
ঘরে ফিরে বিপুল অভ্যর্থনায় ভাসলেন সুস্মিতা, জানালেন, টি এম সিতে তিনি শুধু বুথ কমিটির সভাপতির পদ চাইবেন
১৯ আগস্ট : নিজের হোমটাউন শিলচরে পা রেখে বিপুল অভ্যর্থনায় ভাসলেন সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব। কংগ্রেসের হাত ছেড়ে ঘাসফুলে যোগ দেওয়ার পর আজই শিলচরে ফিরেন সুস্মিতা। তাকে স্বাগত জানাতে এদিন কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দরে প্রায় ২০০ জন সর্মথক হাজির ছিলেন। কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে বেশকিছু কর্মী-সমর্থক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তারাও এদিন বিমানবন্দরে সুস্মিতাকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন।
বিমানবন্দরে থেকে বেরিয়ে আসার পরই সমর্থকরা সুস্মিতাকে মালা ও উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান। এরপর বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫০০ গাড়ির মিছিল করে শিলচর কাছাড় ক্লাবে আসেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ। এই যাত্রাপথে সুস্মিতা সমর্থকরা মাইকে ‘খেলা হবে’ গান বাজান। কাছাড় ক্লাবে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের কাছাড় জেলার সচিব এম শান্তি কুমার সিংহ মহিলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতিকে রাজ্যসভার এমপি বলে ঘোষণা করেন। তবে সুস্মিতা এতে বাধা দেন। কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ বলেন, ‘আমি তৃণমূলে কোনো পদের জন্য আসিনি। এ সম্পর্কে আমি কোনো দাবি জানাইনি।’
নিজের ভাষণের শুরুতেই সুস্মিতা দেব সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা এক দীর্ঘ ও কঠিন লড়াই হতে যাচ্ছে। তাই সবাই তৈরি থাকুন। আজ আপনারা যেভাবে আমায় স্বাগত জানিয়েছেন, তার জন্য আমি প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই।’ প্রাক্তন সাংসদ আরো বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন আসন্ন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ও ঘনিয়ে আসছে। তবে আমাদের তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। মনে রাখতে হবে আমরা এখানে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য এসেছি। তৃণমূল কংগ্রেসে আমার যোগ দেওয়াটা কোনো স্বল্পমেয়াদী চুক্তি নয়। আমি একটা চিন্তাধারা নিয়ে এই পার্টিতে যোগ দিয়েছি।’
শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জল্পনা চলছে তাকে ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে সুস্মিতা মনে করেন এমন জল্পনা করা ঠিক নয়। কারণ তিনি সবে টিএমসি’তে যোগ দিয়েছেন। প্রাক্তন কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘আমি শুধু বুথ কমিটির সভাপতি পদ চাইবো। এরপর এটা দলের সিদ্ধান্ত হবে। ওরা যদি মনে করে আমি এর যোগ্য, তাহলে এই দায়িত্ব আমায় দেওয়া হবে। কাছাড়ের আমরা সবাই দলীয় কর্মী। এখানে কেউ নেতা নন। এখানে আমরা সবাই সমান এবং সবাই তৃণমূল স্তর থেকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। প্রথমে আমরা তৃনমূল স্তর থেকে কাজ শুরু করব। তারপর একটা জায়গা তৈরি করতে পারলে দলের নেতা নিয়ে চিন্তা করা যাবে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে শিলচরের দেব পরিবারের সম্পর্কটা অনেক দিনের। সুস্মিতার প্রয়াত পিতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেবের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সুসম্পর্ক ছিল। সুস্মিতা বলেন, ‘মমতাদি প্রমান করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়, গোটা দেশের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মমতাদি যেভাবে মোদি- শাহ নেতৃত্বকে পরাস্ত করেছিলেন, সেটাই প্রমাণ করে আম জনতার মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। আমি মমতাদিকে বলেছি আমরা কাছাড়ে তৃণমূল স্তর থেকে কাজ শুরু করব এবং তারপর দলের নেতা বাছাই করব। তিনি আমায় জানিয়েছেন, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করতে শিলচরে আসবেন। বল এখন আমাদের কোর্টে। একটা দল হিসেবে আমরা যতই কঠিন পরিশ্রম করব ততোই সাফল্য পাব।’
ঘরে ফিরে সুস্মিতা বিপুল অভ্যর্থনা পেলেও কাছাড়ে কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ভারতীয় জনতা পার্টির অবস্থান কাছাড়ে অনেক শক্তিশালী। গত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফলই এটা প্রমাণ দিচ্ছে। বিশেষ করে কাছাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে গড়ে তুলতে হলে তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই শুরু করতে হবে সুস্মিতাকে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সুস্মিতার বেশ ভালো ফ্যান বেস রয়েছে। সেইসঙ্গে দেব পরিবারের মেয়ে হওয়ার সুবাদে ও ভালো সমর্থন পেয়ে থাকেন তিনি। তবে এরপরও কিন্তু কাছাড়ে তার লড়াইটা খুবই কঠিন হতে যাচ্ছে। তিনি যখন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন তখন তার জন্য মঞ্চ সাজানো ছিল। সুস্মিতাকে তেমন আহামরি কিছু করতে হয়নি। তবে এবার খেলাটা ভিন্ন। এটা ভালো করেই জানেন সুস্মিতা। তাইতো তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর শিলচরে নিজের প্রথম ভাষণের শেষ টা করলেন ‘খেলা হবে’ এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে।
Comments are closed.