Also read in

জাতীয় স্তরের পুরস্কার পাচ্ছে বিশ্বজিৎ শীল-পার্থ শীলের শর্ট ফিল্ম 'ক্রিমেশন ডাইরি'

ভারত সরকারের পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং ট্রাস্ট (পিএসবিটি) এবং দলাই লামার ফাউন্ডেশন ফর ইউনিভার্সেল রেস্পন্সিবিলিটির যৌথ উদ্যোগে দেশের সেরা শর্টফিল্মের কাজের পুরস্কার দেওয়া হয়। তারা মূলত ফিল্ম নির্মাতাদের কাজের মানবিক দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। করোনাকালে শিলচরের রাইজিং ইউথ সোসাইটির সদস্যরা যে সেবা দিয়েছেন, তাকে সামনে রেখে ‘ক্রিমেশন ডাইরি’ নামের একটি ৯ মিনিটের শর্ট ফিল্ম বানিয়েছেন বিশ্বজিৎ শীল। সেই ডকুমেন্টারিটি পিএসবিটি ফিল্ম চ্যালেঞ্জ ২০২০-২১-য়ে ফার লোটাস অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাচ্ছে।

গতবছর করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন সাংবাদিক তথা ফিল্ম নির্মাতা বিশ্বজিৎ শীল। তিনিও তার মাকে হারিয়েছেন এবং জটিল পরিস্থিতিতে সমাজে কিছু মানুষের মানবিকতা তার মন কেড়েছে। বরিষ্ঠ চিত্র-সাংবাদিক পার্থ শীলকে সঙ্গে নিয়ে একটি শর্ট ফিল্ম বানানোর কাজে হাত দেন তিনি, এডিটিংয়ে তাকে সাহায্য করেছেন মৃণাল ধর। গত বছর অক্টোবর মাসে তারা কাজ শুরু করেন এবং এই বছর জানুয়ারি মাসে পিএসবিটি ফিল্ম চ্যালেঞ্জ ২০২০-২১-য়ের জন্য সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি তাদের জানানো হয়েছে ফার লোটাস ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন তারা। এবার বিশেষ অনুদান পাবেন এবং তাদের ডকুমেন্টারি আন্তর্জাতিক স্তরে দেখানোর একটি সুযোগ রয়েছে।

বরাক বুলিটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিশ্বজিৎ শীল বলেন, “কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে করোনাভাইরাসের সম্পর্ক থাকলে তার পরিবারের সদস্যরা দাহ করতে পারবেন না, এমনটাই ছিল নিয়ম। তখন জানলাম শিলচর শহরে একদল যুবক এই কাজটি করছে। তবে তাদের জীবনের কঠিন দিকগুলো তখন জানতাম না। শহরে থেকেও তারা নিজের পরিবারের সদস্যদের মুখ দেখতে পারে না। একটি ছেলে মায়ের ওষুধ দিতে বাড়িতে গিয়েছিল, এলাকার লোকেরা তার উপর হামলা চালান। এমন আরও ঘটনা আমার চোখে পড়েছে। শুধুমাত্র নিঃস্বার্থ সেবা দেওয়ার জন্যে তাদের এমন দিন দেখতে হয়েছে। আমি ঠিক করি তাদের নিয়ে একটা কাজ করব। গত বছর অক্টোবর মাসে কাজটি শুরু করি এবং বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে আমাদের পরিশ্রম করতে হয়। এক সময় পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং ট্রাস্ট (পিএসবিটি)-র পক্ষ থেকে ডাক পাই। ২৬ জানুয়ারি আমাদের ডেডলাইন ছিল কিন্তু কাজ শেষ করতে আরও দুদিন বেশি সময় লেগেছে, শেষমেষ ৩০ জানুয়ারির সেটা সাবমিট করা হয়েছে। এবার পুরস্কার এবং অনুদান পাওয়ার পর আমরা ডুকুমেন্টারি কে আরো একটু উন্নত করতে পারব, বিশেষ করে আমার মায়ের সঙ্গে কাটানো শেষ কিছু দিনের কথাগুলো বলা যাবে।”

বরিষ্ঠ চিত্রশিল্পী পার্থ শীল এর আগেও বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বন্যার সময়ে তার তোলা ছবি একসময় টুইটারে ঝড় তুলেছিল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড়রা সেটা শেয়ার করেছিলেন। সম্প্রতি গুয়াহাটিতে একটি রাজ্য স্তরের ফটো এক্সিবিশনে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। এবার বিশ্বজিৎ শীলের ডকুমেন্টারিতে তার কাজ জাতীয় স্তরে পৌঁছে গেছে।

এতগুলো প্ল্যাটফর্মে পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি আরেকটা বড় প্রাপ্তি হচ্ছে অনেকেই ডকুমেন্টারি দেখবেন এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ কাজ করবে। আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে ‘ক্রিমেসন ডায়েরি’ আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাবে।

Comments are closed.