"যে নেতা, ইতিহাস আমাদের নয়- তা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ না করলে উনিশে মে নিয়ে কথা বলা আমাদের সাজেনা": ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য
আজ শহিদ দিবস, ১৯৬১’র ভাষা আন্দোলনে ১১ জন ভাষা সেনানির আত্মত্যাগকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সমগ্র বরাক উপত্যকা। কৃষ্টি বিবেক সংস্কৃতি সংস্থার শিলচর শহরের চাঁদমারি এলাকায় অবস্থিত নিজস্ব গৃহের সম্মুখে এক ‘নান্দনিক” ভাষা শহিদ স্মারক উন্মোচন হলো আজ।
উন্মোচন অনুষ্ঠানে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য, ডঃ অমলেন্দু ভট্টাচার্য, শ্রী অতীন দাস, শ্রী সঞ্জীব দেব লস্কর, ডঃ বিশ্বতোষ চৌধুরী, শ্রী বাবুল হোড়, বাংলাদেশ থেকে আগত আমিনুল ইসলাম বাবু প্রমূখ।
মুখ্য অতিথির ভাষণে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, “বারবার অজুহাত সৃষ্টি করে – যে নেতা আমাদের নয়,যে ইতিহাস আমাদের নয়, তা যদি চরম ঔদ্ধত্যে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। শহর জুড়ে বা শহরতলীতে বড় বড় হোর্ডিংয়ে – যে নেতা আমাদের নয়, যে ইতিহাস আমাদের নয় সেগুলো যদি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়; আর আমরা যদি প্রতিবাদ না করি তবে উনিশে মে নিয়ে কথা বলা আমাদের সাজেনা; আমরা তার অধিকার হারিয়েছি বলতে হয়। প্রতি মুহূর্তে এমন কেন হবে যে- রবীন্দ্রনাথের ভাষা, জীবনানন্দের ভাষা, নজরুলের ভাষা, শামসুর রহমানের ভাষায় কথা বলায় আমাকে সব সময় মরমে মরে থাকতে হবে ?”
কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক অতীন দাস এই অনুষ্ঠানে আশা ব্যক্ত করে বলেন,” আমি আশা করি, যে স্থানে এই শহিদ স্মারকটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার আশেপাশে কেউ যেন নিরক্ষর না থাকে।”
অধ্যাপক ডাঃ বিশ্বতোষ চৌধুরী বলেন, “কৃষ্টি বিবেক সাংস্কৃতিক সংস্থার এই শহিদ স্মারক ভীষণ নান্দনিক হয়েছে। শিলচর শহর বা শহরতলীর কেউ যদি এদিকে যান তাহলে একবার দাঁড়িয়ে দেখবেন এই বেদিকে।”
বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের বরাক উপত্যকার সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর বলেন, “আমরা যদি নিজ ভাষাকে পরিত্যাগ করে অন্য ভাষা গ্রহণ করি, তবে আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো হবে না। বাংলাভাষী অসমীয়া পরিচয় বহন করার জন্য নিজেরা চেষ্টা করছি, অন্যদেরকে ও অনুপ্রাণিত করছি। দুঃখের সঙ্গেই বলছি, এই যে শত্রু, এরা কিন্তু বাইরের কেউ না, এরা আমাদের নিজের। এবারের সংগ্রাম আমাদের নিজেদের সঙ্গে নিজেদের।”
বাংলাদেশ থেকে আগত আমিনুল ইসলাম বাবু সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “আজকে বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের সাথে অনেকটাই মেলবন্ধন হয়েছে এবং এই মেলবন্ধনের সূত্রপাত হয়েছিল আমরা যখন ১৯৯৮ সালে প্রথম নাটক করতে এসেছিলাম এই কৃষ্টি বিবেকের আমন্ত্রণে। যার জন্য আমি বাংলাদেশ তথা সিলেটের অনেকের পক্ষ থেকে কৃষ্টি বিবেকের কাছে কৃতজ্ঞ। আজকে যে মিলন তৈরি হয়েছে সেটার সেতুটা তৈরি করে দিয়েছিল কৃষ্টি বিবেক। আর আজকে এই মুহূর্তে এই অনুষ্ঠানে কৃষ্টি বিবেক এই অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে সংস্থার শিল্পীদের দ্বারা সমবেত সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন সীমা পুরকায়স্থ, নৃত্য পরিবেশন করেন কস্তুরিকা চৌধুরী, আবৃত্তি করেন বিজয়তা হালদার এবং স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান প্রবাল কান্তি দেব।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সংস্থার সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
Comments are closed.