Also read in

টিকিট প্রত্যাশায় কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছেন বিজেপির তিন বিধায়ক, দাবি জেলা সম্পাদকের

দেশের রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে যে ট্রেন্ড চলছে, সেটা হচ্ছে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দল থেকে বিধায়ক, সাংসদ এবং বড় বড় নেতাদের বিজেপিতে যোগ দেওয়া। এই ধারা কাছাড় জেলায়ও দেখা গেছে। তবে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে নানা জল্পনা-কল্পনা গড়ে উঠছে। শিলচর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ পালের দাবি, ‘বিজেপির তিনজন বিধায়ক গত একমাস ধরে কংগ্রেসের হাইকমান্ডের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ করেছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে, এই নেতারা বিজেপিতে আগামী নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা পাবেন না, ফলে আগেভাগেই কংগ্রেসে যাবার রাস্তা পরিষ্কার করে রাখছেন। তবে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাদের কোনো সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি।

কোনও এক বিশেষ কাজে সম্প্রতি গুয়াহাটি গিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ পাল। সোমবার তিনি জেলায় ফেরেন এবং দলীয় কার্যালয়ে একটি বৈঠকে যোগ দেন। বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন,‌ “আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির হাই কমান্ড সূত্রে খবর পেয়েছি কাছাড় জেলার বিজেপির অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রায় এক মাস ধরে এই ধারা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিজেপির টিকিটে জেতা তিন বিধায়ক কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ সরাসরি কথাবার্তা বলতে চাইছেন। তারা বিজেপির ভেতরের অনেক বিষয় কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। এখনই আমরা তাদের নাম প্রকাশ্যে আনছি না তবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পুরো তথ্য প্রমান সহ জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।”

সম্প্রতি বিজেপির সদস্য পদ পাওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা রাজদীপ গোয়ালার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যদিও বিজেপি রাজদীপ গোয়ালাকে গ্রহণ করেছে এবং তাকে হয়তো আগামী নির্বাচনে প্রার্থীও করবে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, তিনি দল ত্যাগ করেননি বরং তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অবশ্যই এর পেছনে কারণ ছিল, তিনি দল বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। হয়ত বিজেপি যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছেনা তাই কংগ্রেসের বহিস্কৃত নেতাদের নিয়ে প্রার্থী করতে চাইছে। কংগ্রেস দল কিন্তু বিজেপির কোনও বহিস্কৃত সদস্যকে দলে স্থান দেয়নি বা তাদের ভরসায় নির্বাচনে লড়ার স্বপ্ন দেখেনা।”

উল্লেখ্য, ক্ষমতায় থাকা বিজেপির আগামী নির্বাচনে টিকিট বিতরণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। দলের সভাপতি রঞ্জিত দাস শিলচরে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, তৃণমূল স্তরের কর্মীরা যাকে পছন্দ করবেন টিকিট তিনিই পাবেন, এতে ২০১৬ সালে বিজয়ী হওয়া বিধায়কদের নাম বাদ গেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবেনা। কাছাড় জেলায় ছয়টি আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল, কংগ্রেসের কাছে ছিল একটি আসন। কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা সম্প্রতি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কাছাড়ে বিজেপির এবারের স্লোগান হচ্ছে ‘৭-০’, অর্থাৎ সবকটি আসনে দলকে জয়ী করার লক্ষ্য। রাজদীপ গোয়ালা নিজেও বলেছেন তিনি টিকিট পেতে বিজেপিতে যোগ দেননি, তবে লক্ষ্মীপুরে বিজেপির প্রার্থীকে জয়ী করার ক্ষেত্রে তার যোগদান থাকবে।

জেলার প্রায় প্রত্যেক কেন্দ্রে বিধায়ক ছাড়াও বেশকিছু বড়োসড়ো নাম এবার টিকিট প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন জেলা সভাপতি কৌশিক রাই, সাধারণ সম্পাদক কণাদ পুরকায়স্থ, তরুণ নেতা দ্বীপায়ন চক্রবর্তী সহ আরও অনেকেই। এদিকে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা রাজদীপ গোয়ালা, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় এবং তার ছেলে রাহুল রায় পর্যন্ত বিজেপির টিকিটের দাবীদার হিসেবে রয়েছেন। দলের ভেতরে অনেকে এমনটাও বলছেন, কাঠিগড়া, উধারবন্দ, বড়খলা এবং শিলচরে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে নতুন মুখ দেখা যাবে। অর্থাৎ এই চার সমষ্টির বর্তমান বিধায়করা দলের টিকিট পাচ্ছেন না। তবে পুরোটাই এখন জল্পনার স্তরে, বিজেপির তরফে শুধুমাত্র আমিনুল হক লস্করকে প্রার্থী করার ব্যাপারে পরিষ্কার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বাকি ক্ষেত্রে এখনো পুরোটাই ধোঁয়াশা।

কংগ্রেসের অভিজিৎ পালের মতই সম্প্রতি বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা প্রদীপ দত্ত রায় বলেছিলেন তিনি দল ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপির কিছু বিধায়ক এবং প্রাক্তন বিধায়ক তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা নতুন দলের ব্যানারে নির্বাচনে লড়তেও প্রস্তুত। অবশ্যই এই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ তিনি জনসমক্ষে এখনও তুলে ধরেননি। এবার কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদকের দাবি কতটুকু সত্য সেটা সময় বলে দেবে।

কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির সদস্যরা বলেছেন তারা এব্যাপারে পরিষ্কারভাবে কিছু জানেন না। এপিসিসির সম্পাদক পদে থাকা সঞ্জীব রাই বলেন, “বিজেপির কিছু নেতা কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, এটা ভুল তথ্য নয়। তবে এই তালিকায় কারা রয়েছেন এব্যাপারে আমাদের কোনও স্পষ্ট ধারনা নেই। অন্তত দলের হাইকমান্ড আমাদের সঙ্গে এব্যাপারে কোনও আলোচনা করেননি, ফলে এখনই আমরা জল্পনা-কল্পনায় যাচ্ছি না। যদি আগামীতে দলের হাইকমান্ড আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।

Comments are closed.