হিমন্তের এসওপি উপেক্ষা করে নতুন নির্দেশ জারি করলেন জেলাশাসক কীর্তি, "কেন দুর্গাপূজা নিয়েই এত অসুবিধা?" জনগণের প্রশ্ন
গতকাল রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দুর্গাপূজো উৎসব পালন নিয়ে একটি এসওপি জারি করেছিলেন। বলা হয়েছিল মন্ডপ, মূর্তি ইত্যাদি নিয়ে কোনো বাধা-নিষেধ থাকছে না তবে পুজো আয়োজন করতে হলে কোভিড প্রটোকল মানতে হবে। এর আগে ২ অক্টোবর কাছাড়ের জেলাশাসকের স্বাক্ষর করা একটি নির্দেশ জারি হয়েছিল যেটা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্যবিভাগের এসওপি খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেছিলেন। তার ঘোষণার ঠিক একদিন পর কাছাড়ের জেলাশাসক আবার নতুন নিয়মাবলী জারি করলেন যেটা স্বাস্থ্য বিভাগের এসওপির পরিপন্থী। যেখানে কাছাড় জেলায় বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলের বিরাট সভা আয়োজিত হচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র দুর্গাপূজো নিয়ে জেলা প্রশাসনের এত বিধিনিষেধ কেন? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের মূলমন্ত্র হিন্দুত্ববাদ। অথচ তাদের শাসনকালে একজন জেলাশাসক বারবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কেন নির্দেশ জারি করছেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না স্বয়ং রাজ্যের মুখ্য সচিব।
কাছাড়ে যেসব নির্দেশ নতুন করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে:
১) কোন জায়গায় এবং কিভাবে দুর্গাপুজো করার অনুমতি থাকবে:
ক) যেসব পুজো কমিটি বা মন্দিরের স্থায়ী পুজো মণ্ডপ রয়েছে শুধুমাত্র তারাই পুজো করতে পারবেন। কোনওভাবেই অস্থায়ী মন্ডপ বানানো যাবেনা।
খ) পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত সকাল পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দুর্গাপূজার মণ্ডপ খোলা রাখা যাবে।
পুজোর আনুষঙ্গিক কার্যকলাপের ব্যাপারে পূজা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে
২) ভোগ নৈবেদ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম রয়েছে:
ক) কোনও মাখা প্রসাদ বা রান্না করা ভোগ বিতরণ করা যাবে না।
খ) পুজোয় কোনও ভক্ত যদি ভোগ নৈবেদ্য দিতে চান, ষষ্ঠীর ভেতর তাদের সেগুলো পুজো কমিটির হাতে তুলে দিতে হবে। অথবা ভোগ-নৈবেদ্য কেনার জন্য টাকা দেওয়া যাবে, তবে সেটাও ষষ্ঠীর আগেই দিতে হবে।
৩) পুজো কমিটিগুলোকে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েন করতে হবে যাতে সম্পূর্ণ নির্দেশাবলী এবং কোভিড প্রটোকল পালন করা হয়।
৪) পুজো কমিটিকে থার্মাল স্ক্রীনিংয়ের জন্য মেশিন রাখতে হবে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে মণ্ডপে ঢোকার আগে স্ক্রীনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
৫) প্রত্যেক ৬ ঘন্টা অন্তর অন্তর মন্ডপ সেনিটাইজ করতে হবে। এছাড়া মণ্ডপের সামনে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সেনিটাইজার রাখতে হবে।
৬) প্রত্যেক দর্শনার্থী এবং পূজা কমিটির সদস্যের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
৭) পর্যাপ্ত পরিমাণে সেনিটাইজার এবং মাস্ক থাকতে হবে।
৮) পুজো কমিটির প্রত্যেক সদস্য এবং পূজারীকে কোভিড পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
৯) পুজো মণ্ডপে পর্যাপ্ত পরিষেবা সহ সব ধরনের সুরক্ষাব্যবস্থা পালন করার দায়িত্ব পুজো কমিটির উপর থাকবে।
বিসর্জনের ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে:
১) বিসর্জনকে ঘিরে কোনও ধরনের শোভাযাত্রা হবে না।
২) প্রত্যেক কমিটি এবং বাড়ির পুজোকে আগে থেকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিসর্জনের জন্য সময় চেয়ে নিতে হবে। তারা যে সময় ধার্য করবেন তখনই মূর্তি নিয়ে বিসর্জন ঘাটে আসতে হবে।
৩) বিসর্জন ঘাটে কোনও জনসমাগম হবে না।
৪) একসঙ্গে দুটো পুজো কমিটির বেশি মূর্তি নিয়ে ঘাটে প্রবেশ করতে পারবে না।
৫) কোনওভাবে যাতে একসঙ্গে অনেক বেশি মূর্তির সমাগম না হয় তাই দশমীর পরেও বিসর্জন প্রক্রিয়া চলবে।
অতিরিক্ত নিয়মাবলী:
১) যাদের কোনও শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে তারা এবং ৬৫ বছরের উপরের ব্যক্তি অথবা শিশুরা পুজোয় যোগ দেবেন না।
২) যারা মূর্তি বানাচ্ছেন তাদের আর্থিক অবস্থা এবং সামাজিক চলাফেরা ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন পুজো কমিটির সদস্যরা।
৩) কোনওভাবেই জনসমাগম মেনে নেওয়া যাবে না।
৪) প্রত্যেক ব্যক্তি যারা পুজোমণ্ডপে আসবেন তাদের মাস্ক থাকতে হবে এবং সঙ্গে সেনিটাইজার থাকা অতি আবশ্যক। কোনও ধরনের প্রতিযোগিতা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না।
৫) পুজো মণ্ডপে মাইক ব্যবহার করা যাবে না, এমনকি পুজোকে সামনে রেখে কোন ধরনের স্পিকার বাজানোর চলবে না। শুধুমাত্র ঢাকিদের এনে অনুষ্ঠান করানো যাবে।
১০) স্থানীয় পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য যেসব নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে:
ক) পুজোর প্রত্যেক ব্যাপারে তাদের কড়া নজরদারি রাখতে হবে।
খ) সন্দেহজনক কোনও ব্যক্তি বা বস্তু চোখে পড়লে তারা সেগুলো আটকাবেন।
গ) সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব পোস্ট করা হবে সেগুলো নজরদারি করবে পুলিশ।
ঘ) ভুল তথ্য প্রচার করলে তাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঙ) কোনওভাবে যাতে কোভিড প্রটোকল লংঘন না হয় এবং কোন ধরনের নিয়ম ভঙ্গ না হয় সেদিকে নজর রাখবে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা।
৬) দর্শকদের স্বার্থে পুজো কমিটিকেগুলোকে বলা হচ্ছে, তারা যেন পুরও অনুষ্ঠান সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করেন।
৭) দ্বিচক্রযান চলবে কিন্তু শুধুমাত্র মহিলা এবং পুরুষ যেতে পারবেন। দুই পুরুষ এক সঙ্গে বাইকে চেপে পুজোর সময় বের হতে পারবেন না।
৮) জেলায় একাধিক বিসর্জন ঘাট গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।
৯) মূর্তি বানানোর ক্ষেত্রে যদি এমন কিছু জিনিস ব্যবহার করা হয় যাতে পরিবেশ দূষণ হবে, বিসর্জন এর আগে সেগুলো মূর্তি গা থেকে খুলে নেওয়া হবে।
১০) পূজোর নিয়মাবলী লংঘন করলে অথবা কোভিড প্রটোকল না মানলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটা দেখবে পুলিশ প্রশাসন।
Comments are closed.