কালচার-বায়োপসি পরিক্ষায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস-ই ধরা পড়েছে মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রোগীর
শেষমেষ শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করিমগঞ্জের রোগী ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যার পোশাকি নাম মিউকর মাইক্রোসিসে-ই আক্রান্ত। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমবার খবর পাওয়া যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ দেখা গেছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বাকি ছিল যার রেজাল্ট না এলে পরিষ্কারভাবে বলা যায়না, রোগীটি আদৌ ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের সহকারী অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত জানিয়েছেন, বায়োপসি এবং কালচার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে রোগী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেই আক্রান্ত। অর্থাৎ এটাই বরাক উপত্যকার এই বছরের প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা।
গত রবিবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছিলেন, রোগীটি ৫ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতাল ভর্তি হয়েছিলেন। ১১ মে তার রিপোর্ট নেগেটিভ হয় কিন্তু শ্বাসকষ্ট ছিল। পরবর্তীতে শিলচরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয় সেখান থেকে মুক্ত হয়ে কিছুদিন পর আবার অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। শেষমেষ ২৬শে মে শ্বাসকষ্ট সহ চোখের সমস্যা নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তার শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে স্টেরয়েড গেছে, ফলে দুর্বলতা অনেকটাই রয়েছে। তার এক চোখে দেখতে না পাওয়া এবং একটা নাক বন্ধ থাকার পেছনে যেসব লক্ষণ দেখা গেছে, তার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণের মিল রয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় তার শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ চোখে পড়েছিল। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হয়ে এবং রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন রোগীর চিকিৎসা চলছে তবে তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল। ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। এবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় যখন তার রিপোর্ট পজিটিভ, তখন একেবারে নিশ্চিত হয়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসার কাজ শুরু করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছেন, অন্তত দুই সপ্তাহ একটি বিশেষ ইনজেকশন সহ অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা হবে রোগীর। তবে সুস্থ হতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। পরবর্তীতে তাকে বিভিন্ন ট্যাবলেটের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। গুয়াহাটি থেকে বিশেষ চিকিৎসকের দল পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া তদারকি করছেন। এবার প্রয়োজনে তারা শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করতে পারেন।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, “মিউকর মাইক্রোসিসে ব্যক্তিটি আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন। তার শরীর দুর্বল তবু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই হাসপাতালে অতীতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা হয়েছে এবং রোগী সুস্থ হয়েছেন। রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কিছু লক্ষণ চোখে পড়ার পর বিভিন্ন বিভাগের সেরা ডাক্তারদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। তারা রোগীর চিকিৎসায় পুরোপুরি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র যোগান রয়েছে এবং বাকিটা স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে জোগান দিচ্ছেন। রোগীর শরীরের দুর্বলতা রয়েছে তাই আমরা একটু আতঙ্কে রয়েছি। কিন্তু কোনভাবেই জনমনে এনিয়ে অযথা আতঙ্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমি মনে করিনা।”
Comments are closed.