Also read in

অন্তিম সংস্কারে যোগ দেওয়ার মিথ্যে কথা বলে হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে বিপাকে ইটখলার ভাই-বোন

শিলচর ইটখলা এলাকার দিয়া ভড় এবং দীপনারায়ন ভড় নামের দুই ভাই-বোন বাড়িতে নিকটাত্মীয় কেউ মারা গেছে, এই মিথ্যা কথা বলে হোম কোয়ারেন্টাইনের অনুমতি আদায় করে এবার ফ্যাসাদে পড়লেন। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হল প্রশাসনের তরফ থেকে।

শুক্রবার বিমানে কলকাতা থেকে ফিরলে বিমানবন্দরে যখন উপস্থিত আধিকারিকরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলেন তখন দুজনে বলেন বাড়িতে তাদের একজন নিকটাত্মীয় মারা গেছেন এবং তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন দিয়ে দেওয়া হোক। কেন্দ্র সরকারের বেঁধে দেওয়া এসওপি’র মধ্যে এই সুবিধা না থাকলেও সরকারি আধিকারিকদের মানবিকতার খাতিরে কিছু করার ছাড় দেওয়ার কথা বলা আছে। সেই অনুযায়ী মানবিকতার খাতিরে তাদেরকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ এর সুবিধা প্রদান করা হয়।অথচ পরেরদিন সকালেই জানা গেল তারা দিব্যি এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। এরপর তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হল কড়া পদক্ষেপ। এবার তাদের পুরো বাড়ি কনটেইনমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান এব্যাপারে বলেন, “কেন্দ্র সরকারের বেঁধে দেওয়া এসওপিতে বাড়ির কেউ মারা গেছে বলে হোম কোয়ারেন্টাইনে যাবার অনুমতি নেই। তবে আমাদের বলা হয়েছে মানবিকতার খাতিরে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে। ১৯ বছরের দিয়া ভড় এবং ২৪ বছরের দীপনারায়ন ভড় যখন বলেছে বাড়িতে কেউ মারা গেছেন এবং তাদের সেখানে থাকতে হবে, আমরা বিশ্বাস করেছি। আমাদের আধিকারিকরা পারতেন তাদের কাছে প্রমাণ চাইতে, কিন্তু তারা সেটা করেননি। অথচ এই যুবক-যুবতী আমাদের মিথ্যে কথা বললেন। ইটখোলার একটি হাই স্কুলের পাশে তাদের বাড়ি। এলাকার মানুষ পরেরদিন দেখলেন, আগের দিন বিমানে ফিরে আসার দুই যাত্রী দিব্যি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে।” স্থানীয় জনগণ তা প্রত্যক্ষ করে কন্ট্রোল রুমে খবর দেন। সেখান থেকে আধিকারিকরা তৎক্ষণাৎ এলাকায় উপস্থিত হন এবং খোঁজ নিয়ে দেখেন যাত্রী দুজনের বাড়িতে কেউ মারা যাননি এবং কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজনও নেই। তাদের আবার জিজ্ঞেস করলে পরিষ্কারভাবে কিছু উত্তর আসেনি। তখন বোঝা যায় দুজন মিথ্যে কথা বলেছেন। অত্যন্ত নিকটাত্মীয় ব্যক্তি মারা যাওয়া বা তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান থাকলেই এভাবে মানবিক দিক দেখানো সম্ভব। তবে এই দুই যুবক যুবতী যেটা করেছেন সেটা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ। বিমানে যারা বাইরে থেকে ফিরছেন তাদের সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ করে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কেউ যদি হোম কোয়ারেন্টাইনে যান, তবে তাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা নীতি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুজন বাড়িতে যাবার পরেও যদি নিয়মগুলো মানতেন এবং জনসমক্ষে ঘোরাফেরা না করতেন, তাহলে হয়তো খুব একটা অসুবিধে হত না। এবার যদি তাদের মধ্যে কারও পজিটিভ আসে তবে যেসব এলাকায় তারা গেছেন সে গুলোকে কনটেইনমেন্ট জন করে দেওয়া হবে। ।

পাশাপাশি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে অনুরোধ রেখে এডিসি বলেন,” যদি নিজেরা সচেতন না হন তাহলে আমাদের কড়া পদক্ষেপ নিতেই হবে। ”

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যাত্রীরা চরম পর্যায়ে দুর্ব্যবহার করেছেন। করিমগঞ্জের এক যাত্রী আমাদের বরিষ্ঠ আধিকারিকের নাম ধরে ধরে কথা বলছিলেন। কেউ কেউ ইচ্ছেমতো খাবার নষ্ট করেছেন, আধিকারিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিয়েছেন, থুতু ফেলে সংক্রমণ ছড়াবেন বলে ভয় দেখিয়েছেন। এবং নিজেরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের ইচ্ছামত বদনাম করেছেন। আমরা প্রত্যেকে তাদের কথাগুলো ঠান্ডা মাথায় শুনেছি, কিন্তু প্রত্যেকের নাম নথিভুক্ত করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন।

সুমিত সত্যওয়ান জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৭৭৩১ জন ব্যক্তি বিমান, রেল এবং সড়ক পথে ফিরেছেন। এক সময় প্রতিদিন আটশ থেকে হাজার জন লোক ফিরছিলেন, এখন এই সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। পাশাপাশি সরকারি কোয়ারেন্টাইন থেকে যাত্রীদের মুক্তি দেওয়ার সংখ্যা ও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার একই দিনে ২৩৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তাদের সরকারের পক্ষ থেকে ২০০০ টাকা এবং বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়ার সরকারি প্রতিশ্রুতি ব্যাপারে তিনি বলেন, গাঁও পঞ্চায়েত বা পুরসভা প্রতিনিধিরা এব্যাপারে পরামর্শ দেবেন বলেই কথা রয়েছে। যেসব পরিবারে সাহায্যের প্রয়োজন তাদের তালিকা জনপ্রতিনিধিরাই দেবেন। আমরা এখন পর্যন্ত এধরনের কোনও তালিকা পাইনি, ফলে সুবিধাটি এখনও কাউকে পৌঁছানো হয়নি। তবে আমরা তৈরি রয়েছি, যদি জনপ্রতিনিধিরা এ ধরনের পরিবারের নাম আমাদের কাছে তুলে ধরেন আমরা তাদের সরকারি সাহায্য পৌছে দেব।

Comments are closed.

error: Content is protected !!