ইতিহাস ঘেটে দেখুন তবে বুঝতে পারবেন বাঙালিরা এই দেশে বরাবরই ভূমিপুত্র : রাজদীপ
নেহেরু এবং জিন্নাহ’র ক্ষমতার লোভের কারণে দেশ ভাগ হয়েছে, আর সেইসঙ্গে বাঙালিরা হয়েছেন উদ্বাস্তু, আর এখন কি না প্রশ্ন উঠছে আমরা কে? হিন্দু বাঙালির অস্তিত্ব নিয়ে ভারতবর্ষে কারোরই প্রশ্ন করার কোন অধিকার নেই। সোমবার শিলচরে বিজেপি আয়োজিত কা’ সচেতনতা সভায় অংশগ্রহণ করে এ কথাগুলো বললেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়। তিনি সেইসঙ্গে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানালেন, যারা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন এবং জনগণের কাছে এ বিষয়ে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে।প্রকাশ্যে এসে এ নিয়ে বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বললেন, যদি যুক্তি দিয়ে আমাদের হারাতে পারেন তবে রাজনীতি ছেড়ে দেব।
সোমবার বিকেলে নরসিংটিলা ময়দানে বিজেপি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী কা- বিষয়ক সচেতনতা সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই উদ্বাস্তু সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, সংসদে যখন প্রথম বক্তব্য রাখতে যাই, তখন অনেক গবেষণা করে পাতার পর পাতা লিখে নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু যখন বক্তব্য রাখতে যাই, তখন পূর্বপুরুষদের যন্ত্রণায় বুকের ভেতরে যেন এক কষ্ট অনুভব করলাম। তাই তারপর যা বললাম সেটা ছিল আমার অন্তরের কথা। আমাদের পূর্বপুরুষদের রাতের অন্ধকারে কোনোক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে শুধু নিজের দেশ নয়, প্রায় সর্বস্ব পেছনে ফেলে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। এতদিন তো সে যন্ত্রণা আমাদের বুকেই চাপা ছিল। এমনকি কংগ্রেসও দীর্ঘদিন আমাদের দমিয়ে রেখেছে। অথচ আজ যখন নরেন্দ্র মোদী এত বছরের অভিশাপ মোচন করতে সরব হয়েছেন, তখন তাকে আমরা সমর্থন করবো না, এ হতে পারে?
তিনি তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন যে দেশভাগের পর পাকিস্তান নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে ধর্মের ভিত্তিতে। হিন্দুরা অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর এখন যেভাবে খিলঞ্জীয়া ভূমিপুত্র নিয়ে নতুন এক ধারণা তৈরি করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা মোটেই সঠিক নয়।ভারতবর্ষের ইতিহাস কেউ যদি ঘেটে দেখেন তাহলে অনায়াসে বুঝতে পারবেন বাঙালিরা এই দেশে সবসময়ই ভূমিপুত্র।কাজেই আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার আমরা কোনোভাবেই কাউকে দেইনি এবং দেব না। এই অবস্থায় তিনি প্রকাশ্যে এ নিয়ে বিতর্কের জন্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানান। বিতর্কের মাধ্যমে আমরা যে ভুল তা প্রমাণ করুন।
তিনি সুস্মিতা দেবের উপর এক হাত নিয়ে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব সহ অন্যান্য নেতারা বরাক উপত্যকায় দাঁড়িয়ে এক ধরনের কথা বলেন, আর গুয়াহাটি এবং দিল্লিতে গিয়ে তাদের সুর পাল্টে যায়। কা’ মুসলমান সম্প্রদায়ের পরিপন্থী বলে তারা মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন।
তিনি তার বক্তব্যে প্রশ্ন তোলেন, ভারতের স্থায়ী মুসলমানরা এই আইনের ফলে নাগরিকত্ব হারাবেন বলে কোথায় বলা হয়েছে?তারা যদি প্রমাণ করতে পারেন যে এই আইনের ফলে একজন ভারতীয় মুসলমানও নাগরিকত্ব হারাচ্ছেন, তাহলে আর রাজনীতি করবো না বলে রাজদীপ রায় উল্লেখ করেন।আর যদি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে তাদেরকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
তিনি তার বক্তব্যে এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতায় এসে বেলুড়মঠে রাত কাটান। কোন বড় হোটেলে থাকার চেয়ে তিনি বেলুড় মঠকেই বেছে নিলেন। এরকম একজন মানুষ আমাদের নেতা বলে গর্বে আমাদের মাথা উঁচু হওয়ারই কথা। তিনি আরো বলেন, কা’ পাস হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি সবাইকে অভয় দিয়ে বলেন যে সবাই নাগরিকত্ব পাবেন। যাদের পূর্ব পুরুষরা নির্যাতিত হয়ে এ দেশে এসেছেন তাদের কোন ভয় নেই। তারা সবাই নাগরিকত্ব পাবেন, তা নিশ্চিত।
এদিনের সভায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, শিলচর মন্ডল বিজেপির সভাপতি দীপায়ন চক্রবর্তী, শিলচর পুরসভার সহ-সভানেত্রী চামেলি পাল সহ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করেন।
Comments are closed.