বাঙালিদের উদ্দেশ্যে হিমন্তর বার্তা: দুর্গাপূজায় শিলিগুড়ি থেকে ঢাক আনলে ঢোল আনুন মাজুলি থেকে
বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসবাসরত কিছু বুদ্ধিজীবীদের উত্তেজক মন্তব্যে আসাম এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছে। একদিকে বরাক উপত্যকার জনগণ বাজি পটকা ফাটিয়ে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ কে স্বাগত জানিয়েছেন, অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অধিবাসীরা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ধরনের ভিন্ন দৃশ্যপট বিজেপির সামনে এলেও এর মোকাবিলায় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও সর্বানন্দ সোনোয়ালের প্রচেষ্টা শুধু আসামে নয় বরং পুরো উত্তর পূর্বাঞ্চলে দৃঢ় অবস্থান প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। বিবেকানন্দ ইন্টার্নেশনাল ফাউন্ডেশনের “বিমর্ষ অন ইন্ডিয়া’স নর্থ ইস্ট: ফ্রম পেরিফেরি টু কোর” এ উত্থাপিত একটি প্রশ্নের জবাবে গতকাল আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আসামে বসবাসরত বাঙালি হিন্দুদের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেন।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ” ১৯৭১ সালের আগে আসামে আসা হিন্দুদের কি হবে, ১৯৭১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যারা এসেছেন তাদের প্রতি এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন যত্নশীল হবে কি?” উত্তরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, যারা ১৯৭১ সালের আগে এসেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি জাতি, সম্প্রদায় ও ধর্মের বিবেচনা না করে বরং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে আসাম চুক্তি অনুযায়ী গ্রহণ করা হবে।
এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আসামের বাঙালিদের প্রতি তার একটি বার্তা দেন, “আসামের বাঙালিদেরও অসমিয়া জনগণের অনুভূতির মর্যাদা দিতে হবে”। সঙ্গে তিনি আরো যোগ করে বলেন, ” কেন এখনও আসামে বাঙালি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলি বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়, যেখানে শিশুরা হয় ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় বা অসমিয়া মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে যেতে পারে, বলা যায় এটি একটি সঠিক সমীকরণের দৃঢ় সংকেত বহন করে”।
এরপর বিশ্ব শর্মা উৎসবগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাঙালিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ” জাঁকজমকের মাধ্যমে দুর্গাপূজা করুন, কিন্তু দূর্গা পূজায় ব্যবহৃত সামগ্রী হিসেবে যখন শিলিগুড়ি থেকে কিছু সামগ্রী নিয়ে আসেন তখন অবশ্যই কিছু সামগ্রী মাজুলী থেকেও নিয়ে আসবেন। পুজো মণ্ডপে শিলিগুড়ি থেকে ঢাক নিয়ে আসলে বাধা নেই, কিন্তু আমাদের গ্রাম থেকে ঢোলও নিয়ে আসবেন।”
তিনি আরো মতামত ব্যক্ত করেন যে, বাঙালি এবং অসমিয়া জনগণকে সম্প্রীতির সাথে থাকতে হবে। আর যদি আমরা সেভাবে থাকতে পারি তবে আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। সম্মিলিত প্রয়াসে এমন একটি সমষ্টিগত আসাম অনিবার্যভাবে ভারতকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে। এখানে আপনার এবং আমার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দুর্গাপূজার সঙ্গে বিহুও আমাদের উদযাপন করা উচিত একইভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনায়। আমাদের জনগণকে বলতে হবে যে, যদি আপনার সন্তান অসমিয়া মাধ্যম স্কুলে যেতে চায়, তবে আপনার সন্তানকে বাধা দেবেন না। কারণ অসমিয়া ও বাংলা দুটো ভাষাই সংস্কৃত থেকে এসেছে। এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত, গত শতাব্দীতে মূলত ভাষাগত কারণে বড় ধরনের পার্থক্য গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন আমাদের একটি সুসম্পর্কিত জোট নির্মাণ করতে হবে। নাহলে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক আক্রমণ বন্ধ করতে আমরা সক্ষম হব না। আর আসামকে পরবর্তী কাশ্মীরে পরিণত হতেও রুখতে পারবো না” বললেন বিশ্ব শর্মা।
Comments are closed.