Also read in

ঐতিহাসিক সাফল্য, বিজয় হাজারেতে কেরিয়ারের ৫৪তম ম্যাচ খেলে নিলেন কাছাড় এক্সপ্রেস প্রীতম

এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করলেন শিলচরের রনজি তারকা প্রীতম দাস। জেলা তো বটেই, গোটা উপত্যকার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৫০ এর বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড করে ফেলেছেন কাছাড় এক্সপ্রেস। পাড়ার ক্রিকেটে টেনিস বল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা প্রীতম আজ রাজ্য দলের সিনিয়র ক্রিকেটার। দলের অন্যতম স্তম্ভ। লাজুক ও শান্ত স্বভাবের ছেলেটা কঠিন পরিশ্রম ও হার না মানা মানসিকতার জোরে আজ উঠতিদের জন্য এক প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাফল্যের কোনো শর্টকাট হয় না, এটা ফের একবার প্রমাণ করেছেন প্রীতম।

শিলচরের তারাপুরে খুবই সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রীতম ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জোরে অসাধারণ সব রেকর্ড গড়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের ওয়ানডে ফরমেট বিজয় হাজারে ট্রফিতে দু-দুবার সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারী ছিলেন কাছাড় এক্সপ্রেস নামে পরিচিত প্রীতম। প্রথমবার ২০১২-১৩ মরশুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে দেশের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারী ছিলেন ডানহাতি পেসার। তারপর ২০১৯-২০ মরশুমে যৌথভাবে সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন প্রীতম। সেবার ৯ ম্যাচে মোট ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ছোট্ট একটা শহর থেকে উঠে এসে এমন কৃতিত্ব অর্জন করা সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার।

২০০৬-০৭ মরশুমে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল প্রীতমের। সেবার জানুয়ারিতে রনজি ট্রফিতে উড়িষার বিরুদ্ধে নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন কাছাড় এক্সপ্রেস। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত মোট ১৬ ম্যাচ খেলেছেন প্রীতম। উইকেট পেয়েছেন ২৯। তবে লিস্ট এ ক্যারিয়ারে দারুন রেকর্ড রয়েছে তার। এখন পর্যন্ত মোট ৫৪ ম্যাচে ৯১ উইকেট শিকার করেছেন শিলচরের ডানহাতি পেসার। ‌ গড় ২১। যা এক কথায় দুর্দান্ত। সবচেয়ে বড় কথা হল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগেও ওভার প্রতি সাড়ে ৪ এর একটু বেশি রান দিয়েছেন তিনি। বিজয় হাজারে ট্রফি তে প্রীতমের একটি হ্যাটট্রিক ও রয়েছে। মঙ্গলবার চলতি মরশুমে বিজয় হাজারে ট্রফি তে প্রথম জয় পেয়েছে অসম। রেলওয়েজ এর বিরুদ্ধে। আর এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে কাছাড় এক্সপ্রেসের।

ম্যাচে তিন উইকেট শিকার করেন প্রীতম। ‌টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও প্রীতমের রেকর্ড ভাল। ৫৭ ম্যাচে ২১ এর গড়ে ৬৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইকোনমি সাতের একটু বেশি।

চলতি মরশুমে বিজয় হাজারে ট্রফি তে গোয়ার বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচ খেলেছিলেন প্রীতম। রেলওয়ে ম্যাচের কথা ছেড়ে দিলে এ মরশুমে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। কথাটা নিজেই স্বীকার করে নিলেন। বলেন, ‘এমরশুমে আমার পারফরম্যান্স টা ভালো হয়নি। প্রথম চার ম্যাচে শুধু ৩ উইকেট নিতে পেরেছি। এখন আমি দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার। ‌ তাই একজন সিনিয়র হিসেবে আমার আরো ভালো পারফর্মেন্স করা উচিত ছিল।’ যদিও রেলওয়েজ এর বিরুদ্ধে অসমের প্রথম জয়ে তিন উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কাছাড় এক্সপ্রেস। সম্ভবত প্রীতম বলেই এই কথাগুলো বলতে পেরেছেন। প্রথম চার ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি কোনো অজুহাত দিতে যাননি। না হলে পারফরম্যান্স আশা অনুরূপ না হলেই তো এখন নানা অজুহাত দিয়ে থাকেন ক্রিকেটাররা। কথায় ভুল হচ্ছে, সেটা শুধরে আগামী ম্যাচে যাতে আরো ভালো পারফর্ম করা যায় সেদিকেই ফোকাস প্রীতমের। এমন মানসিকতার জন্যই কিন্তু আজ তিনি রাজ্য দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। এতটা বছর ধরে রাজ্য দলে টানা খেলে যাচ্ছেন। ধারাবাহিক পারফর্ম ও করছেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রীতম দাস এখন এক পরিচিত নাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানকে নিজের গতি ও স্কিল দিয়ে পরাস্ত করেছেন কাছাড় এক্সপ্রেস। তবে এখানেই তিনি থেমে যেতে নারাজ। ‌

ফিটনেস ধরে রেখে আরো ভালো পারফর্ম করতে চান তিনি। ‌ কিভাবে আরো উন্নতি করা যায়, সেদিকেই তার ফোকাস।

শিলচরের মতো ছোট্ট শহর থেকে উঠে এসে রাজ্য দলে জায়গা করাই বিরাট চ্যালেঞ্জিং। সেই জায়গায় প্রীতম শুধু নিজের আলাদা একটা জায়গা তৈরি করেননি, বরং একটা টার্গেট সেট করেছেন। তাই তার এই সফরকে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করলে ভুল করা হবে। ‌ প্রীতম প্রমাণ করেছেন, শৃংখলার সঙ্গে কঠিন পরিশ্রম এবং ফোকাস থাকলে সফল হওয়া সম্ভব। সে যতই বাধা আসুক না কেন।

Comments are closed.