Also read in

কোভিড আবহে বাজি পটকা ফাঠাতে হলে ফাঁকা জায়গায় চলে যান, দেওয়ালিতে অভিনব পরামর্শ ডাঃ রবি কন্নানের

আগামীকাল কালীপুজো, এর আগে থেকেই শুরু হয়েছে বাজি-পটকা পোড়ানোর প্রক্রিয়া। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কয়েকটি বাজি-পটকা ছাড়া বাকি সবগুলোয় ছাড় দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাত দশটার পর সবকিছু বন্ধ রাখতে হবে। এবছরের কালীপুজো অন্য বছরের তুলনায় একটু আলাদা, এখনও করোনায় আক্রান্ত অনেকেই রয়েছেন, তবে এর থেকে বেশি রয়েছেন সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বেশিরভাগ লোকেদেরই ফুসফুস সাধারণ ব্যক্তিদের তুলনায় দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই দিক থেকে এই বছরের কালীপুজো এবং দীপাবলি উৎসবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত অন্যের কথা ভেবে আনন্দ উপভোগ করা, এমনটাই বলছেন উপত্যকার বিশিষ্ট চিকিৎসকরা।

পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ রবি কান্নানের মতে, যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অন্তত তিনমাস বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা উচিত। তবে দীপাবলিতে প্রায় প্রত্যেকেই চান বাজি পটকা ফাটাতে, এর একটি বিশেষ পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন তিনি। ডাঃ রবি কান্নান বলেন, “যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের ফুসফুস সাধারণ ব্যক্তিদের থেকে অনেকটাই দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকেই করোনা মুক্ত হলেও এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তারা আমাদের আশেপাশেই রয়েছেন, একটু খোঁজ নিলেই পাওয়া যাবে। তাদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে, সেটা হচ্ছে পারিপার্শ্বিকে বিষাক্ত ধোঁয়া না ছড়ানো। তাই এবছরের দীপাবলিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বাজি পটকা ফোটাতে হবে। তবে, বছরে একবারই দীপাবলি উৎসব পালন করেন মানুষ, আমরা যতই তাদের বিধিনিষেধ দিই, কিছু তো বাজি-পটকা ফোটানো হবেই। অন্যদের জন্য বিপদ ডেকে না এনে আনন্দ করার একটি রাস্তা আমরা বলে দিতে পারি। এলাকায় প্রত্যেক ব্যক্তি একসঙ্গে কোনও একটি ফাঁকা জায়গায় চলে যেতে পারেন, সেখানে সবাই মিলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে বাজি পটকা ফোটালেন এবং বাড়ি চলে এলেন। সেটা কোনও ফাঁকা মাঠ হতে পারে যেমন ডিএসএ মাঠ অথবা শহরের বাইরের কোনও নির্জন জায়গা। এতে জনবহুল এলাকায় বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়াবে না এবং পরিবেশ স্বচ্ছ থাকবে।”

আরেকজন বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, “এই বছর দীপাবলি অন্য বছরের তুলনায় আলাদা। আমরা এখনও করোনা পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত হয়ে যাইনি, তাই আমাদের চলাফেরা আগের মত হলে হবে না। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুসের দুর্বলতা স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা সুস্থ হয়েছেন তাদেরও নানান সমস্যা থাকতে পারে, যেটা আমাদের চোখে পড়ছে না। এই সময় যদি পরিবেশে অত্যধিক বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, অনেকেই গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কেউ যদি আমাদের আনন্দের শিকার হয়ে কষ্ট পান সেটা অবশ্যই কাম্য নয়। আমরা আনন্দ করবো কিন্তু এতে আমাদের পারিপার্শ্বিকের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এটা মনে রাখতে হবে। এজন্য এবছর যত কম সম্ভব বাজি পটকা ফোটাবেন।”

যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাদের প্রতি বাবুল বেজবরুয়ার বার্তা, “আপনারা সর্বাবস্থায় বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে দূরে থাকবেন। ঘরের ভেতর থাকবেন এতে সরাসরি বাজি পটকা ধোঁয়া নাকে মুখে ঢুকবে না। দীপাবলী আলোর উৎসব, ঘরে থেকে পরিবারের সঙ্গে আলো জ্বালিয়ে উৎসবটি পালন করুন। বাজি পটকা ফোটাতে গেলে সেই ধোঁয়ায় আপনার ফুসফুসের এমন কোনো ক্ষতি হতে পারে যেটা অপূরণীয়।”

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই বছর বাজি পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য বছর অনেকেই এটা নিষিদ্ধ করেন তবে এই বছর একটু আলাদা। অসমে দুর্গাপূজার সময় নানান বিধিনিষেধ গড়ে তুললেও কালীপুজোয় প্রায় সব কিছুতেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেখানে সারাদেশে বাজি পটকা ফোটাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, কাছাড়ের প্রশাসন প্রায় সব ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই শুধুমাত্র প্রশাসনের উপর আঙ্গুল তুললেই হবে না। এসব ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কথা শোনেন না। আমরা বাজি পটকা ফোটানোর সময় চিন্তা করি না, পাশের বাড়িতে কোনও বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন বা শিশু রয়েছে কি না। তবে এই বছর এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরাও। শিশু, বৃদ্ধ এবং করোনা আক্রান্তরা বাজি-পটকার আওয়াজে এবং ধোঁয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন, এই কথা মাথায় রেখেই আমাদের উৎসবের আনন্দ উপভোগ করা উচিত।

Comments are closed.