্যাচ।
এখানেই শেষ নয়, সুনিতের হাত ধরেই ২০১৪ সালে এ রাজ্যে শুরু হয়েছিল ক্রিক হিরোজের যাত্রা। এখন পর্যন্ত নিজের সফর সম্পর্কে সুনীত বলেন, ‘সত্যি কথা বললে আমি কোনদিনও ভাবিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের অধীনে এতগুলো ম্যাচে কাজ করব। আসলে লিগামেন্টে চোট পাওয়াটাই আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন। শুরু থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু যখন চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাই তখন আম্পায়ারিং নিয়ে ভাবছিলাম। আম্পায়ারিং পরীক্ষা দিয়ে প্যানেল আম্পায়ারও হয়ে যাই।’ সুনিত আরো বলেন, ‘ছোট থেকেই কম্পিউটার ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগতো। যখন দেখলাম একজন ভিডিও অ্যানালিস্ট হিসেবে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবো তখন এদিকে পুরোপুরি ফোকাস করি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এর মাধ্যমে আমি ক্রিকেটের জন্য কিছু একটা করতে পারছি।’
শুধু নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে নয়, শিলচরের ক্রিকেট নিয়েও চিন্তা ভাবনা করেন সুনিত। তাইতো তিনি বলছিলেন, ‘শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা চাইলে আমি তাদের জন্য কাজ করতেও প্রস্তুত। আধুনিক ক্রিকেটে একজন ভিডিও এনালিস্টের ভূমিকাটা ভীষণ ভাইটাল। এই মুহূর্তে জুনিয়র রাজ্য দলে শিলচরের কোনো খেলোয়াড় নেই। কেন আমাদের ছেলেরা উন্নতি করতে পারছে না, কোথায় খামতি রয়েছে, কিভাবে স্কিল ডেভলপ করা যায়, তা নিয়ে আমি কাজ করতে রাজি। শিলচরের ক্রিকেটকে সাহায্য করতে রাজি।’
শিলচরে এই মুহূর্তে চলছে অসম ক্লাব ক্লাবের ফাইনাল রাউন্ড। এই টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টিং পার্টনার হচ্ছে ফ্যান কোড। অসম ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে কো-অরডিনেটর হিসেবে ফ্যানকোডের টিমের সঙ্গে কাজ করছেন সুনীত।

Comments are closed.