Also read in

নিজের ক্ষমতায় ১০০ আসন আসবেনা, তাই কংগ্রেসের নেতা নিচ্ছে বিজেপি, পরে এদের 'ইউজ অ্যান্ড থ্রো' করবে, বললেন সুস্মিতা

“বিজেপির রাজ্য সভাপতি শিলচরে এসে বলছেন তারা আগামী নির্বাচনে একশোর বেশি আসনে জয়ী হবেন এবং তাদের সরকার হবে। অথচ পাঁচ বছর আগে তারা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার একটাও পূরণ হয়নি। সেটা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন তারা বরং অন্য দলের বিধায়ক এবং নেতাদের কিভাবে ভাঙ্গিয়ে নিজের দলে নেওয়া যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত। এতে স্পষ্ট, তারা নিজের ক্ষমতায় ১০০ আসন পাচ্ছেন না। দুঃসময়ে যারা কংগ্রেস ছাড়ছেন তারা অবশ্যই সুবিধাবাদী। তারা এটা বুঝতে পারছেন না বিজেপি শুধু তাদের ব্যবহার করে ফেলে দেবে, কোনওদিন যোগ্য সম্মান দেবেনা। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এর সব থেকে বড় প্রমাণ, বিজেপিতে এত কাজ করেও তার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না, এমনটাই বললেন প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব।

রবিবার তার বাড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সুস্মিতা দেব বিজেপির রাজ্য সভাপতির উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি বরাক উপত্যকায় এসে বলছেন অন্তত ১২টি আসনে আপনাদের বিজয় নিশ্চিত। তবে এর আগে আপনাদের কয়েকটা বিষয়ে বরাক উপত্যকার মানুষকে উত্তর দেওয়া উচিত। আপনারা এনআরসির নামে রাজ্যের বাঙ্গালীদের এতটা যন্ত্রণা দিলেন, শেষমেষ বলছেন আগামীতে আবার এনআরসি করবেন। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার কথা বলেন না এবং হিমন্তবিশ্ব শর্মা উল্টোপাল্টা মন্তব্য করেন। আপনারা পরিষ্কার করে বলুন এনআরসি ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে ১৯ লাখ বাদ পড়েছেন তাদের কি হবে এবং যাদের নাম চলে এসেছে তাদেরকে আবার নতুন করে ঝামেলা পোহাতে হবে?”

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার বঞ্চনা নিয়ে সুস্মিতার প্রশ্ন, “নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল, যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে সরকারি কার্যালয়ের গ্রেড থ্রি এবং ফোর স্তরে বরাক উপত্যকার যুবক-যুবতীরা প্রাধান্য পাবে, সেটা হয়নি। সম্প্রতি যত চাকরি হয়েছে তার মধ্যে বরাক উপত্যকার উপস্থিতি নগণ্য। বলা হয়েছিল বরাক নদীর উপরে পাঁচটি সেতু হবে, এর একটাও হয়নি, শুধু এক জায়গায় শিলান্যাস হয়েছে। মিনি সেক্রেটারিয়েটের জন্য শুধু জমি দেখা হয়েছে। নদী খননের নামে শুধু বালির সিন্ডিকেট হয়েছে, বরাক নদীকে আন্তর্জাতিক জলপথের সঙ্গে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পুরোটাই ধাপ্পা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন জাতি-মাটি-ভেটি সংরক্ষণ তার দায়িত্ব, অথচ বরাক উপত্যকার জমি জবরদখল করে মিজোরাম, তারা কিছুই করতে পারেন না। বরাকের জমি কি অসমের মাটি নয়? আমরা সীমান্তে গিয়ে ঢিল খেয়েছি, রঞ্জিত দাস কে আমি চ্যালেঞ্জ করছি পারলে সেই জায়গা পরিদর্শন করে আসুন। বড়খলায় বিজেপির একজন নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি মেরে খুন করা হয় অথচ এর কোনো বিচার হয়নি। এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলো নিয়ে বিজেপি কোন কথা বলতে চায় না। আগেরবারের প্রতিশ্রুতি যদি পূরণ করতে না পারেন তাহলে নতুন করে কোন মুখে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিজেপির নেতারা।”

মহাসড়ক নিয়ে তার বয়ান, “নীতিন গাডকারি একজন দক্ষ ব্যক্তি, আমি সাংসদ থাকাকালীন মহাসড়ক নিয়ে বারবার তার সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছুটা আশ্চর্য হচ্ছি তিনি মহাসড়ক শেষ না করে মূর্তি উন্মোচন করবেন। তবে আমি তাকে বলব শুধু মূর্তি উন্মোচন নয় আপনি মহাসড়ক পরিদর্শন করে আসুন, আসল সমস্যা কোথায় কেন কাজ হচ্ছে না এটা আপনি দেখলে ভালো হবে। এতবছর বিজেপি তরুণ গগৈর উপর দোষ চাপিয়ে চালিয়ে নিয়েছে, এবার তাহলে একই দোষে দোষী মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, কারণ তার শাসনকালে ও মহাসড়কের কাজ হয়নি। বিষয়টা শুধু রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে না রেখে আসল সমস্যা কোন জায়গায় সেটা খুঁজে বের করা বেশি জরুরি। আমাদের সরকার ব্রডগেজের কাজ যদি এগিয়ে না রাখতো তাহলে নরেন্দ্র মোদি ছয় মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কৃতিত্ব নিতে পারতেন না। মহাসড়ক নিয়ে কৃতিত্ব আপনারাই নিন কিন্তু কাজ শেষ করুন।”

সম্প্রতি প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী অজন্তা নেয়োগ সহ বেশ কয়েকজন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। কাছাড় জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা এবং প্রাক্তন বিধায়ক রুমি নাথ কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত এবং তাদের বিজেপিতে যোগদানের কথা বারবার উঠছে। এ ব্যাপারে সুস্মিতা দেব বলেন, “বিরোধীর আসনে বসে রাজনীতি করা অনেক কঠিন ব্যাপার। অনেকেই দুঃসময়ে দল ছাড়ছেন, এরা বিশ্বাসঘাতক। তারাই দলে থাকতে সবথেকে বেশি সুবিধা নিয়েছেন। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, অজন্তা নেয়োগ থেকে শুরু করে গৌতম রায়, প্রত্যেকেই কংগ্রেসে অনেক বেশি সম্মান পেয়েছেন; তবে বিজেপি এদেরকে নিজের স্বার্থে নিলেও কখনোই যোগ্য সম্মান দেবেনা, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ইউজ অ্যান্ড থ্রো করবে। আবার উল্টোটাও হবে, যেদিন বিজেপি ক্ষমতায় থাকবেনা এই লোকগুলোই আবার কংগ্রেস বা অন্যান্য দলের শরণাপন্ন হবে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থের মত নেতা যে বিজেপি করতেন সেটা এখন নেই, তাদের দলে এখন আর আরএসএস নীতিও চলে না। এখন যেটা আছে সেটা হল বিজেপি-এইচ, অর্থাৎ হিমন্তের বিজেপি।

তিনি আরও বলেন, “শিলচর শহর সহ বরাক উপত্যকায় অপরাধমূলক কাজের কোনও সীমা নেই এখন। প্রায় প্রতিদিন প্রকাশ্যে টাকা ছিনতাই হচ্ছে, অপহরণ হচ্ছে, সিন্ডিকেট চলছে। পুলিশ এখন অপরাধীদের ধরতে নয় সিন্ডিকেটরাজদের রক্ষা করতে ব্যস্ত। তাই সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।”

Comments are closed.