সোমবার ১২ ঘন্টার কাছাড় বন্ধের ডাক দিলো প্রতিবাদী মঞ্চ; বন্ধের বিরোধিতায় হিন্দু ছাত্র সংঘ
কাছাড় জেলায় আগামী সোমবার ১২ ঘন্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে কাছাড় প্রতিবাদী মঞ্চ। বন্ধ শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে সংগঠনটি গতকাল জেলাশাসককে একটি চিঠি দিয়েছে।
প্রতিবাদী মঞ্চের তরফ থেকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত ২৫ তারিখ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা সুরেন্দ্র কুমার জৈন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ইঙ্গিত করে যে মন্তব্যগুলো করেছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অপমানজনক। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা আছে যে, বরাক উপত্যকায় রাজ্যের বাইরে থেকে লোক এসে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই নিন্দনীয় প্রচেষ্টার নিরুদ্ধে কোন কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। “কর্তৃপক্ষের এই নীরবতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অপমানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে এই বন্ধের ডাক,” মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত ২৫ মার্চ কাছাড় প্রতিবাদী মঞ্চ শিলচর সদর থানায় সুরেন্দ্র কুমার জৈনের বিরুদ্ধে এক এফ.আই.আর দায়ের করেছিল। এরপর সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মঞ্চের এক বরিষ্ঠ নেতা জানান যে উস্কানিমূলক মন্তব্য এবং সংখ্যালঘুদের অপমান করেছেন সুরেন্দ্র কুমার জৈন আর এই জন্যেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে মঞ্চ। সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন যে যদি জৈন কে শুক্র বা শনিবারের মধ্যে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে সোমবার কাছাড় বন্ধের ডাক দেবে প্রতিবাদী মঞ্চ।
এদিকে আবার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধের বিরোধিতা করার হুমকি দিয়েছে। “কাছাড় প্রতিবাদী মঞ্চ নামে এক সংগঠন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অখিল ভারতীয় সহ সম্পাদকের সাধারণ বক্তব্যকে এক সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার আপ্রান তবে ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শান্তির দ্বীপ বরাকে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনে সুরেন্দ্র কুমার জৈনের বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারের দাবি তুলছে এক দুষ্ট চক্র, এবং যে পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা চলছে তাতে আমরা বরাকের আগামী দিনের পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কে আছি।,” সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্টটি করে একটি হিন্দু সংস্থা।
পোস্টটিতে আরো লিখা আছে যে, “আমাদের হিন্দু ছাত্র সঙ্ঘ এমন সকল বন্ধের বিরোধিতা করে যার মূল উদ্দেশ্য কাছাড় তথা বরাকের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনিষ্ট ঘটানো। ইতিহাসে প্রমান আছে যে ভারতে বসবাসকারী সকলেরই পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিলেন, এবং তাই মাননীয় সুরেন্দ্র মহাশয় সকলকে তাদের মূল শ্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানান এবং তা পুরোটাই তাদের সদিচ্ছায় ফেরার জন্যই বলেন। হিন্দু ছাত্র সঙ্ঘ উনার বক্তব্যকে সমর্থন করে এবং কাছাড় প্রতিবাদী মঞ্চের তরফ থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানির যে অপচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সমগ্র সমাজকে একত্রিত হয়ে এই বন্ধকে বিফল করার আহ্বান জানায়।”
এই অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের ফলে বরাক উপত্যকার শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে চলেছে। জেলা প্রশাসন এখনো এই ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। সাধারণ মানুষ সবসময়ই বন্ধ সংস্কৃতির বিরোধিতা করে আসছে। বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দৈনিক মজুর, রিকশাওয়ালা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।আশা করা যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথেষ্ যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
Comments are closed.