অসময়ে চলে যেতে হল পাঁচগ্রাম কাগজকল কর্মীর মেধাবী মেয়ে ঋতুপর্ণাকে, আত্মীয়রা দায়ী করছেন আর্থিক সঙ্কট আর সরকারকে
মেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না, এর চাইতে যন্ত্রণাদায়ক আর কি হতে পারে কোন বাবার কাছে! এমন যন্ত্রনায় দগ্ধ হতে হয়েছে হিন্দুস্তান পেপার মিলের কর্মচারি দেবব্রত নাথকে। তার একমাত্র কন্যা ঋতুপর্ণা নাথ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসময়ে চলে গেলেন। তার আত্মীয়রা আর্থিক সংকটের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন। সারাজীবন যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, সেই ব্যক্তিকে কন্যার চিকিৎসার জন্য বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়দের কাছে হাত পাততে হয়েছে, ধার নিতে হয়েছে। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ঋতুপর্ণা নাথ বুধবার গভীর রাতে তার মামার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, ঋতুপর্ণা সবেমাত্র তার বি-টেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ঋতুপর্ণা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়। কাছাড় ও নগাও কাগজ কলের কর্মচারিরা তিন বছরের বেশি সময় ধরে তাদের বেতন পাননি। কাজেই ঋতুপর্ণার বাবাকে তার চিকিৎসার জন্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে টাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং ঋতুপর্ণাকে মুম্বাইয়ের টাটা ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। “চিকিৎসকরা চেয়েছিলেন যে তিনি সেখানে আরো কিছুদিন থেকে চিকিৎসা করান। কিন্তু আর্থিক সংকটের জন্য কেমোথেরাপির দুটো সেশন নেওয়ার পর তাকে নিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়েছিল। তিনি তার মামার বাড়িতে থেকে কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। কোনো বাবাই তার মেয়েকে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে এভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখতে চান না। কিন্তু এইচপিসি কর্মীদের যন্ত্রণা সম্পর্কে সরকারের চোখ বুজে থাকার কারণে এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রায়ই ঘটছে” উল্লেখ করলেন তার একজন আত্মীয়।
এদিকে এমন ফুটফুটে মেয়ের অসময়ে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু দেবব্রত নাথের জীবনের ট্রাজেডি শেষ হলো না।কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া তার ছেলে দেবর্ষি নাথ গত সপ্তাহে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তাকে তৎক্ষণাৎ শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা দেবর্ষি নাথের বাইপাস সার্জারি করতে হবে বলে জানান। ফলে তাকে নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সাইন্সে ভর্তি করাতে হবে।
বর্তমানে যদিও তার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবুও তার বাইপাস সার্জারি হয়তো করতে হতে পারে বলে জানানো হয়। এই দুঃসময়ে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দেবব্রত নাথের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হলো প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করা। পরিবারের পক্ষ থেকে অর্থ, স্বাস্থ্য ও পূর্তমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা’র দপ্তরে সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তাছাড়াও দেবর্ষি নাথের বন্ধু-বান্ধব এবং টাউনশিপের অন্যান্য বাসিন্দারা একটি ‘ফান্ড ক্যাম্পেইন’ শুরু করেছেন।
দেবর্ষি নাথের বন্ধু জন্মজিৎ চৌধুরী এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন” আমরা সবাই পাঁচগ্রাম হিন্দুস্তান কাগজ কলের অবস্থা জানি, যেখানে দেবর্ষির বাবা কাজ করতেন। তিনি তিন বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না এবং অর্থের অভাবে পরিবারটি সংকটাপন্ন। তাই আমি সবাইকে দেবর্ষি নাথের সার্জারির জন্য কিছু অনুদান দেওয়ার অনুরোধ করছি”। এই পোস্টটি অনেকেই শেয়ার করে একই আবেদন রেখেছেন।
ব্যাঙ্কের বিবরণ:-
এসবিআই অ্যাকাউন্ট নম্বর: – 33269359209
অ্যাকাউন্টধারীর নাম: – রত্না নাথ
আইএফএসসি : – SBIN0007648
Comments are closed.