"রক্ত চুরি হয়নি, নিজেই গুনতে ভুল করেছিলাম, তাই মামলা প্রত্যাহার করেছি," বললেন ব্লাড ব্যাঙ্ক ইনচার্জ ডাঃ রাজীব বিশ্বাস
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ ডাঃ রাজীব বিশ্বাস প্রতিদিন রক্তের ইউনিটের স্টক গুনে দেখেন, বুধবার দুপুরেও এমনটাই করছিলেন। তবে গুনতে গিয়ে তার ভুল হয়, তিনি যোগ করতে গিয়ে গুন করেন এবং নিজেই নিজের ভুলে ফেঁসে যান। যেহেতু ব্লাড ব্যাঙ্ক বলে কথা, হিসেবে গরমিল থাকায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন। অভিযোগ, তার স্টক থেকে ব্লাড ইউনিট কমে গেছে, সন্দেহ হচ্ছে কেউ চুরি করে রক্তের প্যাকেট অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। ঘুংঘুর থানায় তিনি ব্লাড ব্যাঙ্কের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে পুনরায় ব্লাড ব্যাঙ্কে ফিরে এসে যখন দেখেন নিজেই অঙ্ক কষতে ভুল করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আবার পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশের কাছে পুরো ব্যাপার গুছিয়ে বলেন এবং মামলা প্রত্যাহার করেন। তবে ততক্ষণে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে হয়ে গেছে, এনিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা পর্যন্ত শুরু হয়ে গেছে।
দুই বছর আগে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথমেই পুরো ব্লাড ব্যাঙ্কে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে ছিলেন। শুধুমাত্র তার অফিসকক্ষ ছাড়া ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রত্যেক কোনায় ২৪ ঘন্টা সিসিটিভির নজরদারি রয়েছে। ফলে ভেতর থেকে যদি কেউ রক্তের প্যাকেট বের করে বাইরে নিয়ে যায়, সেটা সিসিটিভির আওতায় আসার কথা ছিল। রাজীব বিশ্বাস নিজেই এর তদারকি করেন এবং তারই দাবি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে চুরি করে বেরিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
তবে কেন তিনি মামলা করতে গেলেন? এর উত্তরে রাজীব বিশ্বাস বলেন, “আমি বিন্দুমাত্র সন্দেহ মনে রাখতে চাইনি, ফলে যখন দেখলাম ব্লাডের প্যাকেট আমার হিসেব থেকে কম, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি। অন্য কোনও বিষয়ে হয়ত এমনটা করতাম না, তবে যেহেতু রক্তের ইউনিট নিয়ে কথা, আমরা বিন্দুমাত্র খামতি রাখতে চাইনি। আমার মনে হয়েছিল যদি আদৌ প্যাকেটগুলো চুরি হয়ে থাকে, তাহলে কোনো না কোনো হাসপাতালে সেটা পৌঁছে যাচ্ছে, তাই আগে পুলিশকে খবর দিয়ে সেটা আটকানোর ব্যবস্থা করি। তবে আবার যখন ফিরে এসে দ্বিতীয়বার গুনতে লাগলাম, লক্ষ্য করলাম আমি নিজেই অঙ্ক কষতে ভুল করেছি। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি কথা এবং এটা একেবারেই ইচ্ছাকৃত নয়। খবরটি প্রকাশ্যে আসায় নানান জল্পনা দেখা দিতে পারে, তবে আমি আশ্বাস দিচ্ছি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে কোন প্যাকেট চুরি হয়নি, শুধুমাত্র ছোটখাটো ভুল বুঝাবুঝির জন্যই ব্যাপারটি হয়েছে। তবে এর একটি সুফল রয়েছে, আমরা আবার প্রমাণ করে দিয়েছি ব্লাড ব্যাঙ্ক নিয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কতটুকু সচেতন।”
অতীতেও শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্কের আশেপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন দালাল চক্র নিয়ে কথা উঠেছে এবং অভিযোগ ছিল ভেতরের অনেকেই এদের সাহায্য করেন। এখনও শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশে ঘুরলে শোনা যায় অনেকেই নিজেদের রোগীকে রক্ত পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ করেছেন। সম্প্রতি এক মহিলা জানিয়েছেন, এক ইউনিট বি-পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করতে তিনি কোনও এক ব্যক্তিকে সাত হাজার টাকা দিয়েছেন। অবশ্যই তিনি আগে সে কথা প্রকাশ্যে বলেননি এবং তার কাছে কোনও পর্যাপ্ত নথি নেই যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় তিনি এত টাকা দিয়েছিলেন। তবে এমন ঘটনা আরও অনেক রয়েছে এবং সবক্ষেত্রেই প্যাটার্ন একই, প্রত্যেকেই রক্ত সংগ্রহ করে রোগীকে দেওয়ার অনেক পরে এসে ঘটনার ব্যাপারে গল্প করেন, আগে বলেন না।
এক সময় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সবথেকে পরিচিত ছিলেন কাঁঠাল রোডের এক কর্মী। একসময় তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়, তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, শেষমেষ তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর দুই বছর পরেও তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এবার আরেক ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন ইনচার্জ রাজীব বিশ্বাস। তবে তিনি সময়মতো ভুল বুঝে সেটি প্রত্যাহার করায় হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তবে শুধু শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্ক নয়, জেলার প্রায় প্রত্যেক ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে জনগণের নানান অভিযোগ থেকেই যায়। বরাক ভ্যালি ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম বা স্মাইলের মতো সংগঠন সারা বছর স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করে। তবে তারাও ব্লাড ব্যাঙ্কের ব্যপারে বর্তমানের সরকারের নীতি নিয়ে খুশি নন।
Comments are closed.