
আসন্ন শিলচর পৌর নিগম নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেবে বিডিএফ
আসন্ন শিলচর পৌরনিগম নির্বাচনে ৪২ টি ওয়ার্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে একক প্রার্থী দেবার পরিকল্পনা বিডিএফ এর, বিরোধী ঐক্যমঞ্চ গঠনে প্রয়াস নেওয়া হবে জানালেন প্রদীপ দত্তরায়।
আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে শিলচর পৌর নিগম নির্বাচন। এতে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বিরোধী ঐক্যমঞ্চ গঠনে প্রয়াসী হবে বরাক ডেমোক্রটিক ফ্রন্ট। আজ শিলচর পেনশনার্স ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই মর্মে বক্তব্য রাখলেন বিডিএফ কর্মকর্তারা।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন যে পৌর নিগমের নির্বাচন হবে তা নিয়েই বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে এবং নাগরিকদের সাথে এই ব্যাপারে শাসকদলের পক্ষ থেকে কোন বিনিময় করা হয়নি,যা প্রত্যাশিত ছিল। প্রস্তাবিত পৌর নিগমের সীমানা ১০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি হবার কথা ছিল। কারন শিলচরকে আগামীতে স্মার্ট সিটি হিসেবে মনোনয়ন পেতে হলে তা জরুরী বলে শোনা গেছে। কিন্তু তারপরও পৌর নিগমের আয়তন তার চেয়ে কম রাখা হয়েছে বিজেপির বর্তমান পৌর কমিশনারদের স্বার্থে। কাজেই বিজেপি দলের নেতাকর্মীরা যে প্রকৃতপক্ষে শিলচরের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে অনেক বেশি আগ্রহী এটা তার প্রত্যক্ষ প্রমান।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরো বলেন যে বিগত বন্যায় শাসকদলের বিধায়ক ও সাংসদের অকর্মন্যতা ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা সমগ্র শিলচরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন এবং জনগণের অপরিসীম ক্ষোভের আন্দাজ পেয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার এখানে এসে অবস্থা সামাল দিতে হয়েছে। তিনি বলেন যে এরপরও জনগনের সাথে কোনধরনের আলাপ আলোচনা না করে একতরফাভাবে পৌরকর ১০০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছকেছিল শাসকদল। এবং এই মর্মে আবেদন পত্র নির্ধারিত হয় সময়সীমার মধ্যে জমা না দিলে আইনি নোটিশ জারি হবে বলেও শিলচরবাসীকে হুমকি দিয়েছিলেন শাসক দলের বিধায়ক। প্রদীপবাবু বলেন যে শিলচরের স্বাভিমানী নাগরিকরা তখন এই অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল সরকার ও প্রশাসন। তিনি বলেন যে জনগন এসব কিছুই ভোলেন নি, এবং এইধরনের ঔদ্ধত্যের উচিত জবাব দেবার প্রতীক্ষায় রয়েছেন তারা। প্রদীপবাবু এদিন বলেন যে সম্প্রতি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে বরাক তথা শিলচরের কর্মপ্রার্থীদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বতস্ফুর্ত বনধের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জনগন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদদের কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি । অবস্থা বেগতিক দেখে আবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী শিলচরে এসে এই ব্যাপারে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে মোট উত্তীর্ণের কুড়ি শতাংশই নাকি বরাক থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিডিএফ এর পক্ষ থেকে বারবার সেই তালিকা প্রকাশের দাবি জানানোর পরও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি যারজন্য বাধ্য হয়ে এই ব্যাপারে আর টি আই আবেদন করতে বাধ্য হয়েছে বিডিএফ। তিনি বলেন এসব নিয়ে শিলচরের জনগন যে ক্ষুব্ধ তার প্রমান তারা বিভিন্ন ভাবে পাচ্ছেন। তিনি বলেন তাই তারা আগামী পৌরনিগম নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন যে বহুমুখী নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে শতাংশের হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পেয়েও নির্বাচনে জয় হাসিল করে নেয় বিজেপি । তাই এবার কৌশল পাল্টাতে হবে। যেহেতু জনগন সাথে রয়েছেন তাই প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে একক বিরোধী প্রার্থী দাড় করানো জরুরী এবং এই ব্যাপারে তাই উদ্যোগী হয়েছে বিডিএফ।
তিনি বলেন তাঁদের সাথে ইতিমধ্যে সব বিরোধী দলের নেতাদের প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। তিনি আবারও বিডিএফ এর পক্ষ থেকে সমস্ত বিরোধী দলকে এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই ব্যাপারে একজোট হবার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং অবিলম্বে এই ব্যাপারে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন যে তারা আশাবাদী যে বিজেপি দলের অপশাসন ও ঔদ্ধত্য থেকে শিলচর বাসীকে মুক্তি দিতে সবাই এক মঞ্চে এসে যৌথ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করবেন।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে শিলচরের নাগরিকদের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। পুরকর্মীদের চাকরি প্রতিশ্রুতি স্বত্তেও স্থায়ীকরণ হচ্ছে না।সরকারি বদান্যতায় বিগত কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ হয়েছে অথচ এই নিয়ে শাসকদলের নেতারা সম্পুর্ন নীরব। রয়েছে আবর্জনার সমস্যা, নিত্য যানজটের সমস্যা। তিনি বলেন যারাই আগামী পৌরবোর্ড গঠন করুক, এসব সমস্যাকে গুরুত্ব দিতেই হবে। তিনি বলেন ইদানীং কাছাড় ওনজিসি এ্যসেট ম্যানেজারের সাথে কথাবার্তার পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে শিলচরে প্রতিঘরে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোন সমস্যাই নেই। শুধু সরকারি অবহেলা ও প্রশাসনিক গাফিলতির জন্য ব্যাপারটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এই ব্যাপার নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। জয়দীপ আরো বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে এবার পৌরসভায় তার দলের প্রার্থীরা দলের প্রতীক চিহ্ন ব্যাবহার করবেন না। তিনি বলেন যদি দিল্লি পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি নিজ প্রতীক চিহ্ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে তবে আসামের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন ? তিনি বলেন এর অর্থ হচ্ছে বিজেপি জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। জনগন যে তাদের সাথে নেই দিল্লি পৌরনিগম নির্বাচনে তা প্রমানিত হয়েছে। এবার শিলচর পৌরনিগম নির্বাচনে এটা আবার প্রমানিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিডিএফ যুবফ্রন্টের মূখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত, কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খাইদেম কান্ত সিং, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে প্রমুখ।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে।
Comments are closed.