
কাছাড় জেলা প্রশাসন নিষিদ্ধ করলো ই-রিকশা : পরিবেশ বান্ধব যুক্তিগুলি কোনো জায়গা পেলো না!
মহাপুরুষেরা বলে গেছেন “যত মত, তত পথ”, কিন্তু বেশি পথের সৃষ্টি হলেও সমস্যা তৈরি হতে পারে, এবং বেশি বিকল্প একাধিপত্যকে প্রত্যাহ্বান জানাতে পারে। বরাক উপত্যকায় আমরা প্রায় একই জিনিস প্রত্যক্ষ করছি, শিলচরে এবং তার আশপাশ এলাকায় অটোরিকশাগুলি একচেটিয়া আধিপত্য উপভোগ করেছে কম দূরত্বের যাত্রার ক্ষেত্রে।
যাত্রীরা আজ একটি সম্পূর্ণ অটো রিকশা রিজার্ভ করেন বা রোটেশনে রিকশা ভাড়া করে তাদের প্রত্যাশিত গন্তব্যে পৌঁছেন।রোটেশনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ভাড়া রয়েছে, রিজার্ভের ক্ষেত্রে দরকষাকষির দক্ষতার উপর নির্ভর করে ভাড়া।সম্প্রতি, ই-রিক্সা বাজারে প্রবেশ করে, যেমন তার নামটি ঠিক তেমনি এইগুলি বৈদ্যুতিকভাবে চার্জ করা যানবাহন যেগুলোকে পেট্রোল চালিত ইঞ্জিনের পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় সংসদ ২০১৫ সালের মার্চ মাসে মোটর ভেহিক্যোল বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে ই-রিক্সাগুলিকে বৈধ বলে ঘোষণা করে।
একটি নতুন সত্তার প্রবেশ বিদ্যমান অটো-রিকশা চালকদেরকে গভীর ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছে। গত বছর দুর্গা পুজোর সময় শিলচরের বাসিন্দারা এই ই-রিক্সাগুলিকে প্রথমবারের মত প্রত্যক্ষ করেন এবং তখন থেকেই তাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে যদিও হাইলাকান্দি জেলায় ই-রিক্সা বেশ আগে এসেছিল এবং কালো-হলুদ হুডের অটো-রিক্সাগুলিকে প্রায় প্রতিস্থাপিত করে ফেলেছে। এই বিদ্যুৎচালিত বাহনগুলি জেলার বেকার যুবকদের জন্য একটি ভালো আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিলচরে বাসিন্দারাও ই-রিক্সার প্রবেশে উৎসাহিত হয়েছেন, অনেকে তো উৎসাহের বশে এগুলিতে যাত্রা করার চেষ্টা করেছেন।
অটো রিক্সা চালকরা এই উৎসাহ দেখে বিরক্ত হয়েছেন, তারা ভীতিগ্রস্ত যে এই ই-রিক্সাগুলি তাদের রোজগার ছিনিয়ে নিতে পারে যেটা আগে শুধুমাত্র তাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এবং সেই কারণে তারা ই-রিক্সাগুলির অনধিকার প্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। হরতালের আহ্বান জানানো হয়েছে, বিভিন্ন অটো-রিক্সা ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে যা স্থানীয় দৈনিকেগুলোর শিরোনাম দখল করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তারা কি চায়? আমাদের সংবাদদাতা এই উত্তরগুলি খোঁজার জন্য বিকাশ ভট্টাচার্যের সাথে কথা বলেন যিনি অটো মালিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন যে ট্রাফিক জ্যাম বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দর্শিয়ে প্রশাসন শিলচরের অটো রিক্সাগুলির পারমিট ১৬ থেকে হ্রাস করে ১০ কিলোমিটার করেছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে রাজ্যের বাকি টাউনগুলিতে ১৬ কিমিই রয়েছে পারমিট কিন্তু শুধু শিলচরের ক্ষেত্রে সেটাকে হ্রাস করা হয়েছে।একই কর্তৃপক্ষ ই-রিকশাগুলিকে টাউনে চালানোর অনুমতি দিচ্ছে, কিভাবে অটো রিকশা ট্র্যাফিক বৃদ্ধি করে এবং ই-রিক্সাগুলি করেনা সেটাই তাদের মূল যুক্তি। তিনি বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ই-রিকশাগুলির গতিবিধি সংক্রান্ত একটি স্পষ্টীকরণ দাবি করছি কারণ আসাম সরকারের গেজেট নির্দেশিকার ভিত্তিতে (তারিখ ১ এপ্রিল,২০১৬) তাদের পৌর এলাকায় প্রবেশ করার কথা নয়।”
মনে হচ্ছে তারা মঙ্গলবার এই তরজার লড়াই কিছুটা জিতে গেছেন, বিভিন্ন অংশীদার এবং জেলা প্রশাসনের মধ্যে হওয়া একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ই-রিক্সাগুলি পৌর এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। ২০১৬ সালের গেজেট নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে ইলেকট্রনিক রিক্সাগুলি কেবল শিলচর পৌর এলাকা এবং তার আশপাশ অঞ্চলের সাথে একটি সংযোগ সাধনের মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, এটাকেই পৌর এলাকার ই-রিকশা নিষিদ্ধের পেছনে যুক্তি হিসেবে দর্শানো হয়।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জেলা পরিবহন অফিসার অংশুমান বিশ্বাস বলেন, “ই-রিকশাগুলিকে জেলায় পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হবে নিয়ম অনুযায়ী যেগুলি আগে থেকে নির্ধারিত রয়েছে, এবং সে অনুযায়ী, তাদেরকে শিলচর পৌর এলাকার বাইরে চালাতে বলা হয়েছে।”
যেহেতু ই-রিকশা মালিকদের কোনো সুসংগঠিত সংগঠন এখন পর্যন্ত নেই, তাই আমরা সামিম আলম বরভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলি যিনি জাহাঙ্গিধ মোটর্সের মালিক, যা বরাক উপত্যকায় সিংহভাগ ই-রিক্সা বিক্রি করে। তিনি আমাদের বলেন যে পরিবর্তন হল জীবনের একমাত্র ধ্রুব জিনিস, এবং আমাদের সময়ের সাথে নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বাজাজ অটোর উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে কোম্পানী রাস্তায় চলতে থাকা বেশিরভাগ অটো রিক্সা তৈরি করে, এই কোম্পানিটিই এখন ইলেক্ট্রিক গাড়ির দিকে মনোনিবেশ করছে। তিনি আরো বলেন, “ই-রিক্সা ছোট দূরত্বের যাত্রাগুলির জন্য এবং রিক্সাগুলির বিকল্প। তাই ই-রিক্সা এবং অটো রিকশাগুলির মধ্যে কোনো দ্বন্দ্বের প্রশ্নই উঠেনা।”
এমন একটি সময় যখন সর্বত্রই ইলেক্ট্রনিক যানবাহনগুলিকে পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ঠিক তখন ২০১৬ সালের একটি নির্দেশিকাকে ২০১৮ সালে কার্যকরী করাটা নিশ্চিতভাবেই সময়ের বিপক্ষে একটি পদক্ষেপ। বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা যে গুরুতর পরিবেশ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা, যার জন্য ইলেক্ট্রিক যানবাহনগুলি সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই পৌর এলাকায় ই-রিকশাগুলির রাস্তা কি চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো নাকি তারা আবার নতুন উদ্যমে খেলাটাকে নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে, না শিলচর পুরোনো দিনেই আটকে থাকবে? শুধু সময়ই বলতে পারবে… আমরা যেটা নিশ্চিতভাবে জানি সেটা হলো “সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে …”
Comments are closed.